মাদক যোগে শনিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের প্রাক্তন কর্মচারী দীপেশ সবন্ত। আজ তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে এনসিবি’র (নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো) হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এনসিবি সূত্রে খবর, এ দিন দীপেশকে আদালতে পেশ করা আগে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, পরিবারকে না জানিয়ে দীপেশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ ঘণ্টারও বেশি আটক করে রাখার কারণে এনসিবি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে দীপেশের পরিবার।
বিশেষ সূত্রে খবর, জেরায় দীপেশ জানিয়েছে, রিয়া এবং শৌভিকের নির্দেশেই নাকি কাইজানের (শৌভিকের বন্ধু) কাছে ১০ গ্রাম চরস কিনেছিলেন তিনি। সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার এবং ড্রাগ কাণ্ডে অভিযুক্ত স্যামুয়েলও জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত সুশান্তের মাদকের বন্দোবস্ত করেছেন তিনিই। স্যামুয়েল জানিয়েছেন, রিয়ার ভাই শৌভিকের এক বন্ধুর কাছ থেকেই প্রতি প্যাকেট ২৫০০ টাকা হিসেবে গাঁজা কিনতেন তিনি। স্যামুয়েল এবং দীপেশ তাঁদের দু’জনেরই আঙুল রিয়ার দিকে। রিয়ার নির্দেশেই তাঁরা এ সব করতেন বলে জানিয়েছেন স্যামুয়েল এবং দীপেশ, খবর তেমনটাই। অন্যদিকে সুশান্তের ফার্মহাউজের পার্টির কথাও উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গে। ওই দুই অভিযুক্ত জানিয়েছেন, সুশান্তের ফার্ম হাউজে যে পার্টির আয়োজন হতো তাতে বলিউডের অনেক সেলেব আসতেন। সঙ্গে মাদকও নিয়ে আসতেন তাঁরা। বিশেষ সূত্রে খবর সেই সমস্ত সেলেবদের নামও এনসিবিকে জানিয়েছেন স্যামুয়েল এবং দীপেশ।
এনসিবি’কে দেওয়া বয়ানে দীপেশ জানান, বেশ কিছু জায়গায় সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর ২০১৮ নাগাদ হৃষিকেশ পওয়ার নামে তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমেই সুশান্তের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সুশান্তের ড্রিম প্রজেক্টে সামিল হন দীপেশ। দীপেশ বলেন, “প্রথমে বাড়ি থেকে যাতায়াত করলেও পরে সুশান্তের বাড়িতেই থাকতে শুরু করি আমি। কুশাল জাভেরি, অশোক ভাই (সুশান্তের প্রাক্তন রাঁধুনি), স্যামুয়েল হওকিপ (সুশান্তের বন্ধু), সঞ্জয় মাহাতো আমরা সবাই এক সঙ্গে থাকতাম।”
On the basis of statements of Dipesh Sawant, house help of late actor #SushantSinghRajput, & digital evidence collected by NCB, it's clear that Dipesh is an active member of drug syndicate connected with high society personalities & drug suppliers: Narcotics Control Bureau (NCB). pic.twitter.com/B8jGMu0j0Z
— ANI (@ANI) September 6, 2020
দীপেশ আরও বলেন, ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকেই নাকি সুশান্তের ব্যবহারে পরিবর্তন হতে শুরু করে। ওই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে সুশান্তের দিদি প্রিয়ঙ্কা ও জামাইবাবু সিদ্ধার্থ তানওয়ার অভিনেতার বাড়িতে এসে তাঁর যাবতীয় কাজকর্মের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন। দীপেশের বয়ান অনুযায়ী, এর কিছু দিন পর এপ্রিল মাসে পঙ্কজ (সুশান্তের কর্মচারী), জিতু (অ্যাসিস্ট্যান্ট), রজত (অ্যাকাউন্ট্যান্ট), আব্বাসকে (এডিটর) চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। দীপেশ বলেন, “আমি এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, ওই মাসে আমি নিজেই চাকরি ছেড়ে দিই।”
দীপেশের কথায়, “এর পর দীর্ঘ দিন যোগাযোগ ছিল না স্যরের সঙ্গে। এই বছরের জানুয়ারি মাসে কেশব (সুশান্তের রাঁধুনি) আমায় ফোন করে স্যরের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি দেখা করি। সুশান্ত স্যরকে দেখেই মনে হচ্ছিল তিনি ভাল নেই। আমায় বলেন, অভিনয় ছেড়ে দিতে চাই। এ বছরের জানুয়ারির ১৮ তারিখ আমি আবার সুশান্ত স্যরের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি।” দীপেশ জানান, ২০১৮-তে যখন তিনি প্রথম বার সুশান্ত সিংহের অধীনে কাজে যোগ দেন, তখনই দেখেছিলেন সুশান্তের গাঁজা-চরসের অভ্যাস রয়েছে। তিনি যোগ করেন, “স্যরকে প্রথম বার গাঁজা খেতে দেখে আমি অশোক ভাইকে (রাঁধুনি) জিজ্ঞাসাও করেছিলাম, স্যর গাঁজা খান? দেখতাম স্যরের বন্ধু আব্বাস গাঁজা বানাচ্ছেন। স্যর, কুশন জাভেরি, এবং আব্বাস একসঙ্গে তা খাচ্ছে। আমি কোনওদিন স্যরের জন্য গাঁজা কিনিনি। তবে আমার কলিগ হৃষীকেশ স্যরের গাঁজার জোগান দিত।”
দীপেশের বয়ান

যদিও এনসিবি বলছে, “সমস্ত তথ্য প্রমাণে স্পষ্ট, দীপেশ ড্রাগ সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য। বড় বড় নামধারী এবং মাদক সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তাঁর।"