Sameera Reddy was more popular in South India than Bollywood dgtl
bollywood
নায়ক-পরিচালকদের সঙ্গে প্রেম, বলি রাজনীতি থেকে তাঁর হরমোন সমস্যা—সব বিষয়েই অকপট সমীরা
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
মোটাসোটা টম বয়ের মতো চেহারায় চোখে ভারী চশমা। ১৯ বছর বয়স অবধি তাঁর চেহারা থেকে বহু দূরে অবস্থান করত ‘গ্ল্যামার’ বিশেষণটি। সেখান থেকেই বলিউডের আকর্ষণীয় নায়িকা হয়ে ওঠেন সমীরা রেড্ডি।
০২২৭
অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রিতে তাঁর জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর। তাঁর বাবা তেলুগু এবং মা কন্নড়। দুই দিদি মেঘনা এবং সুষমার সঙ্গে সমীরার শৈশব অবশ্য কেটেছে মুম্বইয়ে।
০৩২৭
মেঘনা এবং সুষমা দু’জনেই বিনোদন দুনিয়ার অংশ। মেঘনা ভিডিয়ো জকি এবং সুপারমডেল। সুষমা অভিনেত্রী এবং মডেল। ৩ বোনের উপরেই তাঁদের মা নক্ষত্রের গভীর প্রভাব।
০৪২৭
বিনোদন দুনিয়ার বিপরীত মেরুতে থাকা নক্ষত্র এক জন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। তবে তিনি মেয়েদের ইচ্ছাপূরণে বাধা দেননি। মাকে আদর করে ‘নিকি’ বলে ডাকেন তিন মেয়ে। তাঁদের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী।
০৫২৭
সমীরার কথায় তিনি ছিলেন পরিবারের মধ্যে ‘আগলি ডাকলিং’ বা ‘কুৎসিত হাঁসের ছানা’। ছোটবেলায় বা তার পরে কৈশোরে গ্ল্যামার দুনিয়ায় পা রাখার কোনও ইচ্ছে ছিল না সমীরার।
০৬২৭
তবে দিদিদের দেখে ক্রমে সেই স্বপ্ন মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে থাকে। যত্ন নিতে থাকেন নিজের চেহারার। বুঝতে পেরেছিলেন, বিনোদন দুনিয়ায় থাকতে হলে বহিরঙ্গে সুন্দর হতেই হবে। কঠোর ডায়েটিং করে নিজের ৩০ কেজি ওজন কমান সমীরা।
০৭২৭
বম্বে স্কটিশ স্কুল এবং সিডেনহ্যাম কলেজ থেকে পড়াশোনার পরে মডেলিং শুরু করেন সমীরা। ১৯৯৭ সালে তিনি পঙ্কজ উধাসের একটি গজলের ভিডিয়োতে অভিনয় করেন। মিউজিক ভিডিয়োর নাম ছিল ‘অউর আহিস্তা’।
০৮২৭
এই মিউজিক ভিডিয়ো থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে সকলের নজর কেড়ে নেন সমীরা। ২০০০ সালে সমীরার প্রথম অভিনয় করার কথা ছিল তামিল ছবি ‘সিটিজেন’-এ। কিন্তু শেষ অবধি এই সুযোগ তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়।
০৯২৭
নায়িকা হিসেবে সমীরা আত্মপ্রকাশ করেন ২০০২ সালে। সলমনের ভাই সোহেল খানের ছবি ‘ম্যায়নে দিল তুঝ কো দিয়া’-য়। সোহেল এবং সমীরা, দু’জনেরই এটা ছিল প্রথম ছবি।
১০২৭
প্রথম ছবি বক্স অফিসে বিশেষ কিছু সাফল্য না পেলেও সমীরা নজরে পড়েন দর্শকদের। তাঁর পরের দু’টি ছবি ‘ডরনা মানা হ্যায়’ এবং ‘প্ল্যান’-ও অবশ্য তাঁকে বিশেষ পরিচিতি দেয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে।
১১২৭
২০০৪ সালে বহু তারকাখচিত ছবি ‘মুসাফির’-এ অভিনয় করেন সমীরা। বলা হয়, এই ছবি থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর গুরুত্ব এক লাফে অনেক বেড়ে যায়। সাহসী এবং আবেদনময়ী নায়িকা রূপে নিজেকে দর্শকদের সামনে হাজির করেন তিনি।
১২২৭
সে সময় বলিউডে বোল্ড নায়িকাদের সময় ভালই ছিল। মল্লিকা শেরাওয়াত, বিপাশা বসু, কোয়েনা মিত্র, সেলিনা জেটলীর মতো অভিনেত্রীরা দাপটের সঙ্গে কাজ করছিলেন। এ বার সেই তালিকায় যোগ হলেন সমীরাও।
১৩২৭
কিন্তু বলিউডে যে চরিত্রগুলি পাচ্ছিলেন, সেগুলিতে মন ভরছিল না সমীরার। তিনি দক্ষিণী ছবিতেও অভিনয় শুরু করেন। তবে এত তাড়াতাড়ি বলিউডে হাল ছাড়ার পাত্রীও ছিলেন না সমীরা। তিনি সলমনের দ্বারস্থ হন।
১৪২৭
সলমনের কথায় ‘নো এন্ট্রি’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেন সমীরা। এর পর ‘ট্যাক্সি নম্বর ৯২১১’ ছবিতেও অভিনয় করেন। কিন্তু বলিউডে প্রথম সারিতে জায়গা পাচ্ছিলেন না তিনি। করিনা-ক্যাটরিনা-ঐশ্বর্যাদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছিলেন প্রতিযোগিতায়। বরং, দক্ষিণী ছবিতে তিনি অনেক বেশি সাফল্য পান।
১৫২৭
বলিউড নিয়ে বার বার আক্ষেপ ঝরে পড়েছে সমীরার কণ্ঠে। তাঁর অভিযোগ, তিনি ‘মজা’ করেন না বলে এক নায়ক তাঁর সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি। একটি ছবিতে ‘লিপলক কিস’-এর দৃশ্যে অভিনয় করবেন না বলে তাঁকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেন পরিচালক। কিন্তু শ্যুটিং শুরুর আগে ওই দৃশ্য নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি বলে অভিনয়ে রাজি করানো যায়নি সমীরাকে।
১৬২৭
সমীরা যখন বলিউডে কাজ করছিলেন তখন পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা শোনা যায়। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সামশুর লালানির সঙ্গেও তাঁর প্রেম ছিল বলে গুঞ্জন। দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে এনটিআর জুনিয়রের সঙ্গেও তাঁর প্রেম ছিল বলে দাবি নায়িকার ঘনিষ্ঠ মহলে।
১৭২৭
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি যখন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া নায়িকা, তখন তাঁকে আবার ডাকে বলিউড। তিনি অভিনয় করেন প্রিয়দর্শনের ছবি ‘তেজ’-এ। কিন্তু এই ছবি আশানুরূপ ফল করেনি বক্স অফিসে। তবে অন্য দিক দিয়ে এই ছবি সমীরার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
১৮২৭
২০১২ সালে ‘তেজ’-এ অভিনয় করার সময়েই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অক্ষয় বর্দের। সিনেমার জন্য কাস্টমাইজড বাইকের যোগান দিতেন অক্ষয়। ২ বছরের প্রেমপর্বের পরে অক্ষয়কে বিয়ে করেন সমীরা।
১৯২৭
বিয়ের পরে অভিনেত্রী জীবনকে সম্পূর্ণ বিদায় জানান সমীরা। তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয় নিজের সংসার। ২০১৫ সালে জন্ম হয় তাঁর প্রথম সন্তান হন্স-এর। সে সময় সমীরার ওজন হয়ে গিয়েছিল ১০২ কেজি।
২০২৭
নিজের চেহারা এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, বাড়ি থেকে বেরনোই বন্ধ করে দেন তিনি। শুধু মনে হত, লোকে কী বলবে তাঁকে দেখে! ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
২১২৭
এই মানসিকতা সমীরা কাটিয়ে ওঠেন দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময়। লোকে তাঁকে কী বলবে, সেই চিন্তা মন থেকে সরিয়ে তিনি ঝেড়ে ফেলেন হীনমন্যতাকে। নিজের চেহারা লুকিয়ে না রেখে গর্ভাবস্থার প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করতে থাকেন।
২২২৭
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার ছবি শেয়ারও করতেন তিনি। গ্ল্যামারাস হওয়ার চেষ্টা না করে চেয়েছিলেন তিনি আসলে যেমন, সেই প্রকৃত চেহারাই সকলের সামনে তুলে ধরতে। বেবি বাম্পের ছবি দিয়ে বাহবা পাওয়ার পাশাপাশি ট্রোলডও হন তিনি।
২৩২৭
সমীরা বলেন, সেলেব হয়ে গেলেই কোনও মহিলার প্রেগন্যান্সি গ্ল্যামারাস হয়ে যায় না। প্রত্যেক মেয়েকেই সন্তানধারণের সময় নানা শারীরিক সমস্যা সহ্য করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গ্ল্যামারাস প্রেগন্যান্সি’ বলে যা ছবি দেওয়া হয়, সে সব আসলে নকল। মত ‘রেস’-এর নায়িকার।
২৪২৭
দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরে নিজের মোটা চেহারার ছবিও শেয়ার করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তাঁর চেহারায় ‘স্কার’-এর চিহ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু তিনিও দু’টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর হরমোনাল সমস্যা হতে পারে। বডি শেমিং নিয়ে যাঁরা ট্রোল করতেন, এই বার্তা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।
২৫২৭
একইসঙ্গে যে মেয়েরা সবসময় নিজেদের ফিগার নিয়েই ভাবেন, তাঁদেরও নকল দুনিয়া থেকে বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে বলেন সমীরা। অনুরাগীদের আশা, সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি তিনি ফিরে আসবেন সিনেমার পর্দাতেও।
২৬২৭
তবে আপাতত সমীরা জীবন উপভোগ করছেন তাঁর স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে। গত বছর নিজের ২ মাসের মেয়ে নাইরাকে নিয়ে আরোহণ করেছিলেন কর্নাটকের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ৬৩০০ ফুট উচ্চতার মূল্যায়নগিরিতে।
২৭২৭
ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি শেয়ার করে জানান, পাহাড়ে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট হয়েছিল তাঁর। সে জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুকন্যাকে খাওয়াতেও ভোলেননি। তাঁর মনের জোর দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন অনুরাগীরা।