Sajid Khan, the ‘Mother India’ Child Artist had become a Hollywood actor dgtl
bollywood
প্রযোজকের দত্তকপুত্র থেকে রেখার প্রেমিক, মুম্বইয়ের বস্তি থেকে হলিউডের নায়ক হন এই শিশুশিল্পী
শ্যুটিং শুরু হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যে ইউনিটের সকলের মন জয় করে নিলেন সাজিদ। বিশেষ করে নার্গিস পর্দার বাইরেও তাঁর মায়ের মতোই হয়ে উঠলেন। অভিনেত্রীকে ‘মা’ বলেই ডাকতেন সাজিদ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মুম্বইয়ের ঝুপড়িতে জন্ম। সেখান থেকে তিনি আস্ত একটি স্টুডিয়োর মালিক হয়েছিলেন। ‘মাদার ইন্ডিয়া’-র শিশুশিল্পী সাজিদ মেহবুব খানের জীবন হার মানাবে হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্যকেও।
০২১৮
সাজিদের জন্ম ১৯৫১ সালে। মুম্বইয়ের চোরবাজার এলাকার এক বস্তি ছিল তাঁর বাড়ি। তাঁর বাবা ওয়াজিদ হিন্দি ছবিতে বডি ডাবলের কাজ করতেন।
০৩১৮
১৯৫৭ সালে মেহবুব খান ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবি তৈরি করছিলেন। সে সময় তিনি ছবিতে বিরজু অর্থাৎ সুনীল দত্তের শৈশবের ভূমিকায় একজন শিশুশিল্পী খুঁজছিলেন। অনেক শিশুশিল্পীকে দেখার পরেও তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না।
০৪১৮
মেহবুব খান চাইছিলেন এমন একজনকে, যে খুব চটপটে হবে এবং গুছিয়ে, সুন্দর কথা বলবে। তাঁর পছন্দসই শিশুশিল্পীর খোঁজ মেহবুব খানের সহকারীকে দিলেন ইউনিটের ফাইটমাস্টার ডগলাস। পরিচালকের পছন্দের কথা শুনে সহকারী ওয়াজিদ খানের ছেলের কথা তাঁর মনে পড়েছিল।
০৫১৮
মেহবুবের সহকারী প্রথমে ওয়াজিদের ছেলের সঙ্গে আলাপ করলেন। খুদের চটপটে স্বভাব এবং চটজলদি উত্তরে মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। বুঝলেন, ‘বিরজু’ চরিত্রে জন্য এই শিশুকে দারুণ মানাবে। তিনি ওয়াজিদকে বললেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে মেহবুব খানের সঙ্গে দেখা করতে।
০৬১৮
আলাপ হওয়ার পরে ‘বিরজু’ চরিত্রে সাজিদকে নেওয়ার জন্য দু’বার ভাবেননি মেহবুব নিজেও। শ্যুটিং শুরু হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যে ইউনিটের সকলের মন জয় করে নিলেন সাজিদ। বিশেষ করে নার্গিস পর্দার বাইরেও তাঁর মায়ের মতোই হয়ে উঠলেন। অভিনেত্রীকে ‘মা’ বলেই ডাকতেন সাজিদ।
০৭১৮
সাজিদকে দিয়ে অভিনয় করাতেও বেশি শেখাতে হয়নি মেহবুব খানকে। এমনকি, তিনি সাজিদকে দেখিয়েই চরিত্রের ধরন বোঝাতেন সুনীল দত্তকেও।
০৮১৮
‘মাদার ইন্ডিয়া’ মুক্তির পরে রাতারাতি তারকা হয়ে যান সাজিদ। ছবি থেকে তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৭২০ টাকা। মেহবুব খান এবং তাঁর স্ত্রী সর্দার আখতারের এতটাই প্রিয় ছিলেন সাজিদ, যে পরে তাঁকে দত্তক নেন মেহবুব।
০৯১৮
প্রসঙ্গত সর্দার আখতার ছিলেন মেহবুবের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ফতিমার সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম স্ত্রীর তিনটি সন্তান থাকলেও মেহবুবের দ্বিতীয় স্ত্রী সর্দার আখতার ছিলেন নিঃসন্তান। মূলত তাঁর অনুরোধে সাজিদকে দত্তক নেন মেহবুব।
১০১৮
সাজিদকে নিয়ে ১৯৬২ সালে মেহবুব খান তৈরি করেন ‘সন অব ইন্ডিয়া’ ছবি। ছবিতে অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন কমলজিৎ, সিমি গারেওয়াল এবং কুমকুম। কিন্তু ছবিটি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়।
১১১৮
‘মাদার ইন্ডিয়া’ যতটা সাফল্য এনে দিয়েছিল মেহবুব খানকে, ‘সন অব ইন্ডিয়া’ তত ব্যর্থতার মুখে ঠেলে দিল তাঁকে। এর ২ বছর পরেই মৃত্যু হয় এই পরিচালক-প্রযোজকের। তাঁর মৃত্যুর পরে বহু অঙ্কের দেনা রয়ে গিয়েছিল। ফলে ‘মেহবুব স্টুডিয়ো’ ব্যবহার করা যায়নি দীর্ঘ দিন।
১২১৮
সর্দার আখতার এর পর সাজিদকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেন। সেখানেই তিনি অভিনয়ের কোর্স করেন। তার পর আমেরিকাতেই শুরু হয় নতুন অভিনয়-জীবন। ছয় ও সাতের দশকে আমেরিকার বেশ কিছু টিভি সিরিজে তিনি অভিনয় করেন। তাঁকে দেখা গিয়েছিল ফিলিপিন্সের টিভি সিরিজেও।
১৩১৮
১৯৬৬ সালে হলিউডের ছবিতে আত্মপ্রকাশ সাজিদের। অভিনয় করেন ‘মায়া’ ছবিতে। পরে ‘মায়া’ টেলিভিশন সিরিজ হিসেবেও দেখা যায়। সেখানেও প্রধান মুখ ছিলেন সাজিদই।
১৪১৮
সাতের দশকে ভারতে ফেরেন সাজিদ। সে সময় আইনি জটিলতা পেরিয়ে ‘মেহবুব স্টুডিয়ো’-র মালিকানা ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। নতুন করে সাজানো হয়েছিল স্টুডিয়োটিকে।
১৫১৮
শোনা যায়, জীবনের এই পর্বে রেখার সঙ্গে সাময়িক প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন সাজিদ ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে বিয়ে করেন অন্য তরুণীকে। তবে সেই দাম্পত্যও ভেঙে য়ায় ১৯৯০ সালে। সাজিদের একমাত্র ছেলের নাম সমীর।
১৬১৮
বলিউডের কিছু ছবিতেও অভিনয় করেছেন সাজিদ। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘জিন্দগী অউর তুফান’ এবং ‘দহশত’। ব্রিটিশ ছবি ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’-এও অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছে ২০০১ সালে, ‘পিলক’ ছবিতে।
১৭১৮
নিজের প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রীর দত্তক সন্তান সাজিদকেও সম্পত্তির অংশ দিয়ে গিয়েছিলেন মেহবুব খান। তার মধ্যে মেহবুব স্টুডিয়োর অংশ ছাড়াও ছিল অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। কিন্তু সেই উত্তরাধিকার নিয়ে মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। এখনও আইনি জট কাটেনি।
১৮১৮
বর্তমানে সাজিদ অলঙ্কার ব্যবসায়ী। তাঁর সংস্থা ‘আর্টিস্টিক’ কস্টিউম জুয়েলারি তৈরি করে। এক সময়ে মুম্বইয়ের বস্তির বাসিন্দা সাজিদের উত্তরণ যেন রূপকথার পাতা থেকে উঠে এসেছে।