Advertisement
E-Paper

মুম্বইয়ে শর্মিলার বাংলা ছবি দেখতে গিয়ে সইফ, সোহা, সাবা কী বললেন ঋতুপর্ণাকে?

মুম্বইয়ে ‘পুরাতন’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে হাজির নবাব পরিবার। সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ‘আম্মা’ শর্মিলা ঠাকুরের ছবি দেখে আনন্দবাজার অনলাইনকে কী বললেন সোহা আলি খান?

মুম্বইয়ে ‘পুরাতন’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে নবাব পরিবার ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

মুম্বইয়ে ‘পুরাতন’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে নবাব পরিবার ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২১
Share
Save

গন্তব্য ভারসোভা, ইয়ারি রোড। সমুদ্রের ভিতর দিয়ে রাস্তা, বড় বড় আকাশছোঁয়া বহুতল বর্তমান বিনিদ্র মুম্বইয়ের শোভা বাড়ালেও, মায়ানগরী তার শিকড় ভোলেনি। সে শিকড়ে আছে যেমন যানজট, তেমন খ্যাতনামীদের জৌলুস। মনে হতে থাকে, এই বুঝি শাহরুখ খানকে দেখা যাবে, বা এই তো অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি।

এক খ্যাতনামী অভিনেত্রী মধ্যরাতে আনন্দবাজার অনলাইনকে ফোনে বলেছিলেন, “কাল আমার মুম্বইয়ের বাড়িতে চলে এসো। বাকিটা বলছি সব।” নাম লিখলেই বোঝা যাবে যে এই অভিনেত্রীর পক্ষেই এমন ‘উঠল বাই তো মুম্বই যাই’ করে সাংবাদিককে ডেকে নেওয়া সম্ভব। ফ্ল্যাট নম্বর ৮০১-২। দেহরক্ষীর কাছে দিকনির্দেশের জন্য এগোতেই তিনি বললেন, “ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত না কি রাধিকা আপ্তে?”

অবশেষে ঋতুপর্ণার মুম্বইয়ের বাড়ি। সাজঘরে ঘড়ির কাঁটা ধরে প্রস্তুত হচ্ছেন অভিনেত্রী। পাশেই স্বামী সঞ্জয়। আমেরিকা যাওয়ায় আগে মুম্বইয়ে এসছেন বৌয়ের প্রযোজনার ছবি দেখতে। তাঁদের তড়িঘড়ি প্রস্তুতির কারণ নতুন, কিন্তু বিষয় ‘পুরাতন’। নতুন, কারণ প্রথম বার সুমন ঘোষের পরিচালনায় মুম্বইয়ে দেখানো হবে ‘পুরাতন’। আর সেই কারণেই নায়িকার অন্দরমহলে আনন্দবাজার অনলাইন। জানা গেল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে আসছেন বলিপাড়ার বিশেষ কয়েক জন। কারা তাঁরা? তখনও সব চুপচাপ।

প্রেক্ষাগৃহে জায়গা নেই, সিঁড়িতে বসেই মায়ের ছবি দেখলেন সইফ।

প্রেক্ষাগৃহে জায়গা নেই, সিঁড়িতে বসেই মায়ের ছবি দেখলেন সইফ।

ঘন সবুজ পাড়ের লাল বেনারসিতে তৈরি হচ্ছেন ঋতুপর্ণা। তাঁর সুঠাম খোলা পিঠে উষ্ণতার ইশারা। গলায় ভারী সোনার গয়না, হিরের ছটা। সাজতে সাজতেই খাওয়া। ঋতুপর্ণা কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণে সব ধরনের খাবার খান। দেখা গেল খিচুড়ি, দই আর অল্প মাংস খেলেন নায়িকা।

কোনও মতে খাওয়া সেরে জুহু পিভি আর। সন্ধ্যা হলে কী হবে, মুম্বইয়ে সূর্যও অস্ত যায় ওই যানজটের মতো ধীরে। গাড়িতে শুরু হল তাঁর গল্প। শর্মিলা ঠাকুর। যাঁর সাক্ষাৎ পেতে আজও দিন গুনতে হয়। ঋতুপর্ণার সহকারী, ‘পুরাতন’ ছবির সহকারী প্রযোজক শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় জানালেন, কলকাতার শীতে ‘পুরাতন’ এর শুটিং করতে এসে কেমন সর্ষের তেল দিয়ে সামান্য মুড়ি খেয়ে নিতেন শর্মিলা। টিটাগড় থেকে রোজ দু’ঘণ্টা করে চার ঘণ্টার পথ পেরিয়ে আশি বছরের ‘যুবতী’ ‘ভাবনা আজ ও কাল’-এর ‘পুরাতন’-এ নতুন হয়ে ফিরেছেন। ঋতুপর্ণার বাড়ি থেকে রোজ খাবার আসত। ঘড়ি ধরে সাড়ে বারোটায় খাওয়া। লাউ আর কই মাছ খুব প্রিয়। শর্মিষ্ঠা মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁর দিল্লির বাড়ি গিয়ে সে কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখেমুখে বিস্ময়! বললেন, “বৃহস্পতিবার তিনি হেঁশেলে মুরগি রান্না একেবারেই পছন্দ করেন না।”

জুহুর পথে আবার যানজট। জট কাটছিল অন্য জায়গায়। শুধু শর্মিলা নয়, আসছেন সোহা আর সাবা। আসছেন নন্দিতা দাস। মনোজ বাজপেয়ী। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মা মধু চোপড়া। আর নবাব-পুত্র? তাঁর খবর কেউ জানে না।

গন্তব্যস্থলে পৌঁছতেই দেখা গেল পরিচালক সুমন ঘোষ এবং ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে। কিছু ক্ষণ পরেই এলেন শর্মিলা। এক সময় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, “আমার জীবনবোধ চিরকালই হাওয়ার বিপরীতে ছিল।” এ দিনের সাজ দেখে সে কথাই মনে এল। সাদা শিফনের শাড়ি, গায়ে হালকা কালো ছোপ। চুলেও সেই সাদা কালোর সামঞ্জস্য। ব্যস, এটুকুতেই তিনি নজরকাড়া। তাঁর সঙ্গেই এলেন সাবা আলি খান। প্রচারের আলো থেকে নিজেকে দূরে রাখলেও আজ তিনি মায়ের বাংলা ছবি দেখতে হাজির।

গল্প করছিলেন ঋতুপর্ণা। তাঁর ‘মধু আন্টি’ তাঁকে কত ভালবাসেন। নিক আর প্রিয়ঙ্কার গল্প বলেন। ঋতুপর্ণাকে তিনি নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসেন। ‘পুরাতন’ দেখতে ঋতুপর্ণার ‘মধু আন্টি’ও হাজির। গল্প জুড়লেন শর্মিলার সঙ্গে।

মুম্বইয়ের দর্শক যেন আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। শুরু হল ‘ পুরাতন’। অন্ধকারেই দেখা গেল নন্দিতা দাসকে। ছবি চলছে… পুরনো শ্যাওলা ঘেরা বাড়ির শিকড় বেরিয়ে আসা দেওয়ালে শর্মিলা কী যেন খুঁজছেন। আর ঠিক সেই সময় দর্শকাসনে দেখা গেল ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর অভিনেতা, মনোজ বাজপেয়ীকে। ১১ বছর পরে শর্মিলা যখন ‘গুলমোহর’ ছবিতে কাজ করলেন, মনোজ জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে এই চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার অন্যতম কারণ, তাঁর ‘শর্মিলাজি’। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। তাঁর সেই প্রিয় ‘শর্মিলাজি’র ডাকে তিনিও হাজির।

দর্শকাসন ভর্তি। কেউ কেউ ঠায় দাঁড়িয়ে। কেউ মাটিতে। মুম্বই দেখছে মেঘালয়ের গভীর, অন্ধকার গুহায় ঋতুপর্ণা আর ইন্দ্রনীলের প্রেম। শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে গান। আশি বছরের শর্মিলার একাকীত্বে বন্ধু হচ্ছে তাঁর অতীত। তিনি অতীতের সঙ্গে কথা বলে চলেছেন…

ছবি এগিয়ে চলেছে। গঙ্গার ধারে জলা-জঙ্গলে থেমে যাওয়া ওই বাড়িতে এলেই যেন না বলা গোপন সম্পর্কেরা সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে… ঋতুপর্ণার মুখে কোনও রূপটান নেই। একেবারে সাদামাঠা চেহারা। পাহাড়ের খাদে ইন্দ্রনীল আর তাঁর শরীর কাছে আসছে।

বিরামহীন ছবির মাঝেই কালো পোশাকে কে যেন এলেন! জায়গা নেই, সিঁড়িতেই বসে পড়লেন তিনি। চেনা যায় না। তবুও চেনা।

কে তিনি? অন্ধকারে আলো জ্বালার অপেক্ষায়।

সইফ আলি খান! সকলকে চমকে দিয়ে ‘আম্মা’র ছবি দেখতে এসেছেন তিনি। ছবি শেষ হতেই জড়িয়ে ধরলেন পরিচালক সুমন ঘোষকে। ঋতুপর্ণাকে পাশে বসিয়ে জানতে চাইলেন ছবি কোন কোন জায়গায় শুট হয়েছে। তাঁর ঠিক কাছেই সোহা আলি খান, সঙ্গে কুণাল খেমু। ছবিতে আম্মাকে দেখে মুগ্ধ সোহা। বললেন, “এই ছবি সম্পর্কের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাকে লালন করতে শেখায়। ভালবাসা আর যত্ন করতে শেখায়। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে আম্মার ছবি দেখতে ভীষণ ভাল লাগল। ঋতুদিকে ধন্যবাদ এমন যত্ন করে, সুন্দর জায়গায় এই ছবি তৈরি করার জন্য।’’

শর্মিলা শুনছিলেন মেয়ের কথা। যোগ করলেন, “শুধু মা-মেয়ের সম্পর্ক নয়। এই ছবিতে আমার সঙ্গে আমার বাড়ির কাজে সহযোগিতা করা মেয়ের আত্মিক সম্পর্কও চমৎকার ফুটে উঠেছে।”

নিজে থেকেই মুখ খুললেন সাবা। পর্দায় মায়ের দুঃখ, রাগ, ভয়ের অভিব্যাক্তি দেখে তিনি আপ্লুত। অন্য দিকে ঋতুপর্ণার চরিত্রের দ্বন্দ্ব, ইন্দ্রনীলের অভিনয় আর সুমনের পরিচালনাকে কুর্নিশ জানালেন তিনি।

ভিড় জমতে থাকল তাঁদের ঘিরে। নন্দিতা দাস ছবির গভীরতার স্মৃতি নিয়ে বাড়ির দিকে এগোলেন। নবাব পরিবার আর ঋতুপর্ণার উপর তখনও মোবাইলের আলো। বিরক্ত নন শর্মিলা বা ঋতুপর্ণা। কিন্তু সে দিনের সেই নতুন আলো ছাপিয়ে বড় হয়ে আসছিল ‘পুরাতন’-এর শর্মিলা। যাঁর চামড়ার ভাঁজে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনকে আলিঙ্গন করার স্বপ্ন। বাস্তবে থেকেও তিনি সেই টিটাগড়ের নদী আর বিরাট বাড়ির অমোঘ শুন্যতায় আনন্দে আছেন। শান্তিতে আছেন। সময় থেমে আসা এই প্রাচীন একাকীত্ব শুধুই নিজের। শুধুই আরামের।

Sharmila Tagore Rituparna Sengupta Soha Ali Khan suman ghosh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।