দেশভাগের পর পরই সাবিত্রী চলে এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁর এক বিবাহিত দিদির পরিবার কলকাতায় এসেছিল। তাঁদের সঙ্গেই ছোট্ট সাবিত্রী পা রেখেছিলেন এই শহরে। তখন তাঁর কাছে কলকাতা মানেই অপার বিস্ময়। কলকাতাতে ছিল তাঁর মেজদির শ্বশুরবাড়ি। মেজদি তাঁর ছেলের কর্মস্থল জলপাইগুড়িতে থাকলেও তাঁর পরিবারের অন্যান্যরা থাকতেন কলকাতায়। সেখানেই ঠাঁই হল সাবিত্রীর।
সে রকম একটা সময়েই তাঁর পরিচয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অভিনেতা নিজে এসে আলাপ করেছিলেন সাবিত্রীর সঙ্গে। তখন অবশ্য সাবিত্রীর কাছে তিনি ‘ভানু’ নন, বরং সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সাবিত্রীর মুখে বাঙাল টানে কথা তাঁর ভাল লেগেছিল। সে সময় ‘নতুন ইহুদি’ নাটকের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন ভানু। তিনি সরাসরি সাবিত্রীর বাবার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। সে সময় সাবিত্রীর বাবা এসেছিলেন কলকাতায়।
ঘটনাচক্রে দেখা গেল, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মীয় হন সাবিত্রীর। তাঁর মেজদি ছিলেন সম্পর্কে ভানুর মামি। ক্রমে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ই হয়ে উঠলেন অভিনয় জগতে সাবিত্রীর অভিভাবক। তাঁর বোনের চরিত্রে ‘নতুন ইহুদি’ নাটকে কাজই ছিল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম অভিনয়। পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুরাই ছিলেন নাটকের বিষয়। নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ছিলেন অভিনেতা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি-ই সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’-র ‘হরিহর’।
ক্রমে সাবিত্রীর বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও ঢাকা থেকে চলে এলেন কলকাতায়। টালিগঞ্জের একটি এক কামরার বাড়িতে মাথা গুঁজেছিলেন পরিবারের সব সদস্য। সংসারের হাল ধরতে সে সময় অভিনয়ের পাশাপাশি নাচের অনুষ্ঠানও করতেন সাবিত্রী। নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে পাড়ি দিতেন অন্য শহরেও। বেশির ভাগ সময়েই মহড়ায় যেতেন পড়শিদের কাছ থেকে ধার করা শাড়ি পরে। সংসারে এতই অভাব, আটপৌরে পোশাকের বাইরে ভাল শাড়িও ছিল না।
কিছু দিন বিরতির পরে সাবিত্রী আবার অভিনয় শুরু করেছিলেন ‘নতুন ইহুদি’ নাটকে। তার মহড়ায় এক দিন গিয়েছিলেন উত্তমকুমার। তাঁকে দেখবেন বলে তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে পোশাক রাখার ভাঙা ট্রাঙ্কে হোঁচট খেয়ে পড়েছিলেন সাবিত্রী। তার ফলে পা কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড। জখম পা নিয়ে তিনি ভুগেছিলেন অনেক দিন। তবে সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল ধুতি পাঞ্জাবীতে সুদর্শন উত্তমকুমারকে দেখে। তখনও অবশ্য তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে অরুণকুমার। তাঁকে প্রথম-দর্শনের স্মৃতি একাধিক সাক্ষাৎকারে রোমন্থন করেছেন সাবিত্রী।
উত্তম-সুচিত্রা, উত্তম-সুপ্রিয়ার মতো উত্তম-সাবিত্রীও ছিল সুপারহিট জুটি। ‘লাখ টাকা’, ‘কল্যাণী’, ‘অনুপমা’, ‘রাইকমল’, ‘নবজন্ম’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘রাজা সাজা’, ‘দুই ভাই’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘মোমের আলো’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘মৌচাক’ এবং ‘ধন্যি মেয়ে’-এর মতো ছবিতে নস্টালজিয়ার আকর হয়ে আছে তাঁদের অভিনয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy