ছবিতে তাপসী এবং ভূমি।
উত্তরপ্রদেশের জ়োহরি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব দুই মহিলা সারা দেশের সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন বছর দশেক আগে। কেন, তা এখন আর মনে রাখেনি কেউ। তবে ডেবিউট্যান্ট পরিচালক হিসেবে তুষার হিরানন্দানির নাম নোট করে রাখতে হবে বইকি। কারণ তিনি এত বছর পরে ফের মনে করিয়ে দিলেন ‘রিভলভার দাদি’দের। আরও এক বার গর্ববোধ করার সুযোগ করে দিলেন দর্শককে।
শুধু এ দেশ নয়, সারা বিশ্বের প্রবীণতম শুটারদের মধ্যে দু’জন চন্দ্রো তোমর ও প্রকাশী তোমর। ভূমি পেডনেকর ও তাপসী পন্নু তাঁদের জীবন্ত করে তুলেছেন ছবিতে। কোন ম্যাজিকে তাঁরা বলে বলে নিশানা লাগাতেন বুলস আইয়ে, তা রহস্যই! তবে জ়োহরি রাইফেল ক্লাবের কোচ ফারুখ পাঠানের ছিল জহুরির চোখ। প্র্যাকটিস করতে আসা নাতনিদের (যাঁরা পরবর্তী কালে আন্তর্জাতিক শিরোপাজয়ী) সঙ্গে ঠাকুমাদেরও হাত পাকাতে সাহায্য করেন কোচই। সেই ভূমিকায় বিনীতকুমার সিংহের অভিনয় প্রাণবন্ত।
সংসার আর খেত-খামার সামলাতেই যাঁদের তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে, সেই চন্দ্রো ও প্রকাশীর ভিতরের আগুনের আঁচ স্পর্শ করবে দর্শককে। ঘোমটা সরিয়ে শুধু পুরুষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নয়, শুধুই মেয়েদের জিতে যাওয়ার গল্প নয়— এই কাহিনির আসল উদ্দেশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি। উদ্দেশ্য বাস্তবের ‘হিরো’দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। যে অশীতিপর বৃদ্ধারা আমির খানের টক শোয়ে এসে বলেন, ‘শরীরে মরচে ধরলেও, মনে ধরে না।’
সন্ড কী আঁখ
পরিচালনা: তুষার হিরানন্দানি
অভিনয়: ভূমি, তাপসী,
বিনীত, প্রকাশ
৬.৫/১০
ফিল্ম রাইটার হিসেবে পরিচিত তুষার তাঁর প্রথম ছবিটাই বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে তৈরি করেছেন। আর যথাসম্ভব সেই বাস্তব ঘটনাক্রমের সুতো ধরেই এগিয়েছে গল্প। এটা ঠিক, মাঝেমাঝেই আবেগের আতিশয্য, টিপিক্যাল বলিউডি স্টাইল ঢুকে পড়েছে ছবিতে। তবে এ ছবির ‘ফিল’-এর সঙ্গে তা বেমানান নয়। ‘হমারি ছোড়ি ছোড়ো সে কম হ্যায় কে’— ‘দঙ্গল’-এর সেই বিখ্যাত সংলাপ এ ছবির ক্ষেত্রেও অক্ষরে অক্ষরে প্রযোজ্য। তবে মহাবীর সিংহ ফোগতের মতো এখানে পরিবারের পুরুষদের তেমন মনোভাব নয়। বাধা আসে পুরুষদের থেকেই। কাকভোরে উঠে লুকিয়ে চলে প্র্যাকটিস, প্রতিযোগিতায় মেডেল জেতাও। ধরা পড়লে কী হবে, এই চিন্তা ভাবিয়ে তোলে দর্শককে। একদিন সেই অঘটনও ঘটে যায়। বাস্তবে তোমর পরিবারের পুরুষরা এমন খলনায়কোচিত ব্যবহার করেছিল কি না, জানা নেই। তবে ছবিতে প্রকাশ ঝা তাঁর দুরন্ত অভিনয়ে চমকে দিয়েছেন অ্যান্টাগনিস্টের চরিত্রে। মুখে-চোখে-সংলাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও কেমন করে ভাবেন, কী ভাবেন।
ছবিটা হতে পারত নাতিদীর্ঘ। চিত্রনাট্যে আরও বাঁক, চরিত্রে আরও পরত যোগ করাই যেত। ভূমি ও তাপসীর বয়স্ক লুকের মেকআপও হতে পারত আরও নিখুঁত। ঘোমটা ছাড়া তাঁদের বয়স বিভ্রান্ত করবে দর্শককে। তাঁদের জায়গায় দুই প্রবীণ অভিনেত্রীকে নেওয়া যেত কি না, সে তর্ক এখন অবান্তর। কারণ রূপকথার মতো এই কাহিনির মর্ম এ সবের ঊর্ধ্বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy