কেকে এবং ঋতচেতা।
মঙ্গলবার রাত থেকে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের মৃত্যু নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। চলছে দায় নিয়ে চাপানউতরও। কেউ আয়োজকদের দায়ী করছেন। কেউ এই প্রজন্মের পড়ুয়াদের। একটি বড় অংশ অভিযোগ জানিয়েছেন রূপঙ্কর বাগচীর বিরুদ্ধে। যাঁর মন্তব্যে কেকে-র প্রতি অশ্রদ্ধা ছিল। বহু জনের দাবি, এক গায়কের অভিশাপে নাকি মৃত্যু আর এক গায়কের। সম্ভবত এই প্রথম কেউ সমস্ত দায় মাথা পেতে নিয়ে জানালেন, ‘কেকে-র মৃত্যুর দায় আমাদের, এই শহরবাসীর।’ একই সঙ্গে অভিমান তাঁর, ‘শিল্পীর অসুস্থতা নয়, আমাদের টানে শিল্পীর পদস্খলন!’ তিনি ঋতচেতা গোস্বামী, প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী, 'দোহার' গানের দলের অন্যতম সদস্য কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার তিনি নেটমাধ্যমে কলম ধরেছেন গায়কের মৃত্যু নিয়ে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিনোদন দিয়ে চলে গেলেন কেকে। তাঁকে রাজ্য গান স্যালুটে শেষবিদায় জানাল। এটা তো কাম্য ছিল না! পরিবার এসে জীবন্ত শিল্পীকে নয়, ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন কফিনবন্দি দেহ। শিল্পীর এই পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আর এক প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী-র। তিনি প্রশ্নও তুলেছেন, ‘সরকার পরিচালিত, শহরের অন্যতম বিশিষ্ট মঞ্চে একটি বেসরকারি কলেজের ফেস্টে গান গাইতে এসেছিলেন তিনি। প্রেক্ষাগৃহের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি দর্শক গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন ভিতরে। বাইরে তখনও বহু জনতা অপেক্ষমাণ। তাঁরা ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকেন। বাইরের মাঠে পড়ে থাকা বাঁশ কেটে টুকরো করে ছুড়ে মারেন। আজকাল ছাত্র-ছাত্রীরা কেমন মানসিকতা নিয়ে গান শুনতে যায়? যখন তারা গান শুনতে যায়, তখন কী ধরনের অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যায়, যা দিয়ে এই সব করা যায়?’
ঋতচেতার মতো শহর কলকাতা মঙ্গলবার রাত থেকে এ রকমই চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত। তাঁর কেবল চোখে ভেসেছে কফিনের পাশে ফুল হাতে কেকে-র স্ত্রীর ছবি। মনে হয়েছে, একজন শিল্পী যখন অর্থের বিনিময়ে মনোরঞ্জন করেন তখন তাঁর পাশে তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার অস্তিত্ব সম্পর্কে একটুও কি ওয়াকিবহাল থাকেন বাকিরা? এক বারও কি মনে রাখা হয়, তাঁরা বাকিদেরই মতোই মানুষ? এই রক্ত জল করা টাকায় তাঁদের সংসার চলে? শিল্পীপত্নীর দাবি, ‘শিল্পীদেরও অতিরিক্ত পরিশ্রমে, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসে। তাঁদেরও আর পাঁচটা মানুষের মতো শরীর খারাপ হয়। শরীর খারাপ হলে তার চিকিৎসার দরকার হয়। না, ভাবি না সে সব। বিখ্যাত মানুষের ব্যক্তিগত জীবন তখনই আমাদের টানে, যখন তাঁর পদস্খলন হয় বা অন্য কোনও মুখরোচক গল্প কানে আসে।’
সদ্যপ্রয়াত গায়কের স্ত্রী জ্যোতির বেদনামাখা মুখ রাতের ঘুম কেড়েছে ঋতচেতার। জ্যোতির প্রতি তাই তাঁর সমবেদনা, ‘ধীরে ধীরে ভিড় কমে আসবে। শেষ হবে শোকবার্তা। শুরু হবে অন্য লড়াই। জ্যোতি, এ লড়াই কেবল তোমার লড়াই। ভাল থেকো তুমি, তোমার পরিবার। কারণ, ভাল আমাদের যে থাকতেই হয়। অনেক দূরের অপরিচিত এক শুভাকাঙ্ক্ষীর শুভেচ্ছা রইল তোমার জন্য।’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy