Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আমি আর সুশান্ত স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতাম, আমাদের জন্য ও কেন খরচ করবে না: রিয়া

রিয়া মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমে। তাঁকে ঘিরে জমতে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন।

রিয়া চক্রবর্তী।

রিয়া চক্রবর্তী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ১৯:১৫
Share: Save:

সুশান্ত সিংহ মৃত্যু মামলায় সারা দেশ যার কাছ থেকে সত্য ঘটনা জানার জন্য উৎসুক, তিনি আর কেউ নন, সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। সেই রিয়া এ বার প্রথম মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমে। তাঁকে ঘিরে জমতে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন ‘ইন্ডিয়া টুডে’ চ্যানেলের রাজদীপ সারদেশাইকে।

সুশান্তের কাছে আঘাত পেয়ে ভট্ট সাবকে ফোন করি

সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই মহেশ-রিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। মহেশ কি রিয়ার মেন্টর, নাকি বন্ধু, নাকি সম্পর্ক আরও গভীর...এ নিয়ে নেটাগরিকদের জল্পনার অন্ত নেই। এরই মধ্যে রিয়ার কাঁধে মহেশের মাথা রাখা ছবিগুলোও ভাইরাল নেটপাড়ায়। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে রিয়া-মহেশের ব্যক্তিগত চ্যাটও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সুশান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের কথা মহেশকে বলছেন রিয়া। সুশান্তের বাড়ি থেকে ৮ জুন রিয়া চলে আসায় তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থনও করেছেন মহেশ। নেটাগরিকরা প্রশ্ন রেখেছিল রিয়া-সুশান্তের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মহেশ কেন নাক গলালেন? রিয়া কী বললেন? রিয়া জানিয়েছেন, মহেশ ভট্টের সঙ্গে সুশান্ত আর তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কোনও মেসেজ বিনিময় করেননি তিনি। সুশান্তকে ছাড়ার বিষয়ে মহেশ ভট্ট তাঁকে মদত দিয়েছিলেন এমনও না। রিয়া এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সে দিন। আমি সুশান্তকে ছেড়ে চলে আসার পরেও ও আমায় ফিরে ডাকল না।ফোন অবধি করল না।আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম আমি অসুস্থ বলে সুশান্ত আর আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। এত খারাপ লেগেছিল যে ভট্ট সাবকে ফোন করি।”

গাড়ির চালক আমি তাড়াইনি

সুশান্ত ঘনিষ্ঠ অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন সুশান্তের জীবনে রিয়ার আগমনের পরেই নাকি সুশান্তের অনেক কর্মচারীকে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন রিয়া। সুশান্তের জীবন চালিত হত রিয়ারই ইশারায়। অভিযোগ ছিল রিয়া নাকি তাড়িয়ে দিয়েছেন গাড়ির চালককেও। সুশান্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি যে কিনা রিয়ারও ভাল বন্ধু বলে দাবি করতেন সিদ্ধার্থ তিনি নিজেই রিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন। রিয়া কী বলছেন? রিয়া এই সাক্ষাৎকারেই বলেন, “আমি ভাবতেই পারিনি সিদ্ধার্থ পিঠানি আমার সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে এমন কথা বলতে পারে! আমাকে নিয়ে অবশ্য এখন যে যা পারছে লিখছে।তবে আমি কোনও ড্রাইভার বদলাইনি।আমার কাছে কোনও ড্রাইভার আসেও নি। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর সুশান্তের দিদি ড্রাইভার বদল করে।”

মহেশ ভট্ট কি শুধুই রিয়ার মেন্টর? রিয়া কী বলছেন?

শৌভিককে বলতাম আমার সতিন

সুশান্ত কাণ্ডে রিয়া, সিদ্ধার্থ, সন্দীপ ছাড়াও আরও যে একটি নাম উঠে এসছে তা হল শৌভিক চক্রবর্তী। সম্পর্কে রিয়া চক্রবর্তীর ভাই। সুশান্তের বাবার করা এফআইআরেও নাম রয়েছে শৌভিকের। সুশান্তের বাবার অভিযোগ রিয়ার মতো শৌভিকও নাকি 'হাতিয়ে নিয়েছেন' সুশান্তের টাকা। রিয়া মানতে চাননি। উল্টে বলেছেন, “সুশান্ত এত ভালবাসত শৌভিককে যে আমরা বলতাম আমার ভাই আমার সতিন।" রিয়ার কথায়," সুশান্তের জেদেই আমাদের ইতালি ট্রিপে পরে শৌভিক এসে যোগ দেয়। আর এই ভালবাসার জন্যই সুশান্ত আমাদের দু’জনকে ওর ড্রিম প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত করে।” রিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই কোম্পানির জন্য তিনি আর তাঁর ভাই সমান টাকা সুশান্তকে দেন।তিনি বলেন, এই সময়ে তিনি, শৌভিক-সুশান্ত মিলে রিলেটিক্স নামের সংস্থাটি শুরু করেন। সকলের এতে ৩৩.৩৩ শতাংশ টাকা দিতে হয়েছিল৷ “ভাইয়ের চাকরি ছিল না বলেই ওর টাকা আমি ওর ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করি। সুশান্তের কোম্পানি সংক্রান্ত শুধু এই লেনদেন হয়েছে আমাদের। বাকি সব মিথ্যে।”

ইউরোপ ট্রিপ এবং…

গতবছর চুপি চুপি ইওরোপ ট্রিপে গিয়েছিলেন সুশান্ত-রিয়া। পাপারাৎজির চোখে ধুলো দিয়ে। আজ সেই ট্রিপ নিয়েই জট পাকাচ্ছে রহস্য। বলা হচ্ছে ওখানেই সুশান্তের টাকা নয়ছয় করেন রিয়া। আর রিয়া? তিনি কী বলছেন? রিয়া বলেন, “সুশান্ত হাই লিভিং-এ বিশ্বাস করত। আমার প্যারিসে যাওয়ার কথা, ফ্যাশন শুটের জন্য। ওরা আমায় যাতায়াত আর থাকার খরচা সব দিয়েছিল। সুশান্ত সে সব বাতিল করে বিজনেস ক্লাসে টিকিট কাটল। ইউরোপ ট্রিপ প্ল্যান করল। বড় হোটেলের খরচ ও-ই দিল। আমিও নিয়েছি। কেউ কেন বলবে আমি ওর টাকায় চলেছি?বরং বলব, এটা ওর সিদ্ধান্ত!আমরা তো স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকতাম।সেই ভাবেই সুশান্ত ভালবাসা থেকেই খরচ করত।”
রিয়া তাঁর স্মৃতি থেকে বলেন, শুধু তাঁর সঙ্গেই নয়, বেশ অনেক দিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে তাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়ে ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন সুশান্ত।প্রাইভেট জেট নিয়ে গিয়েছিলেন। রিয়া এ বার ঘুরে প্রশ্ন করেন, “কার কী বলার আছে বলুন তো সুশান্ত নিজের পয়সায় কী ভাবে জীবন চালাবে?ওর তাইল্যান্ড ট্রিপ নিয়েও কি বলা হবে, তা হলে ওর বন্ধুরা জোর করে ওর টাকা নিয়েছিল? তা হলে আমার ক্ষেত্রে কেন বলা হচ্ছে?”

প্যারিসে ওঁরা

ইউরোপ ট্রিপে গিয়ে জানতে পারি সুশান্ত মানসিক ভাবে অসুস্থ

ইউরোপ ট্রিপের কথার উল্লেখ করে রিয়া বলেন, ‘‘আমরা যখন ইউরোপে বেড়াতে যাচ্ছিলাম তখন সুশান্ত বলেছিল যে ও ফ্লাইটে বসে থাকতে ভয় পায়। তার জন্যও একটি ওষুধ নিয়েছিল৷ যার নাম ‘মোডাফিনিল’৷ ফ্লাইটে চড়ার আগে সুশান্ত সেই ওষুধ খায়৷ ওষুধটা সুশান্তের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকত।’’
ইউরোপ ট্যুরে কী হয়েছিল?রিয়া বলেন, “আমরা প্যারিসে পৌঁছনোর পর সুশান্ত তিন দিন ঘর থেকে বাইরে আসেনি। এতে আমার কিছুটা মন খারাপ হয়৷ কারণ আমি এই ট্রিপ নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলাম। আমি চেয়েছিলাম ঘুরে বেড়াতে৷ আর ওখানে সুশান্ত নিশ্চিন্তে রাস্তায় ঘুরতে পারত, কোনও সমস্যাও হত না৷”
তবে সুইৎজারল্যান্ডে পৌঁছে খুশি ছিলেন সুশান্ত, জানান রিয়া। ইটালিতে পৌঁছে তিনি দেখতে পান, তাঁর ঘরের কাঠামো অদ্ভুত ধরনের! রিয়া বলেন, “তাতে আমি ভয় পেলেও সুশান্ত বলে সব ঠিক আছে।” তারপর সুশান্ত অবশ্য বলেন যে ঘরে কোনও সমস্যা রয়েছে এবং তখন থেকেই সুশান্তের অবস্থা বদলে যায়।ঘর ছেড়ে যেতে চান না তিনি।রিয়া জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে এটি ঘটে। তারপর থেকে শুরু হয় হতাশা৷ যোগাযোগ করা হয়মনোবিজ্ঞানী হরেশ শেঠির সঙ্গে৷ তিনিই বলেন ওষুধের কথা।

সুশান্তের মৃত্যুতে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি-র দিকেও উঠছে আঙুল

সন্দীপ সিংহকে চিনি না

সন্দীপ সিংহ। যিনি নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বন্ধু হিসেবে। তবে হঠাৎ করেই যেন পাল্টে গিয়েছে সব হিসেবনিকেশ। একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ জানিয়েছেন সুশান্ত কাণ্ডে 'মাস্টারমাইন্ড' এই সন্দীপই। সুশান্তের কল রেকরদ ঘেঁটে দেখা গিয়েছে গত এক বছর সুশান্তের সঙ্গে ফোনে কথাই হয়নি তাঁর। অথচ সুশান্ত মারা যেতেই ঘটনাস্থলে হাজির সন্দীপ। রিয়া কি চেনেন সন্দীপকে? রিয়া সাফ জানিয়ে দেন, না, তিনি চেনেন না। বলেন, “আমি এই নামে কাউকে চিনি না। সুশান্তের এত বন্ধু অথচ তাঁকে বাড়িতে দেখলাম না, ফোন করতেও না। অদ্ভুত!”

‘সরি বাবু’ ছাড়া আর কী বলব!

সুশান্তের মৃত্যুর খবররিয়াএক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন।“প্রথমে চুপ করেছিলাম। কান্না পাচ্ছিল। কিছুই করে উঠতে পারিনি। পরে যখন ওর শেষকৃত্যে যেতে চাইলাম তখন শুনলাম, ওর পরিবার আমার নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।” সাক্ষাৎকারে বলেছেন রিয়া। কিন্তু একবারও সুশান্তকে দেখতে পাবেন না? “এই প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তাই মর্গে যাই।ওকে শেষ বার প্রণাম করতে চেয়েছিলাম। একজন ভারতীয় জানে এই প্রণামের কী মানে!” তাঁর ‘সরি বাবু’ বলা নিয়ে যে এত বিতর্ক সে ব্যাপারে রিয়া বললেন, “কী বা বলতে পারতাম? এত গুণী মানুষের এই পরিণতি?তার জন্য ‘সরি’। তার মৃত্যু তো প্রহসন হয়ে গিয়েছে।সেই জন্য ‘সরি’।ওর মৃত্যু নিয়ে গল্প লেখা হচ্ছে। সেই জন্য সরি”, কান্নায়ভেঙে পড়েন রিয়া।

অন্য বিষয়গুলি:

Sushant Singh Rajput Rhea Chakraborty Mahesh Bhatt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy