ছবির একটি দৃশ্য।
টেরি কাটা চুল, কপালে লাল তিলক। মঞ্চে উঠে হাত জোড় করে একেবারে উত্তরপ্রদেশীয় টানে হসমুখ সুদিয়া মুখ খোলে, ‘থোড়া মুসকুরাইয়ে না? আরে, কা হুয়া? কোই মর গয়ে ক্যায়া?’ হাসির রোল ওঠে দর্শকমণ্ডলী থেকে। সস্তা কমেডি শুনতে এসে এ রকম চটুল ভাষায় মৃত্যুর কথা শুনলে লোকে হেসে উড়িয়ে দেবে ঠিকই। তা-ই হয়েছে। কিন্তু ডার্ক কমেডি দেখতে বসে শিরদাঁড়া টানটান হয়ে যাওয়ার কথা। গায়ে কাঁটা দেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ় ‘হসমুখ’-এর ট্রেলার দেখে স্পষ্ট যে, একজন কমেডিয়ানের খোলসের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর খুনি। তবে সিরিজ় দেখতে বসে জোকসে হাসি বা খুনে আতঙ্ক, কোনওটাই হয় না। তাই ‘হসমুখ’ও দীর্ঘ পরিসরে রেখে গেল ব্যর্থতা।
সাহারানপুরের হসমুখ (বীর দাস) কমেডিয়ান হতে চায়। হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে এলাকার প্রতিষ্ঠিত কমেডিয়ান গুলাটির (মনোজ পাহওয়া) কাছে। কিন্তু গুলাটি কথা না রাখায় সহ্যের বাঁধ ভাঙে হসমুখের। একটি শোয়ে মঞ্চে ওঠার আগেই খুন করে বসে নিজের ‘গুরু’কে। সুটকোট পরে নিজেই মঞ্চে হাজির হয় হসমুখ। খুনের রক্ত মুছে হাত জোড় করে শুরু হয় লোক হাসানোর পালা। ১০টি এপিসোডের শুরু থেকেই পরতে পরতে দেখানো হয়েছে হসমুখ কী ভাবে বঞ্চিত। সমাজ ও পরিবার কী ভাবে তাকে এক কোণে ঠেলে দিয়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পর্যন্ত মুখ বুজে সহ্য করে মধ্যবিত্তরা। শেষ পর্যন্ত না পারলে ঘুরে দাঁড়ায়। সেই ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েই হসমুখের হাতে উঠে এসেছে দা, বেল্ট। ঘটে গিয়েছে একের পর এক খুন। তবে হসমুখ একা নয়। গ্রাম্য চুটকুলেবাজ থেকে প্রতি এপিসোডে লাখ লাখ টাকা কামানো শহুরে কমেডিয়ান হসমুখের এই সফরে প্রতি পদে তার সঙ্গে রয়েছে জিমি দ্য মেকার (রণবীর শোরে)। ভেঙে পড়ার সময়ে ভরসা জোগায় জিমি। আবার বন্ধুর কাজের শেষ ‘সাফাই’ও করে।
সিরিজ়ের প্রথম সিজ়ন ১০টি এপিসোডে তৈরি। ডার্ক কমেডি, না ক্রাইম ড্রামা, না কি জ়িরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প... কোনটা বলতে চেয়েছেন পরিচালক নিখিল গনজ়ালভেস, তা স্পষ্ট নয়। নিখিলের সঙ্গে সিরিজ়ের গল্প লিখেছেন বীর নিজে। রয়েছেন নিখিল আডবাণী, নীরজ পাণ্ডে প্রমুখ। একই ধাঁচে খুন বা সিরিয়াল কিলিংকে পর্দায় ধরতে গেলে তার বুনট হতে হয় টানটান। তা-ও যদি না হয়, তবে সেটি স্বল্প পরিসরে রাখলে তবু মান বাঁচে। কিন্তু অসম্ভব এলোমেলো, আলগা বুননের সবচেয়ে বড় অন্তরায় তার দীর্ঘতা। একটা সময়ের পরে দেখতে দেখতে হাঁপ ধরাও অস্বাভাবিক নয়। চিয়ারলিডার সাশার সঙ্গে হসমুখের প্রেমালাপ বা না বলা অনুভূতির প্রকাশ এতটাই দীর্ঘ যে, সে সব দৃশ্য বা সংলাপেও মন ভাল হয় না।
হসমুখ (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: নিখিল গনজ়ালভেস
অভিনয়: বীর, রণবীর,
মনোজ, অমৃতা
৫.৫/১০
খুনের জন্য হসমুখ বাছে এমন সব চরিত্র, যারা আদতে খারাপ। এই কনসেপ্ট খানিক ‘ডেক্সটার’কে মনে করায়। তবে মুম্বইয়ে এসে হসমুখ-জিমি বুঝতে পারে যে, সেখানে খুন করার লোকের অভাব নেই। কারণ কালো মানুষ সেখানে ভর্তি। সত্যি বলতে, সাদা মানুষ আদৌ হয় কি? হসমুখ লোকের জীবনের কালো রং মুছতে গিয়ে কি নিজে সাদা হতে পেরেছে? বীর ও রণবীর অভিনয়ে টেক্কা দিয়েছেন একে অপরকে। ভাল লাগে মনোজ পাহওয়া, অমৃতা বাগচী, শান্তনু ঘটকের অভিনয়ও। তবে অভিনয়ের জোরে যে সিরিজ় বাঁচানো যায় না, ‘হসমুখ’ তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।
সিরিজ়ের প্রায় প্রতিটি এপিসোডেই কমেডি। কিন্তু জোকসেরও তো নানা ভাগ হয়। গ্রাম্য চটুল রসিকতায় আটকে এই সিরিজ়ের জোকস। বেশির ভাগটাই স্বামী-স্ত্রীর নিম্নমানের মজা। গ্রাম্য চটুল জোকস আগেও দেখেছে বলিউড। রাজু শ্রীবাস্তবদের মতো কমেডিয়ানদের মজার বিষয় শুধুই দাম্পত্য রসিকতায় আটকে ছিল না। ফলে প্রতি পদে অভাব বোধ হয় বীর দাসের নিজস্ব কমেডিয়ানার। তার ছোঁয়াচ পাওয়া যায় একমাত্র শেষ এপিসোডে। এটা স্পষ্ট, মধ্যবিত্তের টানাপড়েন, রাজনীতির ময়দানে স্কেপগোট হওয়া কিংবা সমাজের প্রহসনের গ্যাঁড়াকলে আটকে থাকা মানুষের অবস্থা নিয়ে যে তীক্ষ্ণ তির ছোঁড়া যায় স্যাটায়ারের মোড়কে, সেটা বীর বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ক্লাইম্যাক্সের জন্যই। তবে তার জন্য কি আর বাকি ন’টা এপিসোড দেখার ক্লান্তি মেটে? মধ্যবিত্ত হসমুখ তার লড়াইয়ে জিতবে কি না, সেটা খানিক আন্দাজ করা যাচ্ছিলই। কিন্তু এই সিরিজ় দেখে সাধারণ মানুষের কী হাল হবে, তা বোধহয় নির্মাতারা আঁচও করতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy