Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Web Series Review

কেমন হল কাজলের প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য ট্রায়াল’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

প্রতীক্ষিত এই ওয়ের সিরিজ়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাজল। তাঁর স্বামীর চরিত্রে রয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত।

Image of Kajol in The Trial

‘দ্য ট্রায়াল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে কাজল। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ১৮:০৯
Share: Save:

সময়ের সঙ্গে হিন্দি ওয়েব সিরিজ় নির্মাণের দিক থেকে এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে যে, সেখানে পান থেকে চুন খসলেই বিপত্তির সম্ভাবনা থাকে। ব্যস্ততার ফাঁকে দর্শক সময় খরচ করবেন কনটেন্ট দেখতে। দর্শককে ধরে রাখতে প্রতি পর্বে চাই নাটকীয়তা। তাই অভিনেতারা কোনও সিরিজ়ে সম্মতি জানানোর আগে রীতিমতো সচেতন থাকছেন। আর তিনি যদি বড় পর্দার পরিচিত মুখ হন, তা হলে তো তাঁকে ঘিরে আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কাজলের ওটিটি-অভিষেক নিয়েও শুরু থেকেই অনুরাগীদের মধ্যে কৌতূহল ছিল। ‘দ্য ট্রায়াল: প্যার কানুন ধোঁকা’ ওয়েব সিরিজ়ে তিনি কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেন?

আমেরিকান ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এর হিন্দি রিমেক ‘দ্য ট্রায়াল’। চর্চিত সিরিজ়ের হিন্দি সংস্করণ। কিন্তু সত্যি বলতে, শুরু থেকেই এই সিরিজ় এক অযৌক্তিক পথে হাঁটতে শুরু করে। যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত স্বামী রাজীব (যিশু সেনগুপ্ত) বিচারাধীন বন্দি। রাজীব পেশায় বিচারক। এমতাবস্থায় পরিবারের হাল ধরতে ১০ বছর পর আবার নতুন করে ল ফার্মে জুনিয়র আইনজীবীর পদে চাকরি নেয় নয়নিকা সেনগুপ্ত (কাজল)। এ দিকে স্বামীর কুকীর্তির জন্যই ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে নয়নিকাকে বার বার অপমানিত হতে হচ্ছে। দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে নতুন করে জীবনের লড়াই শুরু করে নয়নিকা। পাশাপাশি স্বামীকে ফিরিয়ে আনতেও অন্য লড়াইয়ে শামিল হয় সে।

Image of Jisshu Sengupta in The Trial

‘দ্য ট্রায়াল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

আটটি পর্বের সিরিজ়। বহু চরিত্রের সমাহার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই সিরিজ় দেখতে বসে রীতিমতো বিরক্তির উদ্রেক ঘটে। চরিত্রগুলিকে এতটাই হালকা চালে দেখানো হয়েছে যে, তাঁরা দর্শকের সহানুভূতি আদায় করতে ব্যর্থ। বহু চরিত্র পরিণতি না পেয়ে কেমন যেন হারা-মরু-নদী হয়ে গিয়েছে। চিত্রনাট্যকাররা (হুসেন দলাল, আব্বাস দলাল এবং সিদ্ধার্থ কুমার) এ দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। মূল সিরিজ়ে সামাজিক দুর্নীতির একাধিক মামলা লড়তে লড়তে মুখ্য চরিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইকে তুলে ধরা হয়েছিল। এখানেও নয়নিকার যাত্রাপথে বাস্তবের চেনা বিভিন্ন সামাজিক দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ এসেছে। অবশ্য মূল সিরিজ়ের ধারেকাছে যেতে পারেননি হিন্দি সিরিজের নির্মাতারা। নয়নিকার অফিসের দুই কর্ণধার বিশাল (অলয় খান) এবং মালিনি (শিবা চড্ডা)। কলেজ জীবনে আবার বিশালের সঙ্গে সম্পর্কে ছিল নয়নিকা। অফিসে প্রতিদ্বন্দ্বী আইনজীবী ধীরজ (গৌরব পাণ্ডে) নয়নিকাকে সরিয়ে নিজের চাকরি পাকা করতে চায়। রয়েছে অফিসে আইনজীবীদের সহকারি সানা (কুবরা শেঠ)। তার সঙ্গে আবার ‘কবীর সিংহ’ ধাঁচের এক পুলিশ অফিসারের (আমির আলি) প্রেম। এ দিকে ইলিয়াস (অসীম হত্তাঙ্গদি) নামের এক রাজনৈতিক পরামর্শদাতার সঙ্গে সেনগুপ্ত পরিবারের সুসম্পর্ক। সে পর্দায় এলেই সব সমস্যার সমাধান! আর রয়েছে এক প্রথম সারির নিউজ় চ্যানেলের সাংবাদিক দক্ষ রাঠোর (অতুল কুমার) যে নয়নিকা এবং সমীরকে তার নিশানা বানায়।

সিরিজ় জুড়ে একাধিক ‘মিসিং লিঙ্ক’ রয়েছে, তাই বেশ কিছু প্রশ্নও উঠে আসে। দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে প্রত্যাবর্তনের পর নয়নিকা শুরুতেই যে ভাবে আদালতে তার উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে সওয়াল-জবাব করে, তা প্রশংসনীয়। তবে প্রতিটি মামলায় যে ভাবে সে জিততে থাকে তা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসার চালাতে বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করে নয়নিকা। জানা যায়, সন্তানদের স্কুলের বেতন বাকি। এমতাবস্থায় অপেক্ষাকৃত ছোট বাড়িতে পরিবারকে নিয়ে গিয়ে ওঠে সে। কিন্তু সেই বাড়ির অন্দরসজ্জায় ‘অভাব’-এর নামগন্ধ নেই। আজকের তরণ প্রজন্মের প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই সিরিজ়েও পরিচালক সেই ছাপ রেখেছেন। তবে বাবার যৌন সঙ্গমের ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তা আসল না কি নকল জানার চেষ্টা— কিশোর বয়সিদের পক্ষে এই প্রয়াস একটু আরোপিত মনে হয়েছে। সব থেকে বড় কথা, রাজীব দোষী না কি নির্দোষ, কাহিনিতে সেটাই স্পষ্ট নয়।

Image of sheeba chaddha and Alyy Khan in The Trial

‘দ্য ট্রায়াল’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে শিবা চড্ডা এবং আলয় খান। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনেতাদের রূপসজ্জা এবং পোশাক পরিকল্পনার দিকেও বিন্দুমাত্র নজর দেওয়া হয়নি। নয়নিকার পোশাক বা যত্ন নিয়ে করা মেকআপের মধ্যে দিয়ে অন্তত তার দৈনন্দিন জীবনের লড়াই ফুটে ওঠেনি। জেলে থাকাকালীন যিশু কী ভাবে এতটা পরিপাটি থাকেন, তা বিস্মিত করে! পরিচালক সুপর্ণ বর্মা এর আগে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ এবং ‘রানা নাইডু’র মতো সফল ওয়েব সিরিজের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে একটা প্রশ্ন রাখাই যেতে পারে— বাস্তবের আইন প্রক্রিয়া এবং আদালতের পরিবেশ তো এতটা সহজ নয়! তা হলে এই লঘু দৃষ্টিকোণ কেন?

সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ ছবিতে কাজলের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু প্রথম সিরিজ়ে তাঁর অভিনয় আলাদা কোনও ছাপ রাখতে ব্যর্থ। স্বাভাবিক ভাবেই কাজলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে সিরিজ়। ছোট ছোট কিছু দৃশ্যে ভাল মুহূর্ত তৈরিও করেছেন কাজল। তবে একাকিত্ব বা কান্নার দৃশ্যে তাঁর অভিনয় বড্ড আরোপিত মনে হয়। যিশুর অভিনয় সাবলীল। এর আগেও তাঁকে এই ভাবে পেয়েছেন দর্শক। আরও জায়গা পেলে তিনি হয়তো সিরিজ়কে আর একটু উপভোগ্য করে তুলতে পারতেন। কিন্তু বাকিদের অভিনয় মনে দাগ কাটার মতো নয়। কিছুটা হলেও শিবা চড্ডা আরও একবার তাঁর জাত চিনিয়েছেন। আবার দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণেই গল্প যত এগিয়েছে, অলয় খানের বলিষ্ঠ চরিত্রটির ধার কমে গিয়েছে। কিরণ কুমার বা বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাদের সেই ভাবে ব্যবহারই করা হয়নি। সংলাপ, আবহসঙ্গীত থেকে শুরু করে সম্পাদনা— কোনও কিছুই এই সিরিজ়কে উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি।

সম্প্রতি ‘স্কুপ’ বা ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’-এর মতো কোর্টরুম ড্রামা দর্শক দেখেছেন। তার পর ‘দ্য ট্রায়াল’ দেখতে বসে বেশ হতাশই হতে হয়। এ হেন একটি সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়ন আসার ইঙ্গিত দিয়েই শেষ হয়েছে এই পর্ব। পর্বান্তরে নির্মাতারা সাবধানী না হলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে সিরিজ়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy