চশমা, গোঁফ, বেড়ালের থাবা জাতীয় সাদামাঠা জীবনের ছোট-ছোট টুকরো থেকে মোটিফ বানিয়ে যেমন ট্রেন্ড তৈরি করেন মাসাবা , এ সিরিজ়ও তেমনই। মা-মেয়ের মান-অভিমানের মতো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরিচালক তৈরি করে ফেলেছেন আদ্যন্ত ফ্যাশনদুরস্ত একটি সিরিজ়। আধুনিক কাটের পোশাকে এক-একটা মোটিফের মতো সমুজ্জ্বল এ সিরিজ়ের কলাকুশলীরা। গোটা সিরিজ়ে মেয়েরাই ফ্রন্ট সিটে, কিন্তু ফেমিনিজ়মের ঢাক পেটানোর দরকার পড়েনি তার জন্য। নিখাদ এন্টারটেনমেন্টে ভরপুর ছ’টি এপিসোডের এই নেটফ্লিক্স সিরিজ়টি এক ক্লিকেই দেখে ফেলা যায়।
সিরিজ়ের গল্প বলতে নীনা গুপ্ত ও কন্যা মাসাবা গুপ্তর জীবনের অধ্যায়। নিজের লুক ও চুলের কুঞ্চনে অজস্র মানুষের ভ্রু-কুঞ্চন সহ্য করে বড় হয়ে ওঠা মাসাবা এই গল্পের মুখ। ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করতে ইনভেস্টর জোগাড় করা, মাসাবার ভেঙে যাওয়া বিয়ে... এ সবই হাসিঠাট্টার ছলে তুলে ধরা হয়েছে। এক দিকে যদি থাকে মেয়ের লড়াই, অন্য দিকে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী নীনার ছবি পাওয়ার আর্তি। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবি থেকে বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব হাতছাড়া হতে শুরু করে তাঁর। এ দিকে ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন ছুঁতে চান নীনা। স্বপ্ন পূরণ হয় ‘বধাই হো...’ ছবির হাত ধরে। রিল আর রিয়্যাল মিলে গিয়েছে এই সিরিজ়ে। আর সেখানেই এই সিরিজ়ের ম্যাজিক টাচ।
টাইটেল কার্ড থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোশাক, হেয়ারস্টাইল, ইন্টিরিয়র... সবেতেই চোখে পড়বে লেটেস্ট ট্রেন্ড। আধুনিক ছাঁচে সাজানো চিরন্তন টিকে থাকার লড়াই। আলোঝলমলে র্যাম্পের পিছনের অন্ধকার পথও উঠে এসেছে। নামী ফ্যাশন ডিজ়াইনারও যে আইডিয়া হাতড়ে বেড়ান আর ইনভেস্টরকে জবাবদিহির ভয়ে পালিয়ে বেড়ান, সিরিজ় না দেখলে অজানা থেকে যেত অনেকের কাছে। একটা ছবি পাওয়ার জন্য অভিনেতাদের লড়াই, প্রত্যাখ্যানের অপমান হাসিমুখে সয়ে যাওয়ার মতো ‘আগলি ট্রুথ’-ও সামনে এসেছে। মাসাবার জন্মের পর থেকে নীনার স্ট্রাগলও রয়েছে তাঁদের সংলাপে। কিন্তু জীবনের এই না-পাওয়া, লড়াইয়ের অধ্যায়গুলো সিরিজ়ে থাকলেও তার ভার বইতে হয় না দর্শককে। তা নিয়ে আবেগে থরথর মেলোড্রামা নেই। বরং এই নেতিবাচক দিক যে জীবনের অংশমাত্র, সেটাই উঠে আসে গল্পের হাত ধরে।
মাসাবা মাসাবা
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: সোনম নায়ার
অভিনয়: নীনা, মাসাবা
৬/১০
আর রয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বেআব্রু ঝলক। সেখানে ‘মিকি’র মতো চরিত্ররা আলতো চুমুর দেখনদারি চালিয়ে যায়। ‘স্বচ্ছ ভারত’ ক্যাম্পেনের প্রস্তুতি নিতে এক নায়িকা (কিয়ারা আডবাণী) ট্রেন্ডি পোশাকের খোঁজে মাসাবার স্টোরে এসে জানতে চায়, ঝাঁট দেওয়ার সময়ে পোশাকের স্লিট কোন দিকে থাকলে ভাল দেখাবে। অন্য এক দৃশ্যে রয়েছেন স্বয়ং ফারহা খান। তিনি নীনার সামনে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেও রাতারাতি সেই ছবিতে রিপ্লেসড হয়ে যান নীনা। রিয়্যাল কখন রিল হয়ে গিয়েছে, রিল কখন রিয়্যাল... তার সূক্ষ্ম ব্যবধানে হারিয়ে যান দর্শক। এই রিল-রিয়্যালের খেলাই সিরিজ়ে প্রাণসঞ্চার করেছে।
তবে এ সিরিজ়ের শো স্টপার মাসাবা। তাঁর বডি ল্যাঙ্গোয়েজ থেকে শুরু করে অভিব্যক্তিতে বোঝা যায় না এটা মাসাবার প্রথম অভিনয়। নীনাকেও দারুণ লেগেছে গোটা সিরিজ়ে। প্রশংসা করতে হয় মাসাবা ও সত্যদীপ মিশ্রর কেমিস্ট্রিরও, রিয়্যাল লাইফের প্রেমিক সিরিজ়ে অবশ্য প্রাক্তন। পার্শ্বচরিত্রে নীল ভূপালম, রিতাশা রাঠোর, নয়ন শুক্ল যোগ্য সঙ্গত করেছেন। আমারিয়াও চলনে-বলনে হয়ে উঠেছে ছোট্ট মাসাবা।
সিরিজ়ের অতিরিক্ত প্রাপ্তি হল মাসাবার নতুন কালেকশন আর লিপস্টিক। নিত্যনতুন কাট ও কায়দার সুন্দর-সুন্দর পোশাকে নজর কেড়েছেন মা-মেয়ে দু’জনেই। তবে ফ্যাশনেবল এই সিরিজ়ে কিছু ফ পা-ও যে রয়ে গেল! মাসাবার ফ্লপ র্যাম্পের কনসেপ্ট একটু বাড়াবাড়িই মনে হল। নায়িকাদের ট্যানট্রামস দর্শাতে গিয়ে পরিচালক সুতো গোটাতে পারেননি। ও রকম ঘেঁটে যাওয়া কাজল চোখে কোনও নায়িকা র্যাম্পে ওঠেন? আর একটা শোয়ের জন্য কিছুক্ষণ ফ্লোট করলে র্যাম্পেই কি এ ভাবে মডেলরা বমি করতে শুরু করেন? এই ফ্যাশন ফ পা সিরিজ়ের গলদ হিসেবেই চোখে লাগল।
তবুও নিজেদের জীবনকে সরল ভাবে তুলে ধরার জন্য লেটার মার্কস প্রাপ্য মাসাবা ও নীনার। শেষ দৃশ্যে মাসাবা ফিরে যান নিজের ফ্ল্যাটে, একাকিত্বেই খুঁজে পান স্বাধীন জীবনের আনন্দ, আত্মবিশ্বাস। তাঁর নিজের তৈরি ছাদ আছে মাথার উপরে, সঙ্গীর অবলম্বন বা অভিভাবকের আশ্রয় নয়। সিরিজ়শেষে তাই মাসাবা স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়ে যান, স্বনির্ভর ও স্বাধীন হওয়ার... যাকে বলে নিজের রাজ্যের রানি হওয়া।
নবনীতা দত্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy