Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Web Series

Decoupled: রুচিহীন দাম্পত্য কমেডি

বিখ্যাত সাংবাদিক-লেখক মনু জোসেফের বই অবলম্বনে তৈরি নেটফ্লিক্স ছবি ‘সিরিয়াস মেন’ সব মহলে প্রশংসিত।

‘ডিকাপলড’ সিরিজের একটি দৃশ্য।

‘ডিকাপলড’ সিরিজের একটি দৃশ্য।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১১
Share: Save:

কিছু শব্দ ব্যক্তিসাপেক্ষ, পরিস্থিতিভিত্তিক। যেমন, ‘রুচি’। কয়েক প্রজন্মের কাছে প্রিয় এক অভিনেতার একটি চরিত্র দেখে যদি মনে হয়, ‘সে কেন এমন করছে?’, তবে বুঝতে হবে সমস্যা অন্যত্র। হার্দিক মেহতা নির্দেশিত নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘ডিকাপলড’-এ আর মাধবন অভিনীত আর্য আইয়ারের মতো চরিত্র সমাজের উঁচুতলায় থাকতে পারে। কিন্তু যখন এমন চরিত্রকে নিয়ে সিরিজ় লিখে ফেলা হয়, তখন লেখকের ‘রুচি’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

বিখ্যাত সাংবাদিক-লেখক মনু জোসেফের বই অবলম্বনে তৈরি নেটফ্লিক্স ছবি ‘সিরিয়াস মেন’ সব মহলে প্রশংসিত। ‘ডিকাপলড’ সিরিজ়ের ক্রিয়েটর এবং লেখক মনু। এই সিরিজ়ে দর্শককে হাসাতে চেয়েছেন তিনি। চরিত্র লেখার সময়ে নিজেও হয়তো হেসেছেন। কিন্তু হাসির বিষয়গুলি এতই ‘সিরিয়াস’ যে, অতিমারিপীড়িত মোবাইলকেন্দ্রিক দর্শকের তাতে হাসি না পাওয়ারই কথা। আর কেউ যদি এতে আমোদ পান, তবে ঘুরেফিরে প্রশ্ন সেই ‘রুচি’তে গিয়ে ঠেকে।

আর্য (মাধবন) এবং শ্রুতি শর্মা আইয়ার (সুরভিন চাওলা) বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের বারো বছরের মেয়ে রোহিণীর (অরিস্তা মেহতা) কাছে কী ভাবে তা বলা হবে, তা নিয়ে টানাপড়েন। তবে আট পর্বের সিরিজ়ের একেবারে শেষ পর্বে এই বিষয়টি প্রাধান্য পায়। প্রথম সাতটি পর্বে মিঞা-বিবির কাজিয়া, পরকীয়া, প্রাক্তন সম্পর্কের আনাগোনা আর ‘পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট’ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ!

ডিকাপলড (ওয়েব সিরিজ়)

পরিচালনা: হার্দিক মেহতা

অভিনয়: মাধবন, সুরভিন, আকাশ, অপরা, মীর

৫/১০

আর্য এবং শ্রুতির বিয়ে আপাত ভাবে ‘টু স্টেটস’-এর হলেও, গল্পে তার প্রতিফলন নেই। শুধু একটা সংলাপে বলা হয়, আর্যর বাবা-মা শ্রুতির অভিভাবকদের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল। সিরিজ়ে লেখক চেতন ভগতের পরেই দ্বিতীয় বেস্টসেলার আর্য। নামচরিত্রে অভিনয় করেছেন চেতন। আর্যর সঙ্গে তার চুলোচুলি (শুধু মহিলারাই করেন না) ২০২১-এর উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত দর্শকের কাছে কি হাসির উদ্রেক ঘটায়?

বডিশেমিং, অ্যান্টি-ন্যাশনাল নিয়ে প্যারোডি, অস্কারজয়ী ‘প্যারাসাইট’ ছবির তুলোধোনা করা হয়েছে সিরিজ়ে। সাংবাদিক মনুর লেখার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা জানেন এই বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন তিনি। তাঁর ছায়ায় আর্যকে তৈরি করলেও, চরিত্রের নানা আচরণের কার্য-কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না সিরিজ়ে।

আর্যর ফয়েল চরিত্র (বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) বাঙালি অর্থনীতিবিদ বসু (মীর)। ড্রাইভার গণেশের চরিত্রটিও মন্দ নয়। আবার এই সিরিজ়ের অন্তর্নিহিত প্লট হিসেবে নতুন নেটফ্লিক্স সিরিজ়ের অবতারণা করা হয়েছে। ধারণা হিসেবে অনেক কিছুই রাখা হয়েছে সিরিজ়ে। কিন্তু ডিকাপলডের মতো ধারণাগুলো ডিসেন্ট্রালাইজ়ড!

সিরিজ়ের শেষ পর্বে ডিকাপলড পার্টি! যেমন ‘লাভ আজ কাল’ (২০০৯) ছবিতে ব্রেকআপ পার্টি দেখিয়েছিলেন ইমতিয়াজ় আলি। উচ্চবিত্ত সমাজে হাস্যরস তৈরি করার জন্য টয়লেট কমেডি এবং যৌনতার বাইরে বেরোতে পারেন না লেখকেরা। যৌনতার সঙ্গে অভ্যস্ত ওটিটি দর্শকের কাছে মাধবনের সিরিজ় সে অর্থে কোনও আবিষ্কার নয়। বরং তিন মধ্যবয়স্ক পুরুষ চরিত্রের (আর্য এবং তার দুই বন্ধু) হালকা চালের কথোপকথনে লেখকের দৈন্য প্রকাশ পায়।

মাধবন এবং সুরভিনের রসায়ন সিরিজ়ে ধরা পড়েছে। আর্য এবং শ্রুতি হিসেবে তাঁরা সাবলীল। প্রথম ওয়েব সিরিজ়ে ভাল লেগেছে মীরের অভিনয়। শ্রুতির মা-বাবার চরিত্রে অপরা মেহতা এবং আকাশ খুরানা মানানসই। গণেশের চরিত্রে মুকেশ ভট্ট জবরদস্ত।

কিছু সিরিজ় শুধু নিখাদ ভাল লাগা হিসেবেই দেখা যায়। যেমন আধুনিক, উচ্চবিত্ত, আর্থিক ভাবে স্বাধীন মহিলাদের কাছে ‘ফোর মোর শটস প্লিজ়’। নীতি-নৈতিকতার জালে এই ধরনের সিরিজ়কে দেখার কথা নয়, উচিতও নয়। কিন্তু ‘ডিকাপলড’-এর সমস্যা হল, হাস্যরস নিখাদ হাসিতেই আটকে থাকে না এখানে। গল্প হিসেবেও সিরিজ়ের ওঠাপড়া নেই।

সিরিজ়ে দক্ষিণ কোরীয় ইনভেস্টর চরিত্রটি আর্যকে একবার জিজ্ঞেস করে, ‘‘আরিয়া স্টার্কে‌র আগেও কি তোমার নাম আর্য (হিন্দি উচ্চারণ আরিয়া) ছিল?’’ খারাপ হিউমরের মধ্যেও ভাল হিউমর চিনে নিতে পারেন দর্শক!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy