Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Breathe-Into the Shadows

সফল সিরিজ়ের অক্সিজেন কেড়ে নিল নতুন সিজ়ন

সিরিজ়ে আবহসঙ্গীত ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত মনে হতে পারে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

মার্কেটে যে ধরনের ট্রেন্ড চলছে, তার উপরে নজর সকলেরই থাকে। কিন্তু ট্রেন্ডি থাকার জন্য স্বাতন্ত্র্য বিকিয়ে দেওয়া বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়। অ্যামাজ়ন প্রাইমের হিট সিরিজ় ‘ব্রিদ’ (২০১৮)-এর নতুন সিজ়ন ‘ব্রিদ-ইনটু দ্য শ্যাডোজ়’-এর দশা, গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার মতো। সাধারণত সিরিজ়ের নতুন সিজ়নে পরিচালক বদলে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দু’টি সিজ়নের পরিচালনার ভার ছিল একই ব্যক্তির হাতে। ‘ব্রিদ’-এর মতো সফল সিরিজ়ের পরে, কী ভাবে ময়ঙ্ক শর্মা এমন আজগুবি গল্পের অবতারণা করলেন এই সিজ়নে, তা ভাবার আগে লম্বা-চওড়া দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই হবে।

আগের সিজ়নের সঙ্গে এ বারের যোগসূত্র বলতে ইনস্পেক্টর কবীর সওয়ন্ত (অমিত সাধ) ও সাব-ইনস্পেক্টর প্রকাশ কাম্বলে (হৃষীকেশ জোশী)। বাকি সব চরিত্র নতুন। তবে ‘ব্রিদ’ সিরিজ়টির ভাবনাগত যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তা নতুন সিজ়নেও বিরাজমান— সন্তানের জন্য এক অসহায় বাবা কোন সীমা অবধি লক্ষ্মণরেখা লঙ্ঘন করতে পারে। কিন্তু এ বারে নেই একটি যুক্তিবুদ্ধিগ্রাহ্য গল্প, যা থ্রিলারের মূল উপাদান। থ্রিলারে ‘থ্রিল’-এর চেয়ে বেশি জায়গা পেয়েছে আবেগ, যা সিরিজ়টিকে দীর্ঘায়িত করেছে। ৪৫ মিনিটের ১২টি পর্ব দেখতে গিয়ে দমবন্ধ আপনারও লাগতে পারে। তবে উত্তেজনায় নয়, বিরক্তির কারণে।

সিরিজ়ের মূল চরিত্র সাইকায়াট্রিস্ট অবিনাশ সবরওয়াল (অভিষেক বচ্চন), স্ত্রী আভা (নিত্যা মেনন) ও তাদের কন্যা সিয়া (ইভানা কৌর)। এক জন্মদিনের পার্টি থেকে অপহরণ করা হয় সিয়াকে। সাত-আট মাস পুলিশি স্তরে জোরকদমে তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ মেলে না তার। হঠাৎ একদিন সিয়ার একটি ভিডিয়ো আসে অবিনাশের বাড়িতে। তাতে থাকে অপহরণকারীর নির্দেশ, এক ব্যক্তিকে খুন করার।

ব্রিদ-ইনটু দ্য শ্যাডোজ়
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: ময়ঙ্ক শর্মা
অভিনয়: অভিষেক, নিত্যা, অমিত
৪/১০

পরিস্থিতির চাপে এক নিরপরাধ ব্যক্তির হাত রাঙা হয়ে ওঠে খুনের রক্তে। থ্রিলারে ‘পেথস’ তৈরি করার জন্য এই ট্রিটমেন্ট খুব কার্যকর। কিন্তু এই সিরিজ়ের গোড়ার গলদ এতই প্রকট যে, কাজে আসে না কোনও উপাদান। আগের সিজ়নের তিন জন লেখকের বদলে এ বারের সিজ়নে গল্প লিখেছেন চার জন— ময়ঙ্ক শর্মা, বিক্রম তুলি, ভাবনী আইয়ার ও আরশাদ সায়েদ। তাতে সিরিজ়ের মান একটুও বাড়েনি। থ্রিলারের মূল দ্বন্দ্ব তৈরি হয় নায়ক আর খলনায়কের মধ্যে। গল্পের অযৌক্তিকতার জন্য সেই দ্বন্দ্বও তৈরি হতে পারেনি।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে থ্রিলারের রমরমা বাড়ছে। সেই ভিড়ে নজর কাড়া দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠছে। ২০১৮-য় ‘ব্রিদ’-এর জনপ্রিয় হওয়ার কারণ ছিল, তার নতুনত্ব। কিন্তু তার পরে দু’বছর যে পেরিয়ে গিয়েছে, তা হয়তো ভুলে গিয়েছেন পরিচালক। গত দু’বছরে অনেক ধরনের দেশজ থ্রিলার দেখে ফেলেছেন ওটিটির দর্শক। তাই জোর করে পুরাণের অনুষঙ্গ গল্পে গুঁজে দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না। উপরন্তু অপরাধীর ‘ডেন’, মুখোশ মাসকয়েক আগে আসা ‘অসুর’ সিরিজ়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

অভিষেকের চরিত্রটি নিঃসন্দেহে কঠিন। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন জুনিয়র বচ্চন। তবে এই চরিত্রে অভিনয় তাঁর সহজাত নয়, সেটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। দক্ষিণী অভিনেত্রী নিত্যা অসাধারণ। তবে সিরিজ়ে নজর কাড়েন অমিত। প্রথম সিজ়নের চেয়েও বেশি ভাল লাগবে তাঁকে। পাশাপাশি এই সিজ়নে অনুরাগীদের উপরি পাওনা, অমিতের পেশিবহুল শরীরের দর্শন। সিয়ার চরিত্রে ইভানা দারুণ। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্লাবিতা বড়ঠাকুর (মেঘনা), শ্রদ্ধা কউল (জ়েবা) ভাল। সাইয়ামি খেরের (শার্লি) চরিত্রটির খোলতাই সে ভাবে হয়নি।

সিরিজ়ে আবহসঙ্গীত ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত মনে হতে পারে। কারণ দৃশ্যে যে সাসপেন্স ছিল না, তা তৈরি করার চেষ্টা ছিল সঙ্গীতের মাধ্যমে। অভিষেকের ডিজিটাল ডেবিউ এবং আগের সিজ়নটির জন্য এ বারের সিজ়ন নিয়ে উন্মাদনা ছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনার শ্বাসরোধ করেছেন খোদ পরিচালক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy