Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Killer Soup Review

কঙ্কণা-মনোজের অভিনয় কতটা ‘কিলার’? ডার্ক কমেডি কি জমল?

শেক্সপিয়র থেকে মণি রত্নম— এই সিরিজ়ের চিত্রনাট্যে ভর করেছেন অনেকেই। তবুও স্বকীয়তা বজায় রেখেছে সিরিজ়টি। যে ভাষায় চরিত্ররা কথা বলে সারা কাহিনি জুড়ে, তা-ও লক্ষণীয়।

killer soup

‘কিলার সুপ’-এর একটি দৃশ্যে মনোজ বাজপেয়ী ও কঙ্কণা সেনশর্মা। ছবি: সংগৃহীত।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

ডার্ক কমেডির সপাট চলন আর সেই সঙ্গে কিছু তুখোড় অভিনয়ের রাজযোটক। অভিষেক চৌবের নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘কিলার সুপ’-এর লম্বা লম্বা পর্বগুলি এই কারণেই এক নিঃশ্বাসে দেখে ফেলা যায়। দ্বৈত চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী নিজেকে ভেঙে চুরমার করে সম্পূর্ণ আলাদা দুটো মানুষ হয়ে উঠেছেন। আর ওটিটি স্পেস না এলে হয়তো কঙ্কণা সেনশর্মার মতো বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে এত বার, এত ভাবে আবিষ্কার করা থেকে বঞ্চিত হতেন দর্শক। অভিষেক চৌবের সুপ ‘কিলার’ হয়ে উঠেছে এই দু’জনের কারণেই।

সিরিজ় শুরুর নয়নাভিরাম নিসর্গ থেকে ধাপে ধাপে ক্যামেরা এসে বন্দি হয় দক্ষিণ ভারতের এক শহরে। ঢুকে পড়ে প্রভাকর (মনোজ) আর স্বাতীর (কঙ্কণা) সংসারে। স্বাতী নিজের রেস্তরাঁ খুলতে চায়। অন্য দিকে, প্রভাকর ওরফে প্রভু তার ব্যবসার পার্টনার দাদা অরবিন্দকে (সায়াজি শিন্দে) টেক্কা দিতে চায় নানা বিজ়নেস প্ল্যান দিয়ে। প্রভাকর মাসাজ নিতে যায় উমেশের (মনোজের দ্বিতীয় চরিত্র) কাছে, যার সঙ্গে গোপনে মেলামেশা করে স্বাতী। উমেশ আর প্রভুর চেহারার আশ্চর্য মিল! এই চরিত্রক’টির জীবন আচমকাই উলট-পালট হয়ে যায় একটি ঘটনায়। বরং বলা ভাল, দুর্ঘটনায়। চেহারার আশ্চর্য সাদৃশ্য হাতিয়ার করে খেলা ঘোরানোর খেলায় নেমে পড়ে চরিত্ররা।

শেক্সপিয়র থেকে মণি রত্নম— এই সিরিজ়ের চিত্রনাট্যে ভর করেছেন অনেকেই। তবুও স্বকীয়তা বজায় রেখেছে সিরিজ়টি। যে ভাষায় চরিত্ররা কথা বলে সারা কাহিনি জুড়ে, তা-ও লক্ষণীয়। আটটি দীর্ঘ পর্বের কোথাও এতটুকু আলগা দেননি পরিচালক। তাই ঘটনার আকস্মিকতা, উত্তেজনা আগ্রহ জিইয়ে রাখে। ‘ডার্কনেস’ এখানে নিজেও একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে, যা আবিষ্ট করে রাখে দর্শককে। ‘ইশকিয়া’, ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর নির্মাতার প্রথম ওয়েব সিরিজ় থেকে এমনটাই হয়তো প্রত্যাশিত ছিল।

নাসার এই কাহিনিতে তদন্তকারী সিনিয়র পুলিশ অফিসার। তাঁর জুনিয়র থুপালির চরিত্রে অন্বু থাসন। মুখ্য চরিত্রদের পাশে এই দু’জনও অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে পড়ে ঘটনাক্রমে। বৈপরীত্যে মোড়া এই দু’টি পুলিশের চরিত্রও যত্ন নিয়ে তৈরি করেছেন নির্মাতারা। প্রভুর অ্যাকাউন্ট্যান্ট কীর্তিমা (কানি কুশ্রুতি), অরবিন্দের মেয়ে অপেক্ষা ওরফে আপ্পুর (অনুলা নাভলেকর) মতো চরিত্রগুলি কাহিনির অলঙ্কার। সায়াজি শিন্দে পোড়খাওয়া অভিনেতা। অরবিন্দের চাঁচাছোলা চেহারাটি তুলে ধরেছেন তিনি দক্ষতার সঙ্গে। মনোজ-কঙ্কণার বলিষ্ঠ পারফরম্যান্সের পাশে এই শিল্পীরাও চোখ টানেন সিরিজ়ে।

কঙ্কণা আর মনোজ এই প্রথম বার জুটি বাঁধলেন। উমেশ-স্বাতী কিংবা প্রভু-স্বাতী— যে জুটিতেই তাঁরা পর্দায় আসুন, বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছেন। ‘বেবি’ সম্বোধনের পরক্ষণেই স্ত্রীকে নিজের ‘জায়গা’ চিনিয়ে দেওয়া স্বামী প্রভুর চরিত্রে মনোজ অসামান্য। উমেশের অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব ও দৃষ্টিও সমান দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। অন্য দিকে, অনুচ্চারিত অভিনয়ে কঙ্কণা নিজের সেরাটা দিয়েছেন আরও একবার। নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করা, নেপথ্য থেকে লাটাই ধরে থাকা স্বাতীর চরিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন অভিনেত্রী। যে পায়া সুপ রান্নায় বসিয়েছিল স্বাতী প্রথম পর্বে, নিভু নিভু আঁচে তা জমে উঠতে থাকে শেষ পর্ব অবধি। হাস্যরসও এই গল্পে চোরাস্রোত হয়ে বয়েছে, সূক্ষ্ম ভাবে।

দক্ষিণের গহিন সবুজ, পাহাড়, শহরতলির গলিপথ, বাড়ির অন্দরসজ্জা... সবই ধরা পড়েছে অনুজ রাকেশ ধওয়নের ক্যামেরায়। আবহ ও সঙ্গীতায়োজন ভাসাবে নস্টালজিয়ায়। অসংখ্য বাঁক আর ধাক্কা দেওয়া গল্পের গতিকে বেঁধে রেখেছে সম্পাদনা, যদিও পর্বগুলি আরও একটু সংক্ষিপ্ত করা যেত। সব মিলিয়ে নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘কিলার সুপ’-এর স্বাদ জিভে লেগে থাকার মতোই।

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Netflix Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy