এর পর কী হবে? যখন ওটিস, মেভ, এমি, এরিকেরা স্কুলের গণ্ডি পেরোবে... যখন তারা অষ্টাদশ হবে... তখনও কি তারা প্রেম-বন্ধুত্ব-যৌনতা নিয়ে চেনা প্রশ্নের অচেনা জবাব খুঁজে যাবে? ব্রিটিশ টিনএজ ড্রামা ‘সেক্স এডুকেশন’ ওটিটি বিনোদনের দুনিয়ায় আলাদা জায়গা দাবি করে। টিনএজদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে এতটা মজবুত উপস্থাপনা আগে হয়নি। এই নেটফ্লিক্স সিরিজ়ের নামের মধ্যে নিষিদ্ধ গন্ধ থাকলেও, আসলে এটি যৌনতার মোড়কে প্রেম-বন্ধুত্ব-আত্মোপলব্ধির গল্প বলে।
তিন বছরে তিনটে সিজ়ন। তৃতীয়তে নতুন কী দিতে পারল এই সিরিজ়? গত দুই সিজ়নের মলাট চরিত্রেরা এ বার খানিক পিছনের সারিতে। বরং ততটা গুরুত্ব না পাওয়া চরিত্রদের জীবনখাতায় উঁকি দিয়েছেন শোয়ের ক্রিয়েটর লরি নান। গত সিজ়নের শেষে বলিউডি কায়দায় ওটিস-মেভের সম্পর্কে ছন্দপতন হয়। এ বার তাদের প্রেমকাহিনি চতুষ্কোণে পরিণত হয়েছে আইজ়্যাক ও রুবির কারণে। একটু নাকউঁচু, মেকি রুবির চরিত্রটা খুব সুন্দর করে বোনা হয়েছে। অ্যাডামের চরিত্রের প্রতি তৈরি হওয়া বিরক্তি ধীরে ধীরে ভাল লাগায় বদলে যায় তৃতীয় সিজ়নের শেষে। নিজেকে নন-বাইনারি ঘোষণা করা ক্যাল, এলিয়ান ইরোটিকা লেখা লিলি কিংবা সমপ্রেম খুঁজে চলা এরিক... প্রতিটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে ওই বয়সের আশা-আশঙ্কা সবটা তুলে ধরা সহজ ছিল না।
এই সিজ়ন শুধু কমবয়সিদের মনের দিকটা তুলে ধরেনি। মধ্যবয়সি বা প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছনোর পরেও যে নতুন করে নিজেকে চেনা যায়, ভুলগুলো শুধরে নিয়ে পথচলা যায় তা দেখিয়েছে। সেক্স স্কুলের তকমা লেগে যাওয়ায় মোর্ডেলের প্রধানশিক্ষকের পদ ছাড়তে হয় মাইকেল গ্রফকে। স্ত্রী, সন্তান, পেশা সব ছেড়ে যাওয়া লোকটা ক্রমশ নিজের ভিতরের অন্য ‘আমি’কে আবিষ্কার করে। সেক্স থেরাপিস্ট জিন মিলবার্ন বাকিদের জীবন বদলে দেয়, অথচ সে-ই নিজের জীবন নিয়ে দিশাহারা। পরবর্তী অধ্যায়ে জিনের জীবনে ঘটতে চলা একটা বড় চমকের ইঙ্গিত রয়েছে।
সেক্স এডুকেশন (সিজ়ন থ্রি)
পরিচালনা: লরি নান
অভিনয়: এসা বাটারফিল্ড, এমা ম্যাকি, শুটি গাটওয়া, জিলিয়ান অ্যান্ডারসন
৭/১০
এই সিজ়নের সংযোজন, মোর্ডেলের নতুন প্রধান শিক্ষিকা হোপ হেডনের চরিত্র, যার চোখধাঁধানো এন্ট্রিতে পড়ুয়ারা চমকে যায়। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, চমকের পিছনের অভিসন্ধি। স্কুলের নতুন ইমেজ তৈরির চেষ্টায় হোপ বদলে দিতে চায় পড়ুয়াদের স্বাভাবিক ছন্দ। প্রেম-যৌনতা নিয়ে মেতে থাকা স্টুডেন্টরা প্রয়োজনে প্রতিবাদীও হতে পারে। তাদের চোখে হোপ ভিলেন, যে নিজেও অবিরাম স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই হোপের উপরে রাগ হতে গিয়েও হয় না।
সিরিজ় জুড়ে অজস্র চরিত্র। আলাদা আলাদা বিন্যাস। কিন্তু কোথাও হোঁচট খায় না কাহিনি। দ্বিতীয় সিজ়নে অনেকটা একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছিল গল্প, এ বার সেটা সামাল দেওয়া গিয়েছে। একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রেম-যৌনতা নিয়ে মেতে থাকলেও, আদতে তারা কেরিয়ারিস্ট। কিন্তু ফান্ডের অভাবে বন্ধ হতে বসা স্কুল নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে হেলদোল নেই কেন? হোপের সঙ্গে রুবির হাতাহাতি, বেড়াতে গিয়ে মেভ-ওটিসের বাস মিসের মতো বলিউডি ক্লিশে ট্র্যাক— চাইলেই বাদ রাখা যেত।
অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। ওটিস (এসা বাটারফিল্ড), মেভ (এমা ম্যাকি), এরিক (শুটি গাটওয়া), রুবি (মিমি কিন), অ্যাডাম (কনর সুইন্ডেলস) কিংবা জিনকে (জিলিয়ান অ্যান্ডারসন) চরিত্র থেকে আলাদা করাটাই যেন দুষ্কর। আগামী সিজ়নে মেভের চরিত্রটি থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সেটা হলে দর্শকের মনখারাপ হবেই।
টিনএজের ধর্মই হল ঘেঁটে ফেলা জীবন নিয়ে দিশেহারা হওয়া। তবে সব কিছু ছাপিয়ে নন-বাইনারি বা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের ইতিবাচক আঙ্গিকে দেখানো এই সিরিজ়ের অন্যতম সার্থকতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy