সামনে স্বাধীনতা দিবস মানেই দর্শকের জন্য হাজির একগুচ্ছ দেশাত্মবোধক ছবি। অতিমারিও টলাতে পারেনি এই নিয়ম। কার্গিল যুদ্ধের নায়ক ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার বায়োপিক যদিও বড় পর্দার কথা ভেবেই তৈরি হয়েছিল। ১৩৫ মিনিটের ছবির ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় পর্দায় ‘ইন্টারমিশন’ শব্দটার অভাবই তা মনে করিয়ে দেয়। মিশন সম্পূর্ণ করেছিলেন দলের ‘শেরশাহ’, ওরফে ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা। মরণোত্তর পরমবীরচক্র পদকপ্রাপ্ত সেনার বায়োপিকের প্রতি কতটা সুবিচার করেছেন পরিচালক বিষ্ণু বর্ধন, সিনেমা হিসেবে কতটা উতরেছে ‘শেরশাহ’, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাঁর এই প্রয়াস। দেশভক্তির আস্ফালন কিংবা শত্রুর প্রতি বিষোদ্গার নয়, চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসা এক অকুতোভয় সেনার জীবন তথ্যনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরার জন্য তাঁর বাহবা প্রাপ্য।
ভারত-পাক দ্বৈরথ নিয়ে অসংখ্য ছবি হয়েছে। দু’দেশের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব কখনওই ফিকে হতে দেয়নি রাজনীতি। যুদ্ধ-স্মৃতির সরণিতে কার্গিল পিছিয়ে পড়েছে কিছুটা, জায়গা করে নিয়েছে বালাকোট, উরি, পুলওয়ামার টাটকা স্মৃতি। পপুলার কালচারও হেঁটেছে সেই পথে। বিক্রম বত্রা আগেও এসেছেন পর্দায়, ‘এলওসি কার্গিল’ ছবিতে, অভিষেক বচ্চনের অভিনয়ে। তবে ‘শেরশাহ’ আলাদা করে তুলে এনেছে ভারতীয় সেনার ইতিহাসে অমর এই সেনানীর জীবন। তবে ছবিতে যুদ্ধ আর প্রেমের অংশের পাশাপাশি বিক্রম বত্রার ট্রেনিং, আইএমএ-র দিনগুলির কথা আরও বিশদে দেখতে পেলে ভাল লাগত। যমজ ভাই বিশাল বত্রার সঙ্গে বেড়ে ওঠার ফ্ল্যাশব্যাকও রাখা যেত। বাস্তবের নায়ক বলেই হয়তো বিক্রমের জীবনের খুঁটিনাটি তথ্য, সাক্ষাৎকারের ক্লিপিং বিশদে উপলব্ধ— যার সবটাই ব্যবহার করা হয়েছে ছবিতে। আর এই কারণেই কোথাও গিয়ে খুব প্রত্যাশিত হয়ে গিয়েছে ছবিটি। দর্শকের জন্য আবেগ অপেক্ষা করে থাকলেও, থাকে না কোনও সারপ্রাইজ়। যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যায়নেও নতুনত্ব নেই।
তবে বাস্তবের ক্যাপ্টেন বত্রার ফিল্মি সত্তাটি খুব সুন্দর মানিয়ে গিয়েছে চিত্রনাট্যে। তাঁর সাফল্য সঙ্কেত ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’ বিজ্ঞাপনী সংলাপের গণ্ডি ছাড়িয়ে কার্গিল যুদ্ধের মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল সে সময়ে। রণহুঙ্কার ছিল, ‘দুর্গা মাতা কি জয়’। শত্রুর ঘাঁটি ওড়ানোর আগে ক্যাপ্টেন তাঁর দলকে বলছেন, ‘‘চিল্লা চিল্লাকে দেশভক্তি কি বাতে নেহি করনি হ্যায় মুঝে আপলোগো সে...’’। রক্ত গরম করা সেই সংলাপে ‘জোশ’ কিন্তু এতটুকু কম পড়েনি।
শেরশাহ
পরিচালনা: বিষ্ণু বর্ধন
অভিনয়: সিদ্ধার্থ, কিয়ারা,
শিব, শতাফ
৬.৫/১০
শুধু সুন্দর চেহারা নয়, সিদ্ধার্থ মলহোত্র অভিনয়ের গুণে বিক্রম বত্রার জন্য ভালবাসা আদায় করে নিয়েছেন। ডিম্পল চিমার সঙ্গে বিক্রমের প্রেমটিও ছিল দস্তুরমতো ফিল্মি। ল্যান্ডলাইন আর চিঠি দেওয়ানেওয়ার যুগে আঙুল কেটে তাঁকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া, ওড়না ধরে সাতপাক ঘুরে নেওয়ার সেই প্রেমকাহিনিকে মহান করেছে এর অপূর্ণতা। কিয়ারা আডবাণী ছোট্ট পরিসরে ভাল কাজ করেছেন। সর্দারনির ঝাঁজ, প্রেমিককে হারিয়ে ফেলার ভয়... সবটাই মুনশিয়ানার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন কিয়ারা। পর্দায় দু’জনের প্রেম আরও খোলতাই লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রে শতাফ ফিগার, শিব পণ্ডিত মানানসই।
শুধু মহত্ত্বের বীরগাথা নয় এ ছবি। স্ফুলিঙ্গের মতো বিক্রম বত্রার ২৪ বছরের জীবনকে একাত্ম করে দেওয়া গিয়েছে দর্শকের সঙ্গে। আর সেখানেই মন ছুঁয়েছে ‘শেরশাহ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy