সে দিন চৈত্রমাস ছিল কি না, জানা যায়নি। তবে ছোটবেলাতেই বিক্রান্ত জেনে গিয়েছিল, পূর্বা তার সর্বনাশের কারণ হবে। নেটফ্লিক্স অরিজিন্যাল সিরিজ় ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’র তিন প্রধান চরিত্রই সর্বনাশের খেলায় নামে। ক্রাইম-ড্রামার জন্য উত্তরপ্রদেশ নির্মাতাদের সবচেয়ে পছন্দের পটভূমি। এখানেও সেই সোজা রাস্তাই বাছা হয়েছে। এক দিকে পলিটিক্যাল মাফিয়ারাজ, অন্য দিকে প্রেম আর প্রতিশোধের খেলা। কিন্তু একঘেয়ে গুন্ডাগিরির বদলে বিক্রান্ত (তাহির রাজ ভাসিন), শিখা (শ্বেতা ত্রিপাঠী), পূর্বা (আঁচল সিংহ) এই তিন জনের সম্পর্কের ওঠাপড়া স্বতন্ত্র করে তুলেছে সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত পরিচালিত এই সিরিজ়কে।
নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ খানের ব্লকবাস্টার ছবি ‘বাজ়িগর’-এর গানের লাইনই শুধু সিরিজ়ে ধার করা হয়নি, প্লটেও মিল রয়েছে। তবে সেই ছবিতে ভিকির (শাহরুখের চরিত্রের নাম) নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তার উদ্দেশ্যপূরণের পথ সহজ করে দিয়েছিল। এখানে বিক্রান্তের প্রতিটি পদক্ষেপ, তাকে আরও বড় সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়।
উত্তরপ্রদেশের এক শহরের প্রভাবশালী নেতা তথা ডন অখিরাজ অবস্তীর (সৌরভ শুক্ল) মেয়ে পূর্বা ছোট থেকেই পছন্দ করে বিক্রান্তকে। কিন্তু সে সম্পর্ক জুড়তে ১৫ বছর আট মাস সাত দিন সময় লেগে যায়। তত দিনে একই কলেজে পড়া বিক্রান্ত আর শিখা কাছাকাছি এসে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কী? জোর যার মুলুক তার। অখিরাজের কাছে বিক্রান্ত একটা ট্রফি, যেটা সে তার মেয়ের হাতে তুলে দেবেই।
ইয়ে কালি কালি আঁখে
ক্রিয়েটর: সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত
অভিনয়: তাহির, শ্বেতা, আঁচল, সৌরভ, ব্রিজেন্দ্র
৬/১০
সিরিজ়ের আটটা এপিসোড জুড়ে ধরা দেওয়া আর ধরা পড়ার কাহিনি চলতে থাকে। কোনও কোনও বাঁকে উত্তেজনা আছে, কোথাও নিতান্তই সাদামাঠা চলন। আলাদা করে বলতে হয় সিরিজ়ের আবহসঙ্গীতের কথা। ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’র রিমিক্স ভার্শন মসৃণ ভাবে জায়গা বুঝে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্রাইম থ্রিলারে প্রধান চরিত্র বিপদ থেকে বাঁচতে বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মতলব বার করে। অন্তত দর্শক তেমনটা দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু বিক্রান্ত তার কার্যকলাপের জেরে জাল কাটার বদলে আরও জড়িয়ে পড়ে। এই চরিত্রে তাহির রাজ ভাসিন সত্যিই অনবদ্য। ‘মর্দানী’তেই তাহির বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের অভিনয় দক্ষতা। এই সিরিজ়ে তিনি আরও পরিণত। অধিকাংশ জায়গায় তাঁর অভিব্যক্তিই অভিনয়ের কাজটা করে দিয়েছে। গুগল করে ডার্ক ওয়েবের সন্ধান করা, কী ভাবে বন্দুক চালাতে হয় জানা, কিংবা স্ত্রীর মৃত্যুতে কী ভাবে কাঁদা উচিত সার্চ করা... এই ছোট ছোট জিনিস বিক্রান্তের চরিত্রে আলাদা মাত্রা এনেছে। তাঁর চরিত্রটাই সিরিজ়টিকে ডার্ক কমেডি জ়ঁরে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শিখার চরিত্রে শ্বেতা ত্রিপাঠী স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, ‘মির্জ়াপুর’-এর গোলু গুপ্তার ছায়া এড়াতে পারেননি তিনি। তিনটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে তাঁর অংশের নির্মাণই সবচেয়ে দায়সারা। বিক্রান্তের বাবার চরিত্রে ব্রিজেন্দ্র কালা এবং অখিরাজের ভূমিকায় সৌরভ শুক্ল নিজেদের জায়গায় যথাযথ।
খুব জোরালো চরিত্রে সুযোগ পেয়েছিলেন আঁচল সিংহ। কিন্তু পূর্বার মতো জটিল মনস্তত্ত্বের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য যে ক্যারিশমা প্রয়োজন, আঁচলের সেটা নেই। তাঁর চেষ্টাটাও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
দর্শকের চোখে সিরিজ়ের আরও অনেক ফাঁকই ধরা পড়ে। অখিরাজের মুখে সারাক্ষণ নির্বাচন আর শত্রুর কথা শোনা যাচ্ছে, অথচ কাহিনিতে তার কোনও রেফারেন্স নেই। মাঠের মধ্যে কারা কখন গুলি চালাচ্ছে, তারও ঠিক-ঠিকানা নেই। শিখা-বিক্রান্তের প্রেমপর্বও বেশ অগোছালো। দর্শকের কাছে তাঁদের রসায়নের রেশ পৌঁছনোর আগেই কাহিনির অভিমুখ বদলে যায়।
পাল্প ফিকশন বানানো খুব সহজ কাজ নয়। ক্রিয়েটর সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তর প্রচেষ্টা নজর কাড়ে। তবে দোষত্রুটি শুধরে নিতে না পারলে আগামী সিজ়নে দর্শকের আগ্রহ জিইয়ে রাখা মুশকিল হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy