Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
The Archies Review

সুহানা-অগস্ত্য-খুশিদের প্রথম ছবি ‘আর্চিজ়’, মনে কতটা দাগ কাটল সবুজ বিপ্লব?

আমেরিকার রিভারডেল হাই স্কুলের আর্চি ও তার দলবল উঠে এসেছে ১৯৬৪-তে, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত ভারতীয় হিলস্টেশনে। কাল্পনিক এই ‘রিভারডেল’ দেখতে ল্যান্সডাউন, ম্যাকলাস্কিগঞ্জের মতো।

এই প্রথম সরাসরি ‘আর্চি’ অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি হল নেটফ্লিক্সের জন্য।

এই প্রথম সরাসরি ‘আর্চি’ অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি হল নেটফ্লিক্সের জন্য। ছবি: সংগৃহীত।

চিরশ্রী মজুমদার 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১
Share: Save:

হিন্দি ছবিতে আগেও আমেরিকান ‘আর্চি’ কমিকস স্ট্রিপের মূল চরিত্রদের ছাঁচ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, কিছুটা ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এ, অনেকটা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে। তবে এই প্রথম সরাসরি ‘আর্চি’ অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি হল নেটফ্লিক্সের জন্য। জ়োয়া আখতারের আগের ছবিগুলোর মানে পৌঁছতে না পারলেও ফিল্মটি মন্দ নয়। বরং, ইদানীং অ্যাকশন, অসুস্থ পৌরুষ, তত্ত্বের ভারে জটিল সিনেমার দাপাদাপির মধ্যে মন হালকা করে এ ছবি।

আমেরিকার রিভারডেল হাই স্কুলের আর্চি ও তার দলবল উঠে এসেছে ১৯৬৪-তে, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত ভারতীয় হিলস্টেশনে। কাল্পনিক এই ‘রিভারডেল’ দেখতে ল্যান্সডাউন, ম্যাকলাস্কিগঞ্জের মতো। চরিত্রদের নাম ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মোটামুটি এক। আর্চি (অগস্ত্য নন্দা) এক্সট্রা কারিকুলারে ভাল (এখানে ব্যান্ড)। ভেরোনিকা (সুহানা খান) ও বেটির (খুশি কপূর) মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দোলে। ভেরোনিকা লজ খানিক মেকি, ধনীর দুলালী। বেটি কোমল, পরিশ্রমী। জাগহেড (মিহির আহুজা) বার্গারে বিভোর। মিস্টার ওয়েদারবি যথারীতি সবাইকে বোর করছে। কমিকসের কিছু দৃষ্টিকটু অংশ চিত্রনাট্যকারেরা (জ়োয়া, রিমা কাগতি, আয়েষা) মেরামত করে দিয়েছেন। যেমন, রেজি (বেদাঙ্গ রায়না) এখানে স্বার্থপর পাজি নয়। বরং, দারুণ টিমম্যান। ভেরোনিকা এখন হৃদয়-সম্পদেও ধনী। কিন্তু ছবির গল্প দুর্বল। ট্রেলারে যেটুকু দেখা যাচ্ছে সেটুকুই মোদ্দা কাহিনি! ভেরোনিকার বাবা শহরের ফুসফুস গ্রিন পার্কের বুকে শপিং প্লাজ়া তৈরি করতে চায়। এই টিনএজাররা মিলে শহরের বড়দের এককাট্টা করে সবুজকে বাঁচাবে পণ করেছে। সেটা কী ভাবে করে, সেই যাত্রাপথটাও জানা এবং সেই অভিযানের গতি ঢিমে।

সেই খামতিকে অনেকটা পুষিয়ে দিয়েছে টেকনিশিয়ানদের মুনশিয়ানা। ঠিক এই ধাঁচেই আর্চিদের নিয়ে নতুন গল্প ফেঁদে আমেরিকায় তৈরি হয়েছে ‘রিভারডেল’। সেই ঝাঁঝালো সিরিজ়ের ঠিক বিপরীত জ়োয়ার এই অনুকৃতি, যা সুদৃশ্য, সুগন্ধি, নান্দনিক। ফিরিয়ে এনেছে আমেরিকান বাবলগাম সংস্কৃতির যুগকে। প্রোডাকশন, পোশাকশিল্প, হেয়ার স্টাইলিং বিভাগ প্রাণ ঢেলে দেওয়ায় সিনেমার ফ্রেমগুলি হয়ে উঠেছে রূপকথার বইয়ের পাতা। যে ডিটেলিংয়ের জাদুতে ষাটের দশক উঠে এসেছে তাতে ওয়েস অ্যান্ডারসন-এর সিনে-দুনিয়াকে মনে পড়বে। ‘টিন মিউজ়িক্যাল কমেডি’ হলেও কমেডি আতসকাচ দিয়ে খুঁজতে হয় অথচ মিউজ়িকের আতিশয্য। গান ষোলোটি! সঙ্গীতবিভাগে ‘গাল্লি বয়’ খ্যাত অঙ্কুর তিওয়ারি, অভিজ্ঞ শঙ্কর-এহসান-লয় এবং ইউটিউবের নয়নমণি ডট (এথেল-এর ভূমিকাতেও তিনি) থাকা সত্ত্বেও তার বেশির ভাগই ক্লান্ত করে। স্বাধীনতার সাল, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ, একেলে দুনিয়ার নানা প্রকরণ যেমন প্রোপাগান্ডা সাংবাদিকতা, লিঙ্গপরিচিতি, পরিবেশ সচেতনতা, সংখ্যালঘু সমস্যা ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রেট্রো সিনেমার আঙ্গিকেও এত প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টাকে ছাপিয়ে নজর কেড়েছে প্রেমের ঊর্ধ্বে বন্ধুতা, বেটি-ভেরোনিকার রসায়ন, বন্ধুদলের পারস্পরিক সমীকরণ। এগুলো নিয়ে কাহিনি এগোলেই ছবিটা বেশি উপভোগ্য হত। শুধু ত্রয়ী নয়, সাত জন বন্ধুই চিত্রনাট্যে প্রাধান্য পেয়েছে। ওদের মা-বাবা, শহরের হর্তাকর্তাদের কাস্টিং দুর্দান্ত (লিউক কেনি, বিনয় পাঠক, জেমি অল্টার, অ্যালি খান)। জাগহেড, ডিলটন (যুবরাজ মেন্ডা), রেজি-র চরিত্রাভিনেতারা ও ছবির কোরিয়োগ্রাফি তুখোড়। হয়তো, ছবিটি সবার জন্য নয়। কিছু মানুষ ‘দ্য বিটলস’, ‘উলি বুলি’-র উল্লেখ, ছন্দ খুঁজে পেয়ে মজে যেতে পারেন স্কুলজীবনের শেষ বছরগুলির সুখস্মৃতিতে, এখনকার টিনএজারদের ভাল লাগতেও পারে।

ভা ভা ভুম! মানে? পরিশেষে আসল কথা! সুহানা, অগস্ত্য, খুশি— জেন জ়েড তারকাসন্তানরা কি উত্তীর্ণ হলেন? না নেপোটিজ়মের অপবাদই বহাল রইল? এঁরা প্রস্তুত হয়েই এসেছেন। কাউকে দেখেই প্রথম সিনেমা মনে হচ্ছে না। অগস্ত্যর ‘চার্ম’ অনেকটাই গড়ে দিয়েছে জাভেদ আখতারের কলমে গানের কথা, ফারহানের লেখা সংলাপ। বচ্চন জিনের সুবাদে অভিনয়ের বীজ তাঁর মধ্যে রয়েছে, চেহারায় রয়েছেন অল্পবয়সি অভিষেক। খুশির মধ্যে শ্রীদেবীকে খোঁজা অন্যায়, তবে তিনি নিশ্চয়ই নিজের মতো করে এগোবেন। ‘জো ভি চাহু, উও ম্যায় পাউ’— ‘ইয়েস বস’-এর জনপ্রিয় কলিটি যেমন ভেরোনিকা লজের ক্ষেত্রে সত্যি, শাহরুখ-কন্যা সুহানার ক্ষেত্রেও তাই। স্কুল-কলেজের মঞ্চ থেকেই বিখ্যাত সব চরিত্রে নায়িকার ভূমিকায় অভ্যস্ত তিনি। মঞ্চের সেই নাটকীয়তা পর্দায় সামান্য ‘ন্যাকা’ ভেরোনিকার কাজ অনায়াস করেছে। গুঞ্জন, সুহানা ছোট থেকেই অভিনেত্রী হতে বদ্ধপরিকর। এ বার দেখা যাক, কোনও কিছু হৃদয় দিয়ে চাইলে গোটা পৃথিবী মিলে তার কাছে তা পৌঁছে দিতে নানা রকম ফন্দি আঁটে কি না!

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy