পরের পর খাঁচায় মুরগিগুলো ঠেসাঠেসি করে আটকে। চোখের সামনে দেখছে পাশের খাঁচার প্রতিবেশী কাটা পড়ল। কাল হয়তো তার পালা... কিন্তু সে পালাতে পারে না। পালানোর উপায়ও তার জানা নেই, সাহস তো নেই-ই। মুরগি আসলে রূপক এখানে, সমাজের একেবারে নিচুতলার মানুষকে দর্শাতে গোটা ছবি জুড়ে রুস্টার কুপের কথা ঘুরে ফিরে আসে। সেই কুপের বাসিন্দা হয়েও বলরাম (আদর্শ গৌরব) কী ভাবে নিজের মুক্তির পথ খুঁজে পেল, সেই জার্নির গল্প ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’। সে পথ হয়তো ন্যায়ের নয়। আসলে ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠিটাই যে বড্ড গোলমেলে। ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে নেতাকে গিয়ে ঘুষ দিয়ে আসা যায়, কিন্তু ভিখারিকে একটা টাকা দিলে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়! বিপদে পড়ে বাড়ির ড্রাইভারকে ‘ফ্যামিলি’ বলতে দ্বিধা না করা মালিক, প্রয়োজন মিটলে তাকে পদাঘাতও করতে পারে।
অরবিন্দ আদিগার ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ বইটি ২০০৮ সালে ম্যান বুকার প্রাপ্ত। পরিচালক রামিন বাহরানি সেই বইয়ের আধারেই তাঁর ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। আদিগা যে ভাবে বলরামের আত্মকথনের ভঙ্গিতে গোটা গল্পটা সাজিয়েছিলেন, পরিচালক ছবিতে সেই ধারাই বজায় রেখেছেন। তবে সিনেম্যাটিক লাইসেন্স তিনি অবশ্যই নিয়েছেন। বিশেষত প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার চরিত্রের ক্ষেত্রে, যা বইয়ের চেয়ে খানিকটা আলাদা। এবং কাহিনিতে খানিকটা থ্রিলারের ছোঁয়া এনেছেন।
ধানবাদের কাছে লক্ষ্মণগড়ের দলিত পরিবারের ছেলে বলরাম। একে দলিত, তায় গরিব। তাই মেধাবী হলেও পেটের টানে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। কিন্তু স্কুলের পরিদর্শকের কাছ থেকে পাওয়া হোয়াইট টাইগার খেতাব তার মাথায় ঘুরতে থাকে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলরাম চায়ের দোকানের কাজ ছেড়ে এলাকার দাপুটে জমিদারের বাড়িতে ড্রাইভারের কাজ নেয়। জমিদারের ছোট ছেলে অশোক (রাজকুমার রাও) এবং তার স্ত্রী পিঙ্কিকে (প্রিয়ঙ্কা) দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে বলরামের উপর। গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে মেগাসিটি... বলরামের জীবন-ন্যায়-নীতি সব বদলাতে থাকে। চিতায় শোয়া বাবার পা নাড়া দেখে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ছেলে ক্রমশ ধুরন্ধর হয়ে ওঠে।
দ্য হোয়াইট টাইগার
পরিচালনা: রামিন বাহরিন
অভিনয়: আদর্শ, রাজকুমার, প্রিয়ঙ্কা
৬.৫/১০
সব অর্থেই ছবির ডার্ক হর্স আদর্শ গৌরব। তাঁর মতো নতুনের উপরে যে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হেয়েছিল, তা তিনি অনায়াসে করে দেখিয়েছেন। আদর্শ এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ভাবে বলরাম হয়ে উঠেছেন যে, রাজকুমার রাও, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো অভিনেতাদের ঘরে সাজানো আসবাব মনে হয়। কানে লাগে রাজকুমারের আমেরিকান মেকি অ্যাকসেন্টও। ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এ লেখক শ্রেণিবৈষ্যমের গালে একটা জোরালো থাপ্পড় মেরেছিলেন। বাহরিন সবটাই দেখালেন কিন্তু তা-ও যেন থাপ্পড়ের শব্দ ততটা জোরালো হল না। তার দায় খানিকটা সিনেমাটোগ্রাফারেরও। সংলাপহীন দৃশ্যায়নও অনেক কথা বলে দিতে পারে।
ছবি দেখতে দেখতে ‘প্যারাসাইট’-এর কথা মনে পড়ে। দুটো ছবি সম্পূর্ণ আলাদা। মিল শুধু এক জায়গায়, উচ্চবিত্তের উপরে নেওয়া নিম্নবিত্তের প্রতিশোধ। কাহিনিতে একাধিক অপরাধ, যার লঘু-গুরু বিচারের দায়িত্ব দর্শকের। পিঁজরাপোল থেকে নিজেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে আনা বলরাম স্বতন্ত্র ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। অতীতকে কবর দিতে না পারলেও ধোঁকা দিয়েছে। কিন্তু তার অপরাধের শাস্তি হবে না? হয়তো হবে, আসলে সে শাস্তির ভয়ও পায় না। গা থেকে চাকরের বর্ম খুলে ফেলার প্রশান্তি তার সব না-পাওয়া মিটিয়ে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy