Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পরাবাস্তবের শ্রীকান্ত

প্রদীপ্তর ছবি বানানোর মুখ্য তাগিদ, পরিবেশনে এক্সপেরিমেন্ট। সেই কারণে গল্পের বইয়ে পড়া চরিত্রগুলি কোনও যুগের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের পছন্দের জঁর বোধহয় পরাবাস্তব। প্রথাগত জঁর ভেঙে শ্রীকান্ত, রাজলক্ষ্মী, অন্নদাদিদি ও ইন্দ্রনাথকে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’-এ নিজের ঘরানায় সাজিয়েছেন তিনি। চরিত্রগুলির স্রষ্টা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাদের বিচরণক্ষেত্র পরিচালকের মননে। কিশোর শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ ও অন্নদাদিদির পর্ব খানিক গল্প থেকে, খানিক কল্পনাপ্রসূত। যুবক শ্রীকান্ত কর্পোরেটের ‘ভবঘুরে’, যে চাকরি করে না, চাকরি বেছে নেয়। রাজলক্ষ্মীর সঙ্গে শ্রীকান্তের দেখা শহর থেকে দূরে, সমসময়ে। গড়গড়া ছেড়ে পিয়ারি ধরেছে সিগারেট, ইংরেজিও বলে।

প্রদীপ্তর ছবি বানানোর মুখ্য তাগিদ, পরিবেশনে এক্সপেরিমেন্ট। সেই কারণে গল্পের বইয়ে পড়া চরিত্রগুলি কোনও যুগের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। চরিত্রগুলির নাম বদলে দিলেও তারা যতটা এ সময়ের, ততটাই কথাসাহিত্যেরও। চরিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্লুয়িডিটি। গল্প বলার মধ্যেও টাইম ট্রাভেলের খেলা চলছে নিরন্তর। পরিচালকের ভাবনার উৎস বুঝতে ধৈর্য ধরে শেষ অবধি দেখতে হবে। কারণ দ্বিতীয়ার্ধের বেশ খানিক পরে সেলফি-শপিং-ঘর সাজানোর চক্রে পরিচালকের ভাবনার তল খুঁজে পাওয়া যায় না।

এই ছবির সংলাপ ছবির গান। এমনিতে সংলাপের ব্যবহার খুবই অল্প। গানের মাধ্যমেই মুহূর্তকে বুনেছেন পরিচালক। আর দু’চোখ ভরে দেখতে হয় ক্যামেরার কাজ। ড্রোন শট, ক্লোজ় আপে সিনেম্যাটোগ্রাফার শুভদীপ দে বড্ড ভাল কাজ করেছেন। ছবির শেষেও কয়েকটি ফ্রেম দর্শক মনে রাখবেন।

রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত
পরিচালনা: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
অভিনয়: ঋত্বিক, জ্যোতিকা, রাহুল, অপরাজিতা, সায়ন
৬/১০

গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্র হলেও, অভিনেতাদের আলাদা করে কোনও ভার বইতে হয়নি। তাই তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত। হলুদ পাঞ্জাবি আর কোঁকড়ানো চুলে ঋত্বিক চক্রবর্তীকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছিল। কিশোর শ্রীকান্তের চরিত্রে সোহম মৈত্রও বেশ ভাল। ইন্দ্রনাথের চরিত্রে সায়ন ঘোষ ছবির অন্যতম চমক। অপরাজিতা ঘোষ ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথ। তবে বাংলাদেশের অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে বেশ বেমানান লেগেছে।

পরিচালকের কাছে অভিযোগ, পরিবেশন নিয়ে যতটা ভেবেছেন, চরিত্রগুলিকে রক্তমাংসের করে তুলতে বোধহয় খামতি রয়ে গিয়েছে। বিশেষত, একটি কালজয়ী উপন্যাসকে ঘিরে যখন তাঁর কাজ, তখন সেই চরিত্রগুলি কতটা শরৎচন্দ্রের এবং কতটা পরিচালকের, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছবির শেষে চরিত্রদের একটি বৈশিষ্ট্যও মনে থাকে না। তারা যেন নেহাতই এক্সপেরিমেন্টের অঙ্গ। আর এই ধরনের ছবির চলন মন্থর হবে, সেটা আশা করাই যায়। তবে কিছু কিছু শটের দৈর্ঘ্য কমানোই যেত।

অন্য বিষয়গুলি:

Rajlokhi O Srikanto Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy