Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Movie Review

রাজনীতি এড়িয়ে হিন্দি ছবির চেনা ছকে গাঁথা ‘ম্যায় মুলায়ম’, শিথিল সম্পাদনা ভোগাবে দর্শককে

ভারতীয় রাজনীতিবিদ মুলায়ম সিংহ যাদবের জীবনীচিত্র হয়ে উঠতে পারত নানা দিক থেকে উপভোগ্য। শেষ পর্যন্ত কেমন হল ‘ম্যায় মুলায়ম সিংহ যাদব’! ছবিটি দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Image of  Amyth Sethi

ছবিতে মুলায়ম সিংহ যাদবের ভূমিকায় অমিত শেঠি। ছবি: সংগৃহীত।

অতীন্দ্র দানিয়াড়ী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৪
Share: Save:

জীবনীচিত্র না কি তথ্যচিত্র? না কি বিশেষ এক রাজনৈতিক চরিত্র অবলম্বনে তৈরি কল্পনা নির্ভর ছবি?

হয়তো ‘ম্যায় মুলায়ম সিংহ যাদব’ ছবিটি এর কোনওটিই নয়। দর্শকাসনে বসে মনে হতেই পারে, তথ্যচিত্র। কিন্তু পর ক্ষণেই ভেঙে যেতে পারে ভুল। মনে হবে আশির দশকের কোনও হিন্দি ছবির দুর্দান্ত মুহূর্ত। এই ছবিতে একটা বড় অংশে রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থা। কিন্তু এক আদ্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তির জীবনীচিত্রেও কখনও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। বরং সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতে তৈরি হওয়া নাটকীয় উত্থান-পতনই এই ছবির মূল আকর্ষণ। পরিচালক শুভেন্দুরাজ ঘোষ তাই প্রথম থেকেই ‘ম্যায় মুলায়ম’ ছবিটিকে নাটকীয় সামাজিক ছবি হিসাবে তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। তাই এ ছবির নামভূমিকায় অমিত শেঠি হয়ে উঠেছেন নায়ক। মুলায়মের রাজনৈতিক ভঙ্গির থেকে বড় হয়ে উঠেছে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ভাব। খুব যত্ন নিয়েই পরিচালক রাজনীতির গভীর সংঘাত, বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই মুলায়ম সিংহ যাদব সেলুলয়েডের নায়ক হয়ে গিয়েছেন। ইতিহাস অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে।

Review of the movie Main Mulayam Singh Yadav derected by Suvendu Raj Ghosh

ছবির একটি দৃশ্যে কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত।

এক সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে মুলায়ম, স্বপ্ন দেখতেন বড় কুস্তিগির হওয়ার। একের পর এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে হতেই, সেই যুবক কুস্তির আখড়া ছেড়ে প্রবেশ করেন বৃহৎ রাজনৈতিক আখড়ায়। যেখানে লড়াইটা বুদ্ধির, আর মেধার। রাজনীতির কৌশলী মারপ্যাঁচে বিপক্ষকে ঘায়েল করার খেলায় ক্রমশ দক্ষও হয়ে ওঠেন।

সত্তরের দশকে ভারতীয় রাজনীতির ব্যাধি হয়ে দেখা দিয়েছিল ‘বংশপরম্পরায় নেতৃত্বের অধিকার’। ঠিক সেই সময় রাজনীতিতে মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো নেতার আবির্ভাব। পেশায় স্কুলশিক্ষক মুলায়ম, উত্তরপ্রদেশের জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, নারীদের সমানাধিকারের কথা বলে মানুষের বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা অর্জন করে নেন। সমাজতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করা মুলায়ম সিংহ যাদবের হাত ধরেই তৈরি হয় সমাজবাদী পার্টি। ডক্টর রামমনোহর লোহিয়ার একনিষ্ঠ শিষ্য হিসাবেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং উত্তরপ্রদেশের সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন তাঁদের প্রিয় ‘নেতাজি’।

Review of the movie Main Mulayam Singh Yadav derected by Suvendu Raj Ghosh

ছবির একটি দৃশ্যে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত মুহূর্তে মুলায়ম। ছবি: সংগৃহীত।

এ ছবির গল্পের মধ্যে নতুন কিছু নেই। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের অনেক নেতার উত্থান এমনই চমকপ্রদ, এমনই ঘটনাবহুল। কিন্তু মুলায়ম সিংহ যাদব তাঁদের মধ্যে অবশ্যই এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। কারণ, রাজনীতির কঠিন বাঁকে দাঁড়িয়ে, তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি সারা দেশেই আলোড়ন ফেলেছিল। নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশের রাজনীতিকে। আগামী কাল তিনি কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, সেটা তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুও জানতে পারতেন না!

এমনই রহস্যময় রাজনৈতিক চরিত্র ছিলেন মুলায়ম, যিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী, ‘অন্যান্য অনগ্রসর’ শ্রেণির প্রবক্তা এবং এ দেশে তৃতীয় ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান মুখ। রাজনীতির উত্থান-পতনে তাঁর রূপবদল করার দক্ষতা তাঁকে এক বিরল চরিত্র করে তুলেছিল।

দুর্ভাগ্য, ছবিতে মুলায়ম চরিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির দিকে তেমন ভাবে নজরেই পড়েনি। তাই তিনি শুধু নায়ক হয়ে রয়ে গেলেন গোটা ছবিতে।

তবে এই ছবির সঙ্গীত বেশ ভাল। দৃশ্য অনুযায়ী আবহ এবং গানের ব্যবহার ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘তেরি সুরত পে দিল হার গয়ি’ বা ‘হুজুর আপ কা সুক্রিয়া’র মতো গান দর্শক অবশ্যই মনে রাখবেন। সিনেমাটোগ্রাফি এই ছবিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছে। কাহিনির অলিতে গলিতে ক্যামেরার আলো-আঁধারির খেলা বেশ ভাল লাগে। ছবিতে বিভিন্ন গানের দৃশ্যায়ন, ঘরের মধ্যে টিকটিকির আরশোলা ধরা, মুলায়মকে টিকিট দেওয়ার জন্য দলীয় বৈঠক, পুলিশের সঙ্গে মুলায়মের লড়াইয়ের দৃশ্য মনে রাখার মতো।

ছবিতে সকলেই চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করার চেষ্টা করেছেন, বিশেষ করে মুলায়মের মা (জারিনা ওয়াহাব), মুলায়মের স্ত্রী (সানা আমিন শেখ), নাথুরাম (মুকেশ তিওয়ারি) এবং রামমোহন লোহিয়ার (প্রকাশ বেলোয়ার্ডি) চরিত্রাভিনেতারা নজর কাড়েন। তুলনায় মুলায়মের চরিত্রে অমিত শেঠিকে একটু আড়ষ্ট মনে হয়। বিভিন্ন নাটকীয় মুহূর্তে তাঁর অভিব্যক্তি আরও একটু সাবলীল হতে পারত। কুস্তির আখড়ায় একজন চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির হিসাবে তাঁর সাধারণ চেহারাও বড্ড চোখে লাগে। ছবিতে বেশ কিছু দৃশ্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বেশ কিছু দৃশ্য অবশ্যই ছোট করা যেত।

রাতে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়া দুই সাধারণ মানুষের দৃশ্যকে অতটা সময় দেওয়া, পুলিশের অত্যাচার দেখানোর জন্য মদের দোকান থেকে এনকাউন্টার করা পর্যন্ত লম্বা দৃশ্য ছবিকে অকারণে দীর্ঘ করে দেয়। তাই ছবিটি মুলায়ম সিংহ যাদবের জীবনের একটি নির্দিষ্ট অধ্যায়ের তথ্যবহুল গল্প না হয়ে, এক চমকপ্রদ ‘হিরো’র কাহিনি হয়েই থেমে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Main Mulayam Singh Yadav Hindi Film
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE