Advertisement
E-Paper

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের মধুছন্দা ছবি ও পারের দৃষ্টিতে, ‘মনোগামী’ দেখল আনন্দবাজার অনলাইন  

দাম্পত্যের একঘেয়েমি বা দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের স্থবিরতা একটা সীমার পর বদ্ধ জলার মতো হতে পারে। সেই হাঁসফাঁস করা জীবনে খোলা আকাশ খোঁজার জন্য চলে আসতে পারে নতুন প্রেম বা মোহের মায়াটান।

‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’ ছবির একটি দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরী ও জেফার রহমান।

‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’ ছবির একটি দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরী ও জেফার রহমান। ছবি: সংগৃহীত।

সংযুক্তা বসু

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৫
Share
Save

‘শোয়াইক গেল যুদ্ধে’ নাটকের একটা গান মনে পড়ে যাচ্ছে। গানের কথাগুলি এমন…

আকাশে ছিল চাঁদ, রাত নিঝঝুম

ঘরে বউ, বাইরে প্রেমিকা

হেনরির চোখে নেইকো ঘুম

সেই হেনরির মতোই অবস্থা ‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’ ওয়েব ছবির নায়ক শাফকতের। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নুনমরিচ-রঙা চুলে মাঝবয়সি নায়ক শাফকাতকে মনের মতো করে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ছবির পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকী।

দাম্পত্যের একঘেয়েমি বা নারী-পুরুষের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের স্থবিরতা একটা সীমার পর বদ্ধ জলার মতো হতে পারে। খুব আদর-সোহাগের সম্পর্কেও এমনটা অসম্ভব নয়। সেই দৈনন্দিনতায় হাঁসফাঁস করা জীবনে খোলা আকাশ খোঁজার জন্য চলে আসতে পারে নতুন প্রেম বা মোহের মায়াটান।

শুনতে অস্বস্তি হলেও, থোড়-বড়ি-খাড়া বিশ্বস্ততার সম্পর্কের মাঝখানে নতুন চরিত্রের এসে পড়াটা অবৈধ মনে হলেও, অস্বীকার করার পথ অনেক সময় বড় কঠিন হয়ে যায়, নানা মানসিক টানাপড়েনে। একগামিতা, না কি একঘেয়েমি থেকে বহুগামী হয়ে ওঠা— এই দোলাচলের একটা দর্শন নিয়েই পরিচালক ফারুকী মূলত ছবির পটভূমি তৈরি করে এগোতে চেয়েছেন। যদিও রোম্যান্টিক গোত্রের এই ধরনের ছবি চিরকালই সারা পৃথিবী জুড়ে বার বার হয়ে আসছে। নতুন কোনও ধারা নয়। যা পাওনা, তা হল ফারুকীর নিজস্ব স্টাইলে গল্প বলা।

‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’ ছবির একটি দৃশ্য।

‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’ ছবির একটি দৃশ্য। —ছবি: সংগৃহীত।

এক নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার বিগ বস্‌ শাফকত। তার আপাতদৃষ্টিতে সুখের, সফল দাম্পত্য জীবনে কে জানে কোন দৈববশে এসে পড়ে তার থেকে বয়সে অনেক ছোট এক মেয়ে, লামিয়া (জেফার রহমান)। লামিয়ার কাজ করার দক্ষতা, আধুনিক মননের আবেদন যেন নতুন প্রাণ জাগিয়ে তোলে তার মধ্যবয়স্ক বুদ্ধিদীপ্ত বসের মধ্যে। লামিয়া যেন শাফকতের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে বিকেলে ভোরের ফুল। গায়িকা লামিয়ার ভূমিকায় জেফার রহমানকে এই প্রথম ওয়েব সিনেমায় আনলেন ফারুকি। লামিয়ার চরিত্রে তাঁর অভিনয় এক ঝলক টাটকা বাতাস। চমক লাগায় তার সোজাসাপটা কথা বলা, বসের কাজে ও লেকচারে মুগ্ধ হওয়া অভিনয়ের উপস্থাপনা। তবে কি, তার চরিত্রে যদি আর একটু সমর্পণ থাকত, মানাত বেশ। দিনের শেষে পরকীয়া কানাগলি হলেও, প্রেম তো বটেই!। কিন্তু চিত্রনাট্য যেমন ভাবে লেখা এবং প্রথম অভিনয় করতে গিয়ে ফারুকী যেমনটা চেয়েছেন জেফার তেমনটাই করেছেন। এটাই স্বাভাবিক এক জন নতুন নায়িকার পক্ষে।

শিল্পীর গুরুত্ব অনুসারে হয়তো শাফকতের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর পারফরম্যান্স নিয়ে আগে আলোচনা করা উচিত ছিল, তা-ও জেফারের কথা প্রথমে আলোচিত হল। তার কারণ, জেফার অর্থাৎ লামিয়াকে ঘিরেই শাফকাতের মতো স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে মনেপ্রাণে ভালবাসা কট্টর একগামিতায় বিশ্বাসী চরিত্র নিজের আদর্শ থেকে দূরে সরে যায়। চঞ্চল এই আচমকা দ্বিচারী হয়ে ওঠার টালমাটাল অবস্থা নিঃসন্দেহে ভাল ফুটিয়েছেন। কিন্তু লামিয়ার সঙ্গে সাজেস্টিভ শয্যা সিকোয়েন্সে হঠাৎ অপরাধবোধে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলা কষ্টকল্পিত মনে হয় । এই দৃশ্যটি অবশ্য খানিকটা মৃদু হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। যদি ধরে নেওয়া যায়, ফারুকী শাফকতের অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ স্বভাবটি মেলে ধরতে চেয়েছেন, তা হলে অবশ্য আলাদা কথা।

—গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

যে স্ত্রীর (সামিনা হুসেন প্রেমা) প্রতি শাফকতের এত ভালবাসা, সেই চরিত্রটি কেমন যেন আলগা-আলগা মনে হয়। ছবিতেও শাফকাতের স্ত্রীর নাম সামিনা। স্বামীর জীবনে দ্বিতীয় নারী আসার পর সামিনার মতো কেয়ারিং বৌয়ের মনে যে ঝড় ওঠা প্রত্যাশিত ছিল, সত্যি কথা বলতে, সেই ঝড় তোলপাড় তোলেনি। অন্য দিকে লামিয়ার প্রেমিকের ভূমিকাটিও অতি সংক্ষিপ্ত। দানা বাঁধেনি। এই ফাঁকগুলি থাকলেও ছবিটি একটানা দেখে ফেলার কৌতূহল সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন পরিচালক।

আর একটা ব্যাপার বলতেই হয়। শাফকাতের কিশোর-কিশোরী ছেলেমেয়ে শুদ্ধ (শুদ্ধ) আর রাইয়ের (প্রত্যয়ী প্রথমা রাই) পরিণত অভিনয় এই ছবির প্রশংসনীয় ভাবে জোরালো জায়গা। আলাদা একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি করেছে এরা। শাফকত ও লামিয়ার এমন কিছু সংলাপ আছে, যেখানে দুই ভিন্ন প্রজন্মের মূল্যবোধের ফারাক পরিষ্কার হয়ে যায়। এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ওরা যতই অন্তরঙ্গ হোক না কেন, দু’জনে মানসিক ভাবে দুই ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা। এই মেরুকরণ ছবিতে এক সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি করে। আধুনিক গতি দেয় ছবির চলনে।

‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’র বেশির ভাগ শুটিংই ইন্ডোরে । সামান্য আউটডোর আছে কক্সবাজারে। মেট্রোরেলে শাফকত ও লামিয়ার বার বার দেখা হওয়া এবং তাদের আলাপচারিতা বেশ মন ছুঁয়ে যায়। সিনেমাটোগ্রাফির আলো-আঁধারি কাহিনির বিভিন্ন মুহূর্তের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চোখের জন্য আরামদায়ক।

পাভেল আরীনের সঙ্গীত পরিচালনায় ছবির গানের সুর ও কথা বড় মনোরম। যেমন ‘আশায় বাঁধে যে ঘর/ সেই ঘর ফাঁকা/ একসাথে আমাদের/ এই একা থাকা।’ আবার এই নিঃসঙ্গতার মধ্যেও কাছাকাছি থাকার আকুতি আছে। যেমন ‘তুমি আমার পাশে হে বন্ধু বসিয়া থাকো /আমি মেঘের দলে আছি/ আমি ঘাসের দলে আছি’। এই ভাবে একটি-দু’টি সুখশ্রাব্য গানের বাণী না লিখলেই নয়। গানগুলি চরিত্র ও কাহিনিসজ্জার সঙ্গে সুন্দর গাঁটছড়া বেঁধেছে।

স্বল্প সময়ের ছবি। তাই বার বার ঘড়ি দেখারও কারণ নেই। সবাই মিলে উপভোগ্য মন দেওয়া-নেওয়া আর মন ভাঙাগড়ার ওয়েব ছবি ‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’। পরকীয়া প্রেম নিকষিত হেম! কথায় আছে না?

লেখার গোড়ায় ফিরে আসা যাক। ঘরে বউ, বাইরে প্রেমিকাকে নিয়ে নাস্তানাবুদ, বিপর্যস্ত হেনরির জীবনে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার রসই যে আলাদা! লা জবাব এক্সট্রা ম্যারিটাল! লা জবাব নিষিদ্ধ আপেল! ছবিটি দেখা যাচ্ছে ‘চরকি’ ওটিটি-তে।

Chanchal Chowdhury

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।