সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। ছয় অঙ্কের পরিসংখ্যানও চোখ সওয়া। টেলিভিশন, সংবাদপত্রের ধর্ষণের রিপোর্টও কি আর তেমন নাড়া দেয়? হল থেকে বেরিয়ে মলের জৌলুসে ধাঁধিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল, আশপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে না তো তেমন কেউ? ভিড়ে মিশে যাওয়া যে ভিলেনকে দেখলাম একটু আগেই? তেলঙ্গানা, কাঠুয়া নামগুলোর সঙ্গে আতঙ্ক জড়িয়ে গিয়েছে যে দেশে, সেখানে ‘মর্দানী টু’-এর মতো ছবি আরও বেশি করে হওয়া দরকার। তাতে লাভ কতটা, সে প্রশ্ন পরে। তবে নিজেদের ভিতরকার মরচে ধরা রাগ, অসহায়তা, আতঙ্কের বোধগুলোয় ধাক্কা দিয়ে যায় ‘মর্দানী টু’।
শিবানী শিবাজি রাওয়ের (রানি মুখোপাধ্যায়) এন্ট্রি সিনেই ছবির মুড তৈরি হয়ে যায়। দু’ঘণ্টারও কম সময়ের চিত্রনাট্য এতটাই টানটান, এক মুহূর্তও চেয়ারে নিশ্চিন্তির হেলান দিতে দেবে না। রাজস্থানের কোটায় দীপাবলির কয়েক রাত আগে যে ঘটনা দিয়ে কাহিনির সূত্রপাত, শুরুতেই তা গ্রাস করে নেয়। শিবানী অনুসন্ধানে নামে সেই বিকৃতকাম ধর্ষক ও খুনির। তাকে প্রথম থেকেই দর্শককে চিনিয়ে দেওয়া হয়, যাতে চোর-পুলিশ খেলার গিঁটগুলো খুলতে খুলতে এগোনো যায়। বিভিন্ন নামে, ভিন্ন ভিন্ন বেশে অপরাধী পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই পরের পর আঘাত হেনে যায়। শিবানী আর তার টিম হাত কামড়ায়। এখানে কয়েকটি দৃশ্যের অতিরঞ্জন একটু চোখে লাগে। পুরোদমে তদন্ত চলাকালীন আচমকা টিমের সদস্যদের প্রতি শিবানীর ব্যক্তিগত খেয়াল রাখার বিষয়টি না দেখালেও চলত। মানসিক বিকারজাত অপরাধের ধরন ও প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও তার প্রয়োগ কোথাও কোথাও অবিশ্বাস্য ঠেকে। থানা চত্বরের মধ্যেই একটি শিশুকে খুন করে লাশ গায়েব করে ফেলা, জলের নীচে চোর-পুলিশের ধস্তাধস্তির নিষ্প্রয়োজন দৃশ্যের মতো লুজ় এন্ড রয়েছে চিত্রনাট্যে। বলিউডি ছবির খাতিরেই সেটুকু মেনে নিতে হয়।
মনে হতে পারে, এ ছবি শুধুই ফেমিনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি। সারা ছবিতে কোনও নিরপেক্ষ পুরুষ চরিত্র দেখানো হয়নি, যার ভাবনা প্রোটাগনিস্টের খাতে বয়। ‘মেল ইগো’তে আঘাত ও তার প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণও বড্ড সরলীকৃত। পুলিশ ফোর্সের অন্দরের অফিসার, ধর্ষিতা মেয়েটির শিক্ষিকা, নিউজ় অ্যাঙ্করের সংলাপ সমাজের গড়পড়তা মানসিকতাকেই তুলে ধরে। এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ সমানাধিকারের বহুশ্রুত কথাগুলো রানির মুখ দিয়ে সপাটে বলানো হয়েছে। হাততালিও পড়েছে তাতে। তবে এর কোনওটাই ছবির উদ্দেশ্যকে খর্ব করে না।
মর্দানী টু
পরিচালনা: গোপী পুত্রন
অভিনয়: রানি মুখোপাধ্যায়, বিশাল জেঠওয়া
৬.৫/১০
সাবপ্লট হিসেবে শিবানীর নিজস্ব কাহিনি আরও একটু দেখতে পেলে মন্দ হত না। পলকে মিলিয়ে যাওয়া একটি দৃশ্যে দেখা মেলে যিশু সেনগুপ্তের। ছবির দমবন্ধ করা পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গ দেয় আবহসঙ্গীত। সঞ্জীব দত্তের এডিটিং ছবির গতিকে এতটুকু মন্থর হতে দেয়নি। ড্রোন শট, চেজ়িং সিকোয়েন্স এবং অ্যাকশন দৃশ্যগুলিও জমাট। সব মিলিয়ে বিনোদনে এতটুকু খামতি রাখেননি পরিচালক গোপী পুত্রন। ছবিতে রানিকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন যিনি, তিনি বিশাল জেঠওয়া। টেলিভিশন থেকে বড় পর্দায় ডেবিউ করলেন। রক্ত জল করা চাউনিতেই ২৫ বছরের বিশাল কেড়ে নিয়েছেন অনেক দৃশ্য।
নিজের সবটুকু দিয়ে লড়ে জিতে যাওয়ার পর ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে শিবানী। দৃশ্যটা বুঝিয়ে দেয়, ‘মর্দানী’র ফরমুলা মেনে নারীশক্তির জয়ে সিনেমার ‘দি এন্ড’ হলেও, ধর্ষণের বেড়ে চলা সংখ্যাটার সামনে আসলে আমরা কত অসহায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy