স্মৃতিচারণে রুপার্ট, এমা এবং ড্যানিয়েল
দশ বছর ধরে চলা একটা মুভি-সিরিজ়কে একশো মিনিটের মধ্যে ধরতে চাওয়া মুশকিল। তাই ‘হ্যারি পটার টোয়েন্টিয়েথ অ্যানিভার্সারি: রিটার্ন টু হগওয়ার্টস’ মূল ছবিগুলোর ম্যাজিক পুরোপুরি তুলে ধরতে পারল, এমনটা বলা যাবে না। আসলে মাত্র দশ বছর আগে শেষ হওয়া একটি ফিল্ম-সিরিজ়ের খুঁটিনাটি দর্শকের মনে অনেকটাই টাটকা। রিইউনিয়নে এসে এমা ওয়াটসন ভারী সুন্দর একটা কথা বললেন, ‘‘একবার মনে হচ্ছে অনেকটা সময় আমরা কাটিয়ে এসেছি। আবার এ-ও মনে হচ্ছে, এই তো সে দিনের ঘটনা...’’ দুই মলাট হোক কি পর্দা, হ্যারি পটার একটা ফেনোমেনা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বুঁদ করে রেখেছে।
অনেকটা ডকুমেন্টরির মতো করে বানানো হয়েছে ‘রিটার্ন টু হগওয়ার্টস’। ভারতীয় দর্শক অ্যামাজ়ন প্রাইমে এটি দেখতে পারবেন। মূল চরিত্র— হ্যারি (ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ), হারমায়নি (এমা ওয়াটসন), রন (রুপার্ট গ্রিন্ট), ভোলডেমর্ট (রেফ ফাইনস), বেলাট্রিক্স (হেলেনা বোনাম কার্টার) ক্যামেরার সামনে তাঁদের পর্দার সামনের-নেপথ্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। চারটি পর্বে এই ‘রিটার্ন টু হগওয়ার্টস’কে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি পর্বে হ্যারি পটারের দুটো করে ছবির চর্চা। একাধিক বার বদলেছে ছবির পরিচালক। ‘হ্যারি পটার’-এর ছবির সূচনা হয়েছিল ক্রিস কলম্বাসের হাত ধরে। আনকোরা ড্যানিয়েল, এমা, রুপার্টদের সামলেছিলেন তিনি। অনেক মজার তথ্য উঠে এসেছে কলম্বাসের বক্তব্যে। আলফন্সো কুয়েরনের মতো অস্কারজয়ী পরিচালকও ‘হ্যারি পটার’-এর নির্দেশনা দিয়েছেন। শেষ চারটি ছবির পরিচালক ডেভিড ইয়েটসের কাজটা সবচেয়ে দুরূহ ছিল। কারণ তত দিনে এই মুভি-সিরিজ় এক রকম আন্দোলন ঘটিয়ে ফেলেছে।
‘রিটার্ন টু হগওয়ার্টস’ জুড়ে এমন অনেক কথাই আছে যা পটার-ভক্তদের অজানা নয়। কেমন ভাবে হ্যারির চরিত্রের কাস্টিং হয়েছিল, রন আর হারমায়নির জন্য নির্মাতাদের কী ভাবনা ছিল... এ নিয়ে অজস্র কথা হয়েছে। কিন্তু স্মৃতির সরণি ধরে বারবার হাঁটতে তো ভালই লাগে।
এমা যেমন হারমায়নির চরিত্র নিয়ে তাঁর অবসেশনের কথা বলছিলেন, ‘‘বইগুলো পড়ে আমি নিজেকে হারমায়নি ভাবতাম। কয়েক হাজার মেয়ে অডিশন দিয়েছিল। নিশ্চিত ছিলাম যে আমিই নির্বাচিত হব। বাবা-মা বেশ চিন্তিত ছিলেন, যদি আমি সুযোগ না পাই তা হলে কী করে আমাকে সামলাবেন।’’ প্রথম দুটো ছবির পরিচালক কলম্বাসের কথায়, ‘‘সেটের বাচ্চাগুলোর মধ্যে এমা ছিল সবচেয়ে স্মার্ট আর চটপটে। এমন ভাবে অভিনয় করত যে মনে হত, ওকে দেখেই যেন চরিত্রটা লেখা। রন আর হারমায়নিকে খুঁজে পেতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি।’’ তবে মূল চরিত্র হ্যারি পটারের সন্ধানে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল নির্মাতাদের। শুধু তাঁদের পছন্দ হলেই হবে না, লেখিকা জে কে রোওলিং কম খুঁতখুঁতে নন চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। হ্যারির চরিত্রে সুযোগ পাওয়ার আগে ড্যানিয়েল টুকটাক অভিনয় করে ফেলেছিলেন। বিবিসি-র প্রজেক্ট ‘ডেভিড কপারফিল্ড’-এ তাঁকে দেখেই কলম্বাস বুঝে যান, তিনি তাঁর হ্যারিকে পেয়ে গিয়েছেন।
হ্যারি-হারমায়নি-রনের বন্ধুত্ব ছড়িয়ে গিয়েছিল ড্যানিয়েল-এমা-রুপার্টের মধ্যেও। তবে এমা এখানে বড় রহস্য ফাঁস করেছেন। পর্দায় রনের সঙ্গে হারমায়নির রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গল দেখানো হলেও, এমার ক্রাশ ছিল কাহিনিতে তাঁর চিরশত্রু ড্রেকো ম্যালফয় ওরফে টম ফেলটনের উপরে। ‘‘আমি সেটে গিয়ে আগেই দেখতাম, কোন কোন অভিনেতা আসবে সে দিন। টমের নাম থাকলে ভীষণ খুশি হয়ে যেতাম,’’ স্বীকারোক্তি এমার। তবে টম অবশ্য বললেন, তিনি এমাকে পছন্দ করলেও, বোনের মতোই দেখতেন। তিন বন্ধুর মধ্যে রুপার্টই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। তাঁর একটি মেয়েও হয়েছে। রুপার্টের কথায়, ‘‘এমাকে আমি ভালবাসি, কিন্তু একেবারেই বন্ধুর মতো।’’
রিইউনিয়নে এসে কথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন এমা। বরং ড্যানিয়েল অনেক শান্ত ছিলেন। কেরিয়ারের দিক থেকে এমা খানিক এগিয়ে রয়েছেন বাকিদের তুলনায়। সিনেমার চেয়ে ড্যানিয়েল অনেক বেশি সফল থিয়েটারের মঞ্চে। আইকনিক চরিত্রের একটা ভার থাকে। নিজেদের নামের চেয়েও এঁরা সকলেই চরিত্রের নামে বেশি পরিচিত। হ্যারি পটারের লেগাসি যত দিন থাকবে, সেই ধারাও অব্যাহত থাকবে।
পটার-ভক্তদের ফাঁকি দেওয়া মুশকিল। নির্মাতাদের ছোট্ট ভুল ভক্তদের নজর এড়ায়নি। হারমায়নির ছোটবেলার ছবি দেখাতে গিয়ে তাঁরা এমা ওয়াটসনের বদলে এমা রবার্টসের একটি ছবি দেখিয়ে দেন। ‘হ্যারি পটার’ ফিল্ম-সিরিজ়ের একটা বর্ণময় যাত্রা দেখানো হচ্ছে যেখানে, সেখানে এমন ভুল খানিক চোনা ফেলে দেয় বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy