Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
review

Tonic: এই তো জীবন পরানদা...

‘টনিক’-এ যতখানি বাঙালিয়ানা আছে, ততখানিই আছে আপনজনের ওম। বড়দিনের ছুটি জমাতে এই টনিক অব্যর্থ না হলেও, মোটের উপরে মন্দ নয়!

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:২৮
Share: Save:

টনিক
পরিচালক: অভিজিৎ সেন
অভিনয়: পরান, শকুন্তলা, দেব, সুজন, কনীনিকা
৬.৫/১০

চল্লিশে চালসে, বাহাত্তুরে বুড়োর মতো শব্দ এঁদের অভিধানে থাকে না। শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা এবং ভাল কাজের খিদের কাছে বয়সটা কেবল সংখ্যা হয়ে রয়ে যায়। এ কথা বারবার মনে করিয়ে দেন আশির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো আরব সাগরপারের এক তরুণ— অমিতাভ বচ্চন। তবে আশি পেরিয়ে যাওয়া পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘টনিক’ ছবিতে যা করেছেন, তাতে তাঁকে ‘বাঙালির বচ্চন’ বললে বোধহয় অত্যুক্তি হয় না। নিছক তুলনা নয়, বয়সের সঙ্গে বেড়ে চলা উদ্যম আর অফুরান জীবনীশক্তি এই প্রবীণ অভিনেতাদের কাছ থেকে শেখার মতো। পরানের এক্স ফ্যাক্টরই ‘টনিক’-এ মতো সোজাসাপ্টা ছবিকে অনেকটা এগিয়ে দেয়।

স্ত্রী-ছেলে-বৌমা-নাতনিকে নিয়ে জলধর সেনের (পরান) ভরা পরিবার। তবে মনে শান্তি নেই। বন্ধু-বন্ধুপত্নীর বিবাহবার্ষিকী গঙ্গাবক্ষে। এ দিকে তার বিশেষ দিনে বাড়ির ছাদে আয়োজন করেছে ছেলে (সুজন মুখোপাধ্যায়)! ছেলের শাসনে প্রাণ অতিষ্ঠ বলে স্ত্রীকে (শকুন্তলা বড়ুয়া) নিয়ে ৪৬তম বিবাহবার্ষিকী বাইরে কোথাও পালন করতে চায় জলধর। ট্রাভেল এজেন্সি মারফত বাড়িতে হাজির টনিক (দেব)। স্বপ্নপূরণের যাত্রা শুরু সেখান থেকেই।

পুরোদস্তুর পারিবারিক ছবি বলতে যা বোঝায়, অভিজিৎ সেনের প্রথম ছবি ‘টনিক’-এ তার সব উপাদান মজুত। তার মধ্যে প্রধান, বাঙালির চিরকালীন আবেগ। তা কোথাও একটু উচ্চকিত বটে। চেনা দুঃখ-চেনা সুখ, পরিচিত ঠাট্টা ও তাতে মিশে থাকা রাজনৈতিক খোঁচা, এমনকি নেশায় বেসামাল হওয়া পর্যন্ত সুন্দর ভাবে ধরা হয়েছে চিত্রনাট্যে। সঙ্গে উপভোগ করার মতো শব্দ নিয়ে খেলা, সংলাপের ভাঁজে ভাঁজে। সরলরেখায় চলা ছবির ‘ফিল গুড’ ফ্যাক্টর দর্শককে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।

তবে এই সরলরেখায় রয়েছে কিছু হোঁচটও। জলধর আর তার স্ত্রীর পাসপোর্ট তৈরির সময়ে বৌমা রানি সেনের (কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডে কারচুপি করে বসানো হয় উমারানি সেনের নাম। বিয়ের আগে ও পরে বৌমার একই পদবি, কারচুপি করে শাশুড়িরও সেই পদবিই বসানো— বিষয়টা একটু গোলমেলে ঠেকে। পুরনো পারিবারিক ছবির প্রিন্টে প্রত্যেকের কম বয়সের মুখ সুপারইম্পোজ় করে জুড়ে দেওয়া ক্লোজ়-আপে দেখতে বিসদৃশ লাগে। একাধিক দৃশ্যে বিজ্ঞাপনী প্রচারের বাড়াবাড়িও দৃষ্টিকটু।

বাড়ির পরিচারিকার (পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে কেটারিংয়ের মালিকের (বিশ্বনাথ বসু) দৃষ্টি বিনিময়, রাজনীতি করা পাড়ার দাদার হম্বিতম্বি (অম্বরীশ ভট্টাচার্য), থানার জাঁদরেল বড়বাবুর (রজতাভ দত্ত) স্ত্রীকে ভয় পাওয়া— ক্লিশে হয়ে যাওয়া অনুষঙ্গ ফিরে ফিরে এসেছে। তবু মজার মোড়কে তা দেখতে খারাপ লাগে না। রজতাভর সাদা ইউনিফর্মে জ্বলজ্বল করা নাম ‘আনন্দ কর’ মনে পড়িয়ে দেয় ‘হেমলক সোসাইটি’র নায়কের কথা। সমুদ্র বসু এবং শ্রীপর্ণা রায়ের চরিত্রচিত্রণও খানিক গতে বাঁধা। তনুশ্রী চক্রবর্তী পর্দায় আসতে না আসতেই মিলিয়ে গেলেন। এ ছবির কেন্দ্র জুড়ে দেব ও পরানের উপস্থিতি এতটাই বিস্তৃত যে, বাকি অভিনেতারা ততটা পরিসর পাননি। শকুন্তলা বড়ুয়ার ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। বৌমার চরিত্রে কনীনিকা ততটা সুযোগ না পেলেও, ছেলের চরিত্রে সুজন মুখোপাধ্যায় অল্প দৃশ্যে মাত করেছেন। ছেলের প্রতি বাবার অভিমানের দিকটি গল্পে যতখানি প্রাধান্য পেয়েছে, উল্টো দিকটি যেন ততটা পায়নি। ছেলে-বৌমাকে প্রাথমিক ভাবে ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখানোর ছকের বাইরে বেরোতে পারেনি এ ছবিও।

পরান এবং দেবের রসায়ন ছবির চালিকাশক্তি। কাকা-ভাইপো থেকে পিতা-পুত্রে তাদের সম্পর্কের উত্তরণ মসৃণ পথে এগিয়েছে। আবেগঘন দৃশ্যে, স্মার্টনেসের দাপটে, বিপন্নতার মুহূর্তে পরান এ ছবিতে নটআউট ব্যাটিং করে গিয়েছেন। সুপারস্টার দেবের মাটির কাছাকাছি থাকা সত্তাটিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। সুপ্রিয় দত্তের ক্যামেরা আর ড্রোনে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের মোহময় রূপ ধরা দিয়েছে। দেব পর্দায় আসতেই বেজে ওঠা ‘ও টনিক’-এর সুর তাজা বাতাসের মতো। একটি দৃশ্যে নচিকেতা চক্রবর্তীর কণ্ঠ হৃদয়স্পর্শী।

‘টনিক’-এ যতখানি বাঙালিয়ানা আছে, ততখানিই আছে আপনজনের ওম। বড়দিনের ছুটি জমাতে এই টনিক অব্যর্থ না হলেও, মোটের উপরে মন্দ নয়!

অন্য বিষয়গুলি:

review dev Paran Bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy