এ এমন এক গল্প যা মা-তে শুরু, মা-তেই শেষ। জিৎ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘আড়ি’ ছবির ট্রেলারে এ কথা নিজেই জানিয়েছিলেন অভিনেতা-প্রযোজক যশ দাশগুপ্ত। সে কথা একশো শতাংশ সত্যি। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আড়ি’ ছবিটি শুরু থেকেই দর্শকমনে আগ্রহ জাগিয়েছিল ‘মা’ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ বা ‘গয়নার বাক্স’-এর পর তাঁকে আবার কোনও মনে রাখার মতো চরিত্রে দেখতে চেয়েছিলেন দর্শক। পেয়েছেনও— এ ছবি মৌসুমীময়। কার্যকারণ বদলালেও সুন্দরী নায়িকার মতো চপল স্বভাব তাঁর এখনও বদলায়নি।
এ ছবি শুরু হয় এক বন্দর শহরে। সেখানে মা আর ছেলের জীবনে বয়ে চলা নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনাই ‘আড়ি’ ছবির বিষয়বস্তু। সেখানে স্বচ্ছন্দে থানার বড়বাবুকে ‘কাকু’ বলে ডাকা যায়, বন্ধুর মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজের মৃত মায়ের গয়না বেচে দেওয়া যায় এখনও। প্রবল রেষারেষি বা মারদাঙ্গার ঘনঘটা নেই। বেশ একটা হালকা ছলে, মজার আবরণে মোড়া আগাগোড়া।

এ ছবিতে মা আর ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় ও যশ দাশগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
মা জয়া সেন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। তাঁকে নিয়ে ছেলে জয়ের উদ্বেগ, ভালবাসার সাহচর্য এ ছবির মূল উপজীব্য। মা-ছেলের ভূমিকাতেই দেখা যাচ্ছে মৌসুমী-যশকে। তাঁদের জীবনে হঠাৎই এসে উপস্থিত হন নায়িকা নুসরত, লেখালিখিই যার পেশা। ভালবাসার আকর্ষণে কখন যেন সে ঢুকে পড়ে মা-ছেলের জীবনে। নন গ্ল্যামারাস লুকে নায়িকা নুসরতকে ভারী মিষ্টি লেগেছে। নায়ক যশ একটু যেন জড়োসড়ো। পাশের বাড়ির ছেলেটি বলে তাকে মেনে নিতে একটু বেগ পেতে হয়। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সহজ দুর্দান্ত অভিনয়, রসবোধ— এ ছবির আসল পাওনা। বাংলা ছবিতে তাঁকে আরও দেখতে মন চায়।
তবে এ কথা বলতেই হয়, দুর্বল চিত্রনাট্য সম্বল করেই ছবি এগিয়ে চলে, যেন দিশাহীন। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা ধরে গল্পের মন্দগতি, দিশেহারা চরিত্রেরা দর্শককে কষ্ট দেয়। তবে তারই মধ্যে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক, উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় যথাযথ। বিনোদনের সমস্ত সূত্র মেনেই এগিয়েছিল ছবি। কিন্তু কয়েকটি দৃশ্য বাদ দিলে, খুব একটা দাগ কাটতে পারে না এ ছবি। এমনকি গানের সুরও মোটামুটি। প্রেক্ষাপট অনেক সময়ই অতিনাটকীয় মনে হয়, গ্রন্থনে অযত্নের ছাপ। ছবির গতি সামান্য বাড়লে ভাল হত।

এরই মধ্যে শ্রাবন্তীর আইটেম নাচ এবং ইমন চক্রবর্তীর গান কিছুটা পয়সা উসুল করতেই পারে। ফলে প্রচণ্ড দাবদাহে পিচগলা রাস্তায় ঘর্মাক্ত না হয়ে বন্ধুর হাত ধরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে ঢুকে পড়াই যায়। ঘণ্টা দুয়েকের বিনোদন অন্তত গরম থেকে বাঁচাবে।