বহুল পঠিত, চর্চিত এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত একটি চেনা গল্পের ছাঁচে তৈরি আরও একটি নতুন ছবি দেখতে সিনেমা হলে কেন যাবেন দর্শক? সম্ভবত এই প্রশ্ন মাথায় রেখে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছেন ‘অনুসন্ধান’। মলাট চরিত্রে নির্ভরযোগ্য অভিনেতারা রয়েছেন। উপরন্তু বাংলার রসে জারিত করে বাঙালি দর্শকের জন্য পরিবেশন করা হয়েছে ফ্রেডরিক ড্যুরেনমাটের ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’। দু’ঘণ্টা দশ মিনিটের ইনডোর কোর্টরুম ড্রামায় একঘেয়েমির অবকাশ যৎসামান্য।
ব্রিটেনের এক আদালতের সমন পেয়ে কলকাতার পুজোয় স্ত্রী-ছেলেকে ছেড়ে হঠাৎ বার্মিংহামে পাড়ি দিতে হয় ইন্দ্র চক্রবর্তীকে (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। কর্মসূত্রে তিনি ব্রিটেনেই থাকেন। দুর্যোগের রাতে ইন্দ্র আশ্রয় নেয় এক বাড়িতে, যেখানে পরিবারের চার সদস্য আইনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা আছেন। পরিবারের কর্তা পিনাকী সামন্ত (জয়দীপ মুখোপাধ্যায়), তার স্ত্রী গায়ত্রী (চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়), ছেলে বিনায়ক (ঋদ্ধি সেন) এবং মেয়ে মেধা (প্রিয়াঙ্কা সরকার)। ইন্দ্রের নকল শুনানিতে ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে দাঁড়ায় মেধা এবং প্রসিকিউটরের ভূমিকায় বিনায়ক। বিচারপতির আসনে গায়ত্রী। কিন্তু ইন্দ্রের অপরাধ কী?
কথার জালে আপাত নিরীহ এক ব্যক্তির মুখ থেকে তার অপরাধ স্বীকার করিয়ে নেওয়া—এই শুনানির বৈশিষ্ট্য। সেখানেই পরীক্ষা হয় চিত্রনাট্যের মুনশিয়ানার। কমলেশ্বরের লেখায় উঠে এসেছে বাম আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন থেকে আজকের কর্পোরেট জগতের ইঁদুর দৌড়। ইন্দ্র-অহল্যার পৌরাণিক কাহিনিকে গেঁথে দেওয়া হয়েছে ইন্দ্র-পাপিয়ার (পায়েল সরকারের) পরকীয়া সম্পর্কে। ছবির শেষও বেশ স্মার্ট, ঝকঝকে। এডগার ওয়ালেস এবং মপাসাঁর প্রভাব রয়েছে তাঁর লেখনীতে।
শাশ্বত, চূর্ণী, জয়দীপ, প্রিয়াঙ্কা, ঋদ্ধি—কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করেছেন পাঁচ জনে। এই অঁসম্বল কাস্ট অভিনব। পার্শ্বচরিত্রে পায়েল সরকার এবং প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল সুন্দর। ছোট চরিত্রে কমলেশ্বর তুখোড়।
মাসকয়েক আগে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ বচ্চন এবং ইমরান হাশমি অভিনীত ‘চেহরে’ ছবিটির সঙ্গে এই ছবির চিত্রনাট্যের কোনও মিল নেই। তবে মূল বিষয়গত সাদৃশ্যের জন্য দু’টি ছবির তুলনার পরিসর তৈরি হয়। বাংলা ছবির অঁসম্বল কাস্টে একাধিক মহিলা চরিত্রের উপস্থিতি এবং চিত্রনাট্যে পাঁচ জনকে যথাযোগ্য জায়গা দেওয়ার জন্য হিন্দির চেয়ে এগিয়ে থাকবে ‘অনুসন্ধান’। অমিতাভের ওয়ান-ম্যান শোয়ের চেয়ে এই চিত্রনাট্যে চরিত্রদের ভারসাম্য সুন্দর ভাবে বজায় রাখা হয়েছে। শুনানি চলাকালীন গায়ত্রীর ছবি আঁকা বা পিনাকীর মামলা নথিবদ্ধ করার মতো ডিটেলিং পরিচালকের নিজস্বতার পরিচায়ক। সংক্ষিপ্ত অথচ ইঙ্গিতপূর্ণ আবহসঙ্গীত সাসপেন্সের সঙ্গে মানিয়েছে।
তবে মসৃণ চিত্রনাট্যে কয়েকটি ছোট বিষয় হোঁচটের মতো। শুনানি চলাকালীন মেধা এবং বিনায়ক বেশির ভাগ সময়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোর্টরুমের বদলে বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে চরিত্রদের যেন অন্য ভাবে ব্যস্ত রাখার তাগিদও তৈরি হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তাই ছবির চেয়েও নাটকের সেট বেশি মনে হয়েছে। শুনানির মাঝে বিনায়কের ভেঙে পড়ার কারণ সংলাপে স্পষ্ট করে দেওয়া যেত। মেধার ক্ষেত্রে সোজাসুজি বলা না হলেও, তার পুরুষ-বিদ্বেষের একটি কারণ দর্শক অনুমান করতে পারেন। ‘ভোঁতকা বৌদি’র মতো সংলাপ লিঙ্গবৈষম্যের চেয়েও অপ্রয়োজনীয় বলে আপত্তি রইল।
শেষে এটুকুই বলার, ক্লাসিক গল্পকে সম্যক দৃষ্টিভঙ্গিতে বারবার দেখানো হলেও, তার দর্শক থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy