একটু খ্যাপাটে, উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ অফিসার দর্শকের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। ‘দবং’-এর সলমন খান হোক অথবা ‘সিম্বা’র রণবীর সিংহ— যখনই বড় পর্দায় এসেছেন, দর্শকের উচ্ছ্বাসে ভরে গিয়েছে প্রেক্ষাগৃহ। তাই খানিক সেই ফর্মুলা ধরেই হাঁটতে চেয়েছেন পরিচালক রোশন অ্যান্ড্রুজ়, তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘দেবা’য়।
যদিও ‘দেবা’র নির্মাতারা মানতে নারাজ যে, এই ছবি রোশনেরই পূর্বপরিচালিত মালয়ালম ছবি ‘মুম্বই পুলিশ’-এর রিমেক। তবু যাঁরা ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি দেখেছেন, তাঁরা ‘দেবা’র প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এই ছবির যথেষ্ট মিল পাবেন। ছবির কেন্দ্রে পুলিশ অফিসার দেব আম্বরে (শাহিদ কাপূর)। বন্ধু এসিপি রোহন ডি’সিলভার (পাভেল গুলাটি) খুনের তদন্ত করছে এই চরিত্র। সমাধান সে প্রায় করেই ফেলেছিল, কিন্তু বাদ সাধল একটি দুর্ঘটনা। মাথায় গুরুতর চোট পাওয়ার ফলে আংশিক স্মৃতিভ্রম হল দেবের। ফলে তদন্তের শেষে কোন সমাধানসূত্র মিলেছিল, সেটাও সে বেমালুম ভুলে গেল। ডিসিপি ফারহান খান (প্রবেশ রানা), যাকে দুর্ঘটনা ঘটার ঠিক আগে দেব ফোন করেছিল, সে রোহনের মৃত্যুর তদন্তভার ফের দেবের হাতেই তুলে দেয়। ফারহানের ভরসা, এক বার যখন দেব পেরেছে, সে ঠিক আবার তার প্রিয় বন্ধুর খুনের কিনারা করে উঠতে পারবে।
পরিচালক এখানে দেবের চরিত্রকে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর এক আধুনিক মোড়ক দিতে চেয়েছেন। আর তাই ছবিতে কয়েক বার মুম্বইয়ের ‘দিওয়ার’ খ্যাত অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর মিউরাল পর্দায় ফুটে ওঠে। এ কথা ঠিক, দেশের সব রকম ক্ষমতাতন্ত্রে যে রকম পচন ধরেছে, তাতে সব নিয়ম মেনে তাবড় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া প্রায় অসম্ভব। আর তাই দেব নিজের নিয়ম নিজেই তৈরি করে। পুলিশি কানুন বা কাঠামোর ধার ধারে না বিশেষ। ছবিতে এক সময় দেবের বন্ধু রোহনও বলে, “তুমহারা তরিকা গলদ হ্যায়, পর তুম ইনসান সহি হো।’’

থ্রিলার ছবি এত লম্বা হলে দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য। ছবি: সংগৃহীত।
এখন মুশকিল হল, এই পুরুষতন্ত্রের প্রচার ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে ঠিক কতটা গ্রহণযোগ্য? ছবির এক জায়গায় দেবের বান্ধবী দিয়া (পূজা হেগড়ে) তাকে বলে, “আই লাইক ইওর সাড়ুপন (পাগলামো), ইওর অ্যাঙ্গার ইস্যুস, পর তুমহারে অন্দর এক বচ্চা হ্যায়”– তখন নারী হিসাবে মনে হয়, এই ‘অ্যাঙ্গার ইস্যুস’ যে দিন তার উপর পড়বে, সে দিন দিয়া দেবকে একই রকম ভালবাসতে পারবে তো? এই ধরনের বিষাক্ত পৌরুষ প্রদর্শন ও তার উদ্যাপন গল্পে কত দিন প্রাধান্য পাবে, এই ছবি দেখতে দেখতে সেই প্রশ্নই জাগবে মনে। হয়তো পরিচালক নিজেও এই অনুমান করেছিলেন। তাই সেই দ্বন্দ্বের ফাঁদে পড়ে তিনিও কোনও সমাধানে উপনীত হওয়ার আগেই ছবি শেষ করে দিয়েছেন।
ছবির প্রথমার্ধে কিছু মারপিটের দৃশ্য বাদ দিলে গতি মন্থরই বলা চলে। বরং এর দ্বিতীয়ার্ধে গল্প বেশি প্রাধান্য পায় ও সংযত হয়। ববি-সঞ্জয় ‘মুম্বই পুলিশ’-এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। ‘দেবা’র ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরশাদ সায়েদ, হুসেন দালাল ও সুমিত অরোরা। হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যে কিছু বদল এনেছেন তাঁরা, যা ছবির গল্পকে আরও খেলো করে দিয়েছে। তবে ছবির শেষের টুইস্টে কোনও হেরফের ঘটেনি। যাঁরা মূল ছবিটি দেখেননি, তাঁদের কাছে এই টুইস্ট বেশ চমকপ্রদ হতে পারে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
দেবের চরিত্রে শাহিদ কপূর উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ অফিসারের রুক্ষতা ফুটিয়ে তুলেছেন যথাযথ। মারপিট ও নাচের দৃশ্যে তিনি কতটা দক্ষ, এই ছবিতে তার প্রমাণ মিলবে আবারও। ছবিতে পাভেল গুলাটিকে আরও একটু বেশি সময় পেলে ভাল হত। প্রবেশ রাণাও যথাযথ। কিন্তু পূজা হেগড়ে, আর কুব্রা সাইত অভিনীত দুই নারী চরিত্রের প্রতি গল্পকারেরা এত দায়সারা কেন, তার কোনও উত্তর নেই।
এই ছবির সবচেয়ে ভাল দিক চিত্রগ্রহণ। অমিত রায়ের ক্যামেরায় মুম্বই শহর ‘ম্যাট ফ্রেম’-এ ধরা পড়েছে। মাঝেমধ্যে মনে হবে, গ্রাফিক নভেল হিসাবে এই ছবি আরও জমাটি হতে পারত। এ শ্রীকর প্রসাদের সম্পাদনা আরও পোক্ত হওয়া উচিত ছিল। বিশেষ করে কোনও থ্রিলার ছবি এত লম্বা হলে দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য।
তাই শাহিদ কপূরের ভাল অভিনয় আর চিত্রগ্রহণে মুম্বই শহরের আসল মেজাজ ধরা পড়লেও গল্পের দুর্বলতার কারণে ‘দেবা’ সে ভাবে মনে দাগ কাটতে অক্ষম থেকে গেল।