Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Movie

পাওয়া না-পাওয়ার স্মৃতি নিয়ে, চেনা ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে বাড়তি পাওনা খগেন

‘প্রেম টেম’ ছবিটি খুবই সহজ চলনে এগিয়ে যায়। যে কারণে নদীর ব্যবহার, আবহসঙ্গীতের ব্যবহারকে বাহবা দিতেই হবে।

চেনা গল্পে অচেনা মুখ ‘প্রেম টেম’-এ।

চেনা গল্পে অচেনা মুখ ‘প্রেম টেম’-এ।

শ্রয়ণ চন্দ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:০২
Share: Save:

আমরা কবে কোথায় কাকে হারাব, সে সত্যিই আর ফিরবে, নাকি কোনও দিনই তাকে আর পাওয়া যাবে না, এইটা বুঝতে বুঝতে, কুয়াশায় হাতড়াতে গিয়েই, অর্ধেক জীবন চলে যায়। তার পরও যে আমরা খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারি, এমন নয়। আমরা শুধু অপেক্ষা করি, চিন্তা করি, পথ চেয়ে বসে থাকি। এক সময় তা থামিয়েও দিই। এই প্রতীক্ষায় বসে থাকা বা না থাকা, আশা রাখা বা না রাখা, খুঁজে পাওয়া আর হারিয়ে ফেলার একটা অদ্ভুত দোদুল্যমানতা আছে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রেম টেম’ ছবিতে।

খুব স্বাভাবিক এবং আগে জনপ্রিয় এমন সিনেমার ধারাতে, বহু বার ব্যবহৃত একটা প্রেক্ষাপটে শুরু হয় ছবি। একটি কলেজ ক্যাম্পাস, সেখানে এক গাল দাড়ি নিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করা আপনভোলা গোছের দেখতে, মায়ের সঙ্গে থাকা পাবলোকে কেন্দ্র করেই গল্পের শুরু।

সঙ্গে আছে একেবারে ভিন্ন মেরুতে বাস করা দুই মেয়ে, আরশি আর রাজি। একজন তথাকথিত ‘বাড়ির লক্ষ্মী মেয়ে’, যে বাবা মায়ের কথা শুনে চলে। অন্যদিকে রাজি, যে তার একেবারে উল্টো। সে রাজনীতি করে, তার কথা বলার ধরন, তার সব কিছুর মধ্যে একটা বহির্মুখী ভঙ্গি আছে। পাবলো জড়িয়ে পড়ে আরশির সঙ্গে, যেখানে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়া নিয়ে শুরু হয় কলেজে টানাপড়েন। এখানেই আসে রাজি। পাবলোর সঙ্গে তার পরিচয়, যেই সম্পর্কটা ক্রমশই রাজনীতি থেকে, ক্যাম্পাস থেকে, বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে আরও। পাবলো চায় একসঙ্গে থাকতে। পাবলোর বাড়িতে রাজির সঙ্গে থাকতে আসে তার পোষা কুকুর খগেন। কুকুর ভয় পায় পাবলো। সে যখনই ঘনিষ্ঠ হতে চায় রাজির সঙ্গে, বাধ সাধে খগেন। এই পর্যন্ত আমরা পেয়েছি ছবির ট্রেলার থেকেই। ছবির বাকিটা দর্শকদের জন্য থাক।

সিনেমায় উঠে আসে শহরের অন্য ছবি।

সিনেমায় উঠে আসে শহরের অন্য ছবি।

ছবি জুড়ে হুগলি নদীর ব্যবহার। ফিরে ফিরে এসেছে সাঁকো, নৌকা, নদীর জল, ঘাট। কখনও তা এসেছে নিছক প্রেমের বীজ বোনার কথা নিয়ে, কখনও প্রতীক্ষার প্রতীক, কখনও দিশাহীন মনের প্রতিচ্ছবি বা কখনও মিলনের স্থান হিসেবে। কয়েকটা অত্যন্ত সুন্দর শট দেখে চোখের আরাম হয়েছে। ক্যামেরার পিছনের শুভঙ্কর ভরকে সেই জন্যে কুর্নিশ।

ছবিতে গান থেকে আবহসংগীতের ব্যবহার অত্যন্ত সুন্দর। শান্তনু মৈত্র, অনুপম রায়, প্রসেনের মত শিল্পীরা একটা ছবিতে কাজ করলে, সংগীত ছবিকে যে আরও দর্শকদের কাছে নিয়ে যায়, তারই দৃষ্টান্ত 'প্রেম টেম।'

অনিন্দ্য বরাবরই সাহসী। তাই নতুনদের নিয়ে কাজ করতে একটুও দ্বিধা করেন না। পাবলোর চরিত্রে সৌম্য মুখোপাধ্যায়, রাজির চরিত্রে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় আর আরশির চরিত্রে শ্বেতা মিশ্রর অভিনয় ছবিকে অন্য মাত্রা দেয়। তবে এই ছবির ‘হিরো’ যদি কেউ হয়, তবে সে নিঃসন্দেহে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ভয়েসওভার-সহ খগেন। তাকে নিয়ে বেশি বললে, ছবির অনেকটা বলে দেওয়া হয়ে যাবে। এটুকুই বলা যায়, খগেনের জন্যেই ছবিটি কোথাও গিয়ে আলাদা হয়ে যায় চিরাচরিত ত্রিভুজ প্রেমের গল্প থেকে।

বদলায় প্রেম, বদলায় চাহিদা।

বদলায় প্রেম, বদলায় চাহিদা।

অনেক সময় মনে হয়েছে, ছবির সংলাপ আরও উন্নতমানের হওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছিল নীতিপুলিশির বিষয়টিকে আরও একটু স্পষ্ট এবং দৃঢ়ভাবে সামলানোর। ছবিতে একাধিক বার ঘনিষ্ঠ হওয়ার দৃশ্য নতুন মুখেরা যত্নে সামলেছে।

‘প্রেম টেম’ ছবিটি খুবই সহজ চলনে এগিয়ে যায়। যে কারণে নদী, সংগীত বারবার চরিত্র হয়ে ওঠে। প্রশংসা করতে হবে শেষটুকুর জন্য। ২ ঘণ্টার সামান্য বেশি সময়ের এই ছবি জুড়ে আপনার মুখে একটা হাসি লেগে থাকলে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন প্রেমের মরসুম। এক মিষ্টি সহজ ভালবাসার গল্প। বার বার করে হারিয়ে ফিরে পাওয়ার,থেকে যাওয়ার কথা জানতে ‘প্রেম টেম’ দেখে আসাই যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Movie Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy