কেমন হল সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি সিরিজ় ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’? ছবি: সংগৃহীত।
১৯৯৭ সালের ১৩ জুন। ভিড়ে ঠাসা দিল্লির উপহার সিনেমা হল। হঠাৎই সিনেমা হলে আগুন লাগে। বেরোনোর উপায় না পেয়ে বিষাক্ত ধোঁয়ায় মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। গুরুতর জখম হন ১০৩ জন। ১৯৯৭ সালের সেই মর্মান্তিক ঘটনা ইতিহাসে পরিচিত ‘উপহার ট্র্যাজেডি’ নামে। ঘটনার ২৬ বছর পর সেই ঘটনাকেই ওটিটির পর্দায় জায়গা দিয়েছেন পরিচালক প্রশান্ত নায়ার। নাম ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’।
নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’। অভয় দেওল, রাজশ্রী দেশপাণ্ডে, অনুপম খের, রত্না পাঠক শাহ, আশিস বিদ্যার্থী অভিনীত এই সিরিজ় কেমন হয়েছে, তা জানানোর আগে কয়েকটা তথ্য না দিলেই নয়। সিরিজ়টি তৈরি হয়েছে সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। এ ক্ষেত্রে বাস্তব চরিত্রের নামেই সিরিজ়ের নামকরণ হয়েছে।
১৯৯৭ সালের ১৩ জুন দিল্লির গ্রিন পার্কের উপহার সিনেমা হলে তখন জেপি দত্ত পরিচালিত এবং প্রযোজিত ‘বর্ডার’-এর মুক্তির প্রথম দিনের ম্যাটিনি শো চলছিল। ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ ছবির অভিনেতাদের সংলাপে গম গম করছে। থেকে থেকে হাততালি পড়ছে। বিকাল ৫.১৫টা নাগাদ হঠাৎ করেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওই হলের উষ্ণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। হল ভরে যায় কালো ধোঁয়ায়। দমবন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি! সামনের লেলিহান শিখা দেখে দর্শকের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, আগুন লেগেছে! প্রাণ বাঁচাতে পড়িমড়ি করে দৌ়ড়তে গিয়েও লাভ হল না। হলের নীচের তলার দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। ব্যালকনিতে বসা লোকজন অনেক কষ্টে বাইরে বেরোলেও আগুন থেকে বাঁচতে যে যে দিকে খুশি দৌড়চ্ছে। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। নীচের তলায় থাকা বহু দর্শকের চেষ্টায় দরজার তালা ভাঙা গেলেও বেরোনো হয়নি অনেকেরই। বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জনের। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে আরও ১০৩ জন গুরুতর জখম হন। সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই তৈরি ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’ গত শুক্রবার ১৩ জানুয়ারি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল। সেই ‘১৩’-তেই।
এই সিরিজ় সত্যি কথা বলে, হারানোর কথা বলে, সাহসিকতার কথা বলে, লড়াইয়ের কথা বলে, ধৈর্যের কথা বলে। গল্পের শুরু উপহার সিনেমা হলের ঘটনায় দিল্লির দম্পতি নীলম কৃষ্ণমূর্তি (নীলম) এবং শেখর কৃষ্ণমূর্তি (অভয়)-র কিশোর পুত্র এবং তরুণী কন্যাকে হারানো নিয়ে। সন্তানদের হারিয়ে শোকে কাতর এবং পাথর দম্পতি। এ দরজা ও দরজায় ধাক্কা মেরে দম্পতি বুঝতে পারেন, সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে কেবল সিনেমা হলের দুই মালিকের লোভ এবং কয়েক জন হলকর্মীর গাফিলতির ফলে। ঠিক করেন সন্তানদের ‘খুন’-এর বিচার না পেয়ে তাঁরা থামবেন না। এই ঘটনায় বাকি নিহতদের পরিবারকে সংঘবদ্ধ করে সংগঠন খোলেন দম্পতি। শুরু হয় লড়াই। বছরের পর বছর ধরে সেই মামলা লড়তে গিয়ে চুলে পাক ধরে নীলম এবং শেখরের। মামলা দিল্লি হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। তবু লড়াই থামেনি। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে কী ভাবে ওই দম্পতি বিচার পেয়েছিলেন, সেই গল্পই বলে ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’।
গোটা সিরিজ়ে কোনও দৃশ্য অতিরিক্ত বলে মনে হয়নি। কোনও চরিত্রও অতিরিক্ত বলে মনে হয়নি। বরং রাগ হয়েছে! কী ভাবে মানুষের গাফিলতিতে ৫৯ জনের প্রাণ যেতে পারে। যে রাগ জন্মাতে সাহায্য করেছে নীলমের চরিত্রে রাজশ্রীর অভিনয়। সেই অভিনয় অনবদ্য। মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার মতো। দর্শক অবশ্য আগে থেকেই রাজশ্রীর সঙ্গে পরিচিত। নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘স্যাক্রেড গেমস্’-এ অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির স্ত্রীর ভূমিকায় মাত্র কয়েকটি দৃশ্য অভিনয় করেই নিজেকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই রাজশ্রীর সঙ্গে সেই রাজশ্রীর অনেক তফাত। এই সিরিজ়ে তিনি একাই রাজ করেছেন। বিশেষ করে সন্তানদের মৃত্যুর পর হতাশ এবং অশ্রুসিক্ত নীলমের চুল কেটে নেওয়ার দৃশ্য গায়ে কাঁটা দেয়।
অভয়ের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অভয়কে সাবলীল অভিনতা হিসাবেই চিরকাল দর্শক চেনেন। তাই তাঁর কাছে সব সময় অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। কিন্তু সেই চাহিদা তিনি মেটাতে পারেননি এই সিরিজ়ে। ছোট ছোট চরিত্রে অনুপম, রত্না এবং আশিস নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। ক্যামেরার কাজও ভাল। বরং অতীত এবং বর্তমানের ঘটনা পাশাপাশি দেখানো হয়েছে এ রকম বেশ কয়েকটি দৃশ্য খানিক বিরক্তির উদ্রেক করে। তবে সংলাপ টানটান। দক্ষ পরিচালক হিসাবে আগেই নাম পেয়েছেন প্রশান্ত। তিনি এর আগে যে দু’টি সিনেমা এবং একটি সিরিজ়ের পরিচালনা করেছেন, তা সমালোচকদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সব মিলিয়ে বাস্তবের বুনোটে তৈরি একটি সত্য দেখতে চাইলে সময় পেলেই দেখে নিন সাত এপিসোডের ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy