মায়ের ফ্যাকাশে মুখ! তলপেটে সেঁধিয়ে ওঠা যন্ত্রণা! আর বনবন করতে থাকা চারপাশ আগামী ২৪০ মিনিটের দিক নির্দেশ করে দেয়। পরতে পরতে রহস্যের ঘনায়ন! আর প্লটের জটিল বিন্যাসে গুমরে মরা চরিত্ররা জাত চিনিয়ে দেয় সিরিজের! আর সংশয় থাকে না! আগামী কিছুক্ষণ অস্বস্তিকর হতে চলেছে!
‘মাই’-এর একটি দৃশ্য।
কিছু দিন ধরেই মেয়ে যেন অন্যমনস্ক! কাজে মন নেই! অল্পেতেই বিরক্ত! চোখেমুখে অস্বস্তি!
কিছু হয়েছে?
কেউ কিছু বলেছে? কোন কটু কথা?
মায়ের বারংবার প্রশ্নে অবশেষে মুখ খোলে সুপ্রিয়া। ‘সামথিং হ্যাপেনড!’ আর মুহূর্তে জন্তুর মতো একটা ট্রাক এসে পিষে দেয় সুপ্রিয়ার শরীর! থেঁতলে যায় দেহ! রক্ত ছিটকে লাগে মায়ের মুখে! চির দিনের মতো হারিয়ে যায় না বলা কথারা!
মায়ের ফ্যাকাশে মুখ! তলপেটে সেঁধিয়ে ওঠা যন্ত্রণা! আর বনবন করতে থাকা চারপাশ আগামী ২৪০ মিনিটের দিক নির্দেশ করে দেয়। পরতে পরতে রহস্যের ঘনায়ন! আর প্লটের জটিল বিন্যাসে গুমরে মরা চরিত্ররা জাত চিনিয়ে দেয় সিরিজের! আর সংশয় থাকে না! আগামী কিছুক্ষণ মানসিক যন্ত্রণার ও অস্বস্তিকর হতে চলেছে!
‘মাই’ আটপৌরে, ছিমছাম, এক অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত মায়ের একার লড়াই! যে লড়াই এর শেষ না দেখে মা ক্লান্তিহীন! যে লড়াই এক অতি সাধারণ গৃহবধূকে হিংস্র করে তোলে! খুন্তি নাড়তে নাড়তে কখন যে হাতে রক্ত মেখে ফেলে মা! আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠে নিজেই! তবু ঘাবড়ে যায় না এতটুকু! থামার প্রশ্নই নেই! সত্য হাতের মুঠোয় না আসা পর্যন্ত ‘মাই’ ক্লান্তিহীন! যে কোনও বিন্দু পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত!
‘মাই’ একই সঙ্গে এক আবিষ্কারের গল্প! মৃত্যুর পরে নতুন করে মেয়েকে চেনার এক যাত্রাপথ। ‘মাই’ দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায় আর এক মায়ের কথা! একাকার হয়ে যায় ‘মেমোরিজ ইন মার্চে’র আরতি ও ‘মাই’-এর শিল! সাক্ষী তনওয়ারের মুখে ভেসে ওঠেন দীপ্তি নাভাল!
ছেলে তার সঙ্গে সব কথা ভাগ করে নিত! তবে কেন বলল না একান্ত আপন পুরুষ বন্ধুটির কথা? প্রশ্ন তলপেটে গুলিয়ে উঠলেই চিকচিক করে উঠত আরতির চোখ! ঠিক একই ভাবে ভ্রু কুঁচকে যায় শিলের। কুলকুল করে ঘাম ঝরে! তবে কি সে ভাল মা হয়ে উঠতে পারল না? মা-মেয়ের মধ্যে থেকে গেল অনেকটা দূরত্ব? ছুঁয়ে দেখা হল না পরস্পরকে? নইলে কেন সুপ্রিয়া জানাল না পুরুষ বন্ধুটির কথা? মেয়ের মৃত্যু শুধুই মামুলি দুর্ঘটনা না গভীরে আছে বিরাট ষড়যন্ত্র?
এই প্রশ্নগুলিই তাড়িয়ে বেড়ায়! ছুটিয়ে নিয়ে যায় আঁস্তাকুড়ে, অন্ধগলি, ম্যানহোলের গভীরে অপরাধ জগতের সুড়ঙ্গে! এত দিন পর্যন্ত যার কাজ ছিল ছেলে মেয়ের টিফিন তৈরি করা, যাবতীয় ঘরকন্না, দিন শেষে স্বামীর কপালের ঘাম মুছিয়ে দেওয়া! আজ সেই ‘মাই’ অনায়াসে হাতে তুলে নেয় কাটারি , বন্দুক! প্রাচীর ডিঙিয়ে পৌঁছে যায় শত্রুপক্ষের ডেরায়। মেয়ের মৃত্যুর বদলা নিতে ঠান্ডা মাথায় একের পর এক ফালা ফালা করে দেয় অপরাধীদের শরীর! ‘মাই’ আসলে ভারতীয় নারীর বীররসের উদযাপন! যে শরীরী সক্ষমতায় ও তীক্ষ্ণ মেধাবী মননে পুরুষের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে! পরিস্থিতির দাবি মেনে যে আছড়ে পড়তে পারে ভয়ানক তীব্রতায়! বিভিন্ন রূপে!
‘মাই’ দেখতে দেখতে ভেসে ওঠে ঘরের মায়ের মুখ! মনে পড়ে যায় বহু দিন বাড়ি ফেরা হয় না! প্রশ্বাসের উষ্ণতায় ঝালিয়ে নেওয়া বাকি হাজারো গল্প! আর শরীর জুড়ে জাপটে ধরে অতি পরিচিত ‘মা-মা’ গন্ধের হাহাকার! ‘মাই’ আসলে ভীষণ ব্যক্তিগত এবং আঁকড়ে রাখা একটি সিরিজ!
‘মাই’ এর মেরুদণ্ড নিঃসন্দেহে সাক্ষী তনওয়ার! একা হাতে টেনে নিয়ে চলেন ৬ এপিসোডের দীর্ঘ সিরিজ! সাক্ষী যদি হন মেরুদণ্ড, তবে অস্থিমজ্জা অবশ্যই ওয়ামিকা গাবি! মূক-বধির মেয়ের চরিত্রে বারবার ফ্ল্যাশব্যাকে ঝলসে ওঠেন তিনি! অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় অনন্ত বিধান্তের হিমশীতল দৃষ্টি এবং খল চরিত্র রাইমার শান্ত সমাহিত হিংস্রতার শিরশিরানি! টানটান চিত্রনাট্য এবং প্রতি পর্বে আকর্ষণ ধরে রাখার জন্য অবশ্যই প্রশংসা করতে হয় পরিচালক অতুল মোঙ্গিয়ার। ক্যামেরার বেশ কিছু কৌণিক অবস্থান বেশ উত্তেজনার!
তবে প্রশ্নও থেকে যায় বেশ কিছু! যেমন ক্রিপ্টো কি এবং মেডিক্যাল ট্র্যাফিকিং ছবির দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়েও চিত্রনাট্যের খামতিতে পূর্ণতা পায় না! শীলের অনুপস্থিতির শূন্যতায় স্বামী ইয়াস-কে ঘিরে তৈরি করা সাবপ্লটটি অসম্পূর্ণ! মাঝের কিছু পর্ব অহেতুক দীর্ঘায়িত! তবু স্বীকার করতেই হয় ‘মাই’ এমন এক সিরিজ, যা মুহূর্তে ফুরিয়ে যায় না! শেষ হওয়ার পরে অনেক ক্ষণ থেকে যায় নিজের সঙ্গে! মনে হয় বহু দিন মায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বসে হয় না! কথা বলা হয় না! বলতে ইচ্ছে করে “চল মা, মন খুলে কথা বলা যাক! ঘণ্টার পর ঘণ্টা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy