Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Miss Marvel Season 1

Ms. Marvel: তুমি যাকে খুঁজছ, সে-ও তোমাকে খুঁজছে, সেই হেঁয়ালিতেই আটকে রইল মিস মার্ভেল

‘মিস মার্ভেল’। আমেরিকা প্রবাসী এক পাকিস্তানি কিশোরীর সুপারওম্যান হয়ে ওঠার কাহিনি। কেমন হল সিরিজের প্রথম সিজন?

কেমন হল ‘মিস মার্ভেল’

কেমন হল ‘মিস মার্ভেল’

শুভদীপ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ১৫:৩৮
Share: Save:

কামালা খান। আমেরিকার ষোলো বছরের এক সাধারণ কিশোরী। বাবা-মা, ইউসুফ মুনিবা প্রায় আড়াই দশক আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে বিদেশে পাড়ি দেন। ভাই আমির, আব্বু-আম্মিকে নিয়ে এখন আমেরিকাতেই ছোট্ট পরিবার কামালার। নিজের এলাকার মসজিদের ‘ইমাম আঙ্কল’ ও পরিযায়ী মুসলিমদের বাইরে পাকিস্তানের সঙ্গে সেরকম পরিচয় হয়ে ওঠেনি সেই মেয়ের।

সুপারহিরো ক্যাপ্টেন মার্ভেলের অন্ধ ভক্ত কামালা। মহাজাগতিক যুদ্ধবাজ থ্যানোসকে একা হাতে ঘুঁষি মেরে নক আউট করে দিয়েছিল ক্যাপ্টেন মার্ভেল, সেটা কামালা জেনেছে সুপারহিরো অ্যান্ট ম্যানের ইউটিউব পডকাস্ট থেকে। নিজেকে সুপারওম্যান ভাবতে ভারী ভাল লাগে তার। তার বেস্ট ফ্রেন্ড সহপাঠী ব্রুনো মজাদার সব যন্ত্র বানায়। তবে কিশোরী কন্যের যত অসুবিধে নিজের বাবা-মাকে নিয়েই। এটা কোরো না, ওখানে যেও না-র বাধা নিষেধ যে লেগেই আছে!

দিনভর মার্ভেল-জগতের কল্পনায় ডুবে থাকে কামালা। কখনও মনে হয়, তার গাড়ির পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে সুপারহিরো ক্যাপ্টেন মার্ভেল, কখনও সে নিজেই অ্যাভেঞ্জার্সদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে যুদ্ধে ব্যস্ত। কামালা ক্লাসে বসে ডুডল আঁকে সারা ক্ষণ, মজে থাকে নিজের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে। এ হেন কামালার জীবন বদলে দিল সেই অ্যাভেঞ্জার্সদের নিয়ে এক কমিক কনভেনশন!

বাবা-মা যথারীতি বাধ সেধেছিল। জেদি কামালা ঠিক করে, সে ‘অ্যাভেঞ্জার্স কন’-এ যাবেই! তখনই চিলেকোঠার ঘর থেকে সে হাতে পায় তার নানি-র একটা পুরনো বালা। সেটা সঙ্গে নিয়েই রওনা হয় কামালা। অ্যাভেঞ্জার্স কন-এর স্টেজেও সে ওঠে ক্যাপ্টেন মার্ভেলের পোশাক আর মুখোশ পরে, হাতে সেই বালা। ব্যস, মেয়ের অদ্ভুতুড়ে সব কাণ্ডকারখানার শুরু তখনই। সবেরই কেন্দ্রে সেই বালা! আর কামালা নিজেই হয়ে ওঠে সুপারওম্যান।

নানির কাছ থেকেই কামালা জানতে পারে, তারা জন্মসূত্রে পাকিস্তানি হলেও শিকড় ভারতে। দেশভাগে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল তাদের পরিবারের ঠিকানা। কিশোরী মেয়ে এ-ও জানতে তার নানীর মা, রহস্যময়ী আয়েশা অন্য এক জগতের বাসিন্দা। কৌতূহলী কামালাকে যে জানতেই হবে অতীতের কথা। কী ভাবে তা করবে সেই মেয়ে? এই নিয়েই এগিয়ে চলে সিরিজের কাহিনি। কামালার ভূমিকায় ইমন ভেল্লানি, ব্রুনোর চরিত্রে ম্যাট লিনজ্‌-এর পাশাপাশি ফাওয়াদ খানের ‘হাসান’কে মন্দ লাগে না।

দেশভাগ এ গল্পের এক মুখ্য চরিত্র। দেশভাগের সময়ে ভারত থেকে করাচি যাওয়ার শেষ ট্রেনের দৃশ্যটি অনবদ্য লাগে। উপমহাদেশীয় দেশভাগ, শিকড়ের সন্ধানের প্রেক্ষাপটে হলিউডের কাজ নতুনত্বের আভাস দেয়। আমেরিকার বুকে পাকিস্তানের মানুষদের ঘিরে এমন সুপারওম্যানের কাহিনিও বেশ অন্য রকম স্বাদ এনে দেয়।

কিন্তু গোলমাল হয়ে গেল অন্য একটা জায়গায়। মেকিং-এর খামতি পুরো সিরিজ জুড়েই। এবং বড্ড বেশি করে চোখে পড়ে লেখার মুনশিয়ানার অভাব। ‘কামিং অফ এজ স্টোরি’ হিসাবে শুরু হলেও, একাধিক ঘরানা এবং বিভিন্ন ধরনের গল্পকে এক সুতোয় গাঁথতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন মরক্কোর পরিচালক জুটি আদিল এল আরবি এবং বিলাল ফাল্লাহ। মিস মার্ভেল চরিত্রটি আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, স্পাইডারম্যানের মতন জনপ্রিয় না হওয়ায় আরও অনেক বেশি টানটান চিত্রনাট্যের প্রয়োজন ছিল। মজবুত চিত্রনাট্যের অভাবে ইমারতটা পাকা হতে গিয়েও হল না। এ ছাড়াও অনেকগুলো দৃশ্যে হরেক গল্পের সুতো বুনেও কোনওটারই ঠিকমতো উত্তর দেয় না এ সিরিজ। ফলে ‘মার্ভেল’-এর গল্প ঘিরে দর্শকের যে ধরনের প্রত্যাশা থাকে, তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারে না মিস মার্ভেল সিরিজের এই প্রথম সিজন। সিরিজ জুড়ে প্রচুর পুরনো ও নতুন হিন্দি গানের ব্যবহার ভারতীয় দর্শকদের কাছে আকর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়াও একটি ছোট্ট চরিত্রে ফারহান আখতারও দর্শকদের নজর কেড়েছেন। এইটুকুই যা প্রাপ্তি।

কামালার নানির সেই বালায় একটি লাইন লেখা ছিল। পাকিস্তানে পৌঁছে কামালা জানতে পারে, সেই লেখার অর্থ ‘তুমি যা খুঁজছ, তা তোমাকেও খুঁজছে’। কী খুঁজছে কামালা? কে-ই বা তাকে খুঁজছে? কামালার অভিযান তা নিয়েই। এবং শেষমেশ যে প্রশ্নগুলোর উত্তর অধরাই রেখে দেয় সিরিজ। ‘মিস মার্ভেল’ তাই আক্ষরিক অর্থে কামালার বালার সেই হেঁয়ালিই হয়ে ওঠে যেন!

অন্য বিষয়গুলি:

Miss Marvel Season 1 Review TV series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy