থাপ্পড় ছবির একটি দৃশ্য।
থাপ্পড়
পরিচালক: অনুভব সিংহ
অভিনয়: তাপসী পান্নু, পাভেল গুলাটি, দিয়া মির্জ়া
৭.৫/১০
না , সেই থাপ্পড়টার কথা বলছি না, ছবিটি শুরু হওয়ার আধঘণ্টা পার করে যেটি অমৃতার গালে এসে পড়েছিল। কোন থাপ্পড়ের কথা বলছি, তা জানতে গেলে ছবিটা শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে।
ছবির ট্রেলার দেখে প্রথম থাপ্পড়টির বিষয়ে নিশ্চয়ই এত দিনে জেনে গিয়েছেন। একটি আনন্দ-সন্ধ্যায়, এক ঘর আত্মীয়বন্ধুর সামনে, স্ত্রীর গালে স্বামীর একটা থাপ্পড়। কিন্তু শুধুই কি একটা থাপ্পড়? ‘গৃহবধূ’ অমৃতার মুখ দিয়ে পরিচালক অনুভব সিংহের এই প্রশ্ন শুধু দাম্পত্য নয়, আমরা যে-ভাবে আমাদের সন্তানদের বড় করি, যা যা শিখিয়ে তাদের ‘মানুষ’ করার চেষ্টা করি, সব কিছু সম্পর্কেই নতুন করে ভাবায়।
তাঁর আগের দু’টি ছবি ‘মুল্ক’ এবং ‘আর্টিকল ১৫’-এ বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন অনুভব। অস্বস্তি ছিল, কিন্তু তাই থেকে উত্তরণের দিশা ছিল না। ‘থাপ্পড়’-এ আছে। এই উত্তরণ অন্যায়কে মেনে নিয়ে নয়, চোখে ঠুলি পরে নয়। নিজেকে পাল্টে, বা অন্তত পাল্টানো প্রয়োজন, এই আত্মসমীক্ষা দিয়ে।
প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, ছবিটি ধরে রাখার দায়িত্ব তাপসী পন্নুর কাঁধে দেওয়া হলেও তাঁর সহ-অভিনেতারা সকলেই দুর্দান্ত। অমৃতার স্বামী বিক্রমের চরিত্রে পাভেল গুলাটি, অমৃতার বাবা কুমুদ মিশ্র, প্রতিবেশী দিয়া মির্জা, অমৃতার শাশুড়ি তনভি আজ়মি, অমৃতার মা রত্না পাঠক শাহ— সবাই ছোট ছোট চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে বলতে হয় বিক্রমের আইনজীবীর চরিত্রে রাম কপূরের কথা। মাত্র চারটি দৃশ্য, তাতেই অনবদ্য রাম।
তাপসী যে দক্ষ অভিনেতা, তা নতুন করে আর বলার দরকার নেই। ছবিতে সংলাপ বেশ কম। তারই মধ্যে ছবির শেষ দিকে শাশুড়ির পায়ের কাছে বসে তাপসীর একটা দীর্ঘ স্বগোতক্তি শুনে মনে হল, স্বগতোক্তি তো এ রকমই হওয়ার কথা! চাপা, নীচু তারে বাঁধা, কিন্তু প্রতিটি শব্দের মধ্যে দিয়ে দুঃখ, রাগ আর হতাশা বিন্দু বিন্দু ঝরে পড়ছে। তাপসী বেশি দাগ কেটে যান ছবির সেই সব অংশে, যেখানে কোনও সংলাপ নেই, কথা বলছে শুধু তাঁর চোখ। বিশেষ ভাবে বলতেই হয় একটি দৃশ্যের কথা। বিবাহবিচ্ছেদের খুঁটিনাটি নিয়ে চাপান-উতোর চলছে দুই আইনজীবীর। অমৃতার কানে আসছে, তাঁর স্বামী তাঁর নামে কী কী মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। কিছু বলছেন না অমৃতা। শুধু মাঝেমধ্যে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছেন। সেই চাহনিতে প্রশ্ন— ‘তুমি আমার সম্পর্কে এ রকম বলতে পারলে!’ আর অনেকখানি দুঃখ। আর একটি দৃশ্যও মনে দাগ কাটে। আগের সন্ধেতে স্বামীর চড় খেয়েছেন অমৃতা। স্বামী অবলীলায় ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু সারারাত ঘুম আসেনি অমৃতার। ভোর হতে না হতেই বাড়ির আসবাবপত্র গোছাতে শুরু করে দেন তিনি। পার্টির সময়ে সেগুলো এ-দিক ও-দিক সরিয়ে রাখা হয়েছিল। পর্দায় তখন শুধু সোফা আর চোয়ার সরানোর ঘড়ঘড় শব্দ। আর ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকা অমৃতা। আসবাবপত্র তো নিজেদের জায়গাতে ফিরে যাবে। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক? আশার কথা, কুশলী পরিচালকের হাতে পড়ে ছবিটি কখনওই নারী-বনাম-পুরুষ হয়ে ওঠে না। তবে পরিচালক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন গৃহ-পরিচারিকা হন, বা হাইপ্রোফাইল আইনজীবী, পুরুষতন্ত্রের থাপ্পড় পড়ছে সকলের গালেই।
ছবিটি দেখতে দেখতে ১২৭ বছর আগে লেখা একটা গল্পের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাস্তি’। সেই গল্পে স্বামীর কাছে মার খায়নি স্ত্রী, অপমান ও সম্মানহানি এসেছিল অন্য রাস্তা ধরে। এক লহমায় ভেঙে গিয়েছিল ভালবাসার সম্পর্ক আর বিশ্বাসের ভিত। যা বুঝতে পেরে কিশোরী গ্রাম্য বধূ চন্দরা শুধু বলেছিল— মরণ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy