ট্রিপল আর ছবির একটি দৃশ্য।
আমেরিকা বলতে আজ যে দেশটাকে বোঝায়, তার নিজস্ব পুরাণ নেই। লোকমুখে প্রচলিত, বিভিন্ন সুপারহিরো ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির গল্পগাথা দিয়ে তারা লিখে চলেছে নিজেদের ‘মিথলজি’। ভারতের পুরাণ আছে, আছে ইতিহাস এবং এক বৈচিত্রপূর্ণ বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি। দক্ষিণী পরিচালক এস এস রাজামৌলী দেশের সম্পদকে বানিয়ে নিয়েছেন তাঁর সিনেম্যাটিক ক্যানভাসের ঐশ্বর্য। ‘বাহুবলী’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির পরে নতুন ছবি ‘ট্রিপল আর’-এ তিনি ফের লিখেছেন ভারতীয় সুপারহিরোদের জয়গাথা। তবে এ বার নিখাদ ফ্যান্টাসি নয়। তার সঙ্গে মিশিয়েছেন দেশের পরাধীনতার ইতিহাস, পুরাণ এবং দক্ষিণী অস্মিতা।
ওটিটিনির্ভর যুগে দর্শকের ধৈর্য ধরে রাখার জন্য প্রযোজকেরা ভেবে কূল পান না। সেখানে তিন ঘণ্টার ফ্যান্টাসি ড্রামাকে সিনেমা হলে রিলিজ় করিয়েছেন পরিচালক। আঞ্চলিকতার গণ্ডি আগেই ভেঙেছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, অতিমারি-ধ্বস্ত সময়েও তাঁর ছবির জন্য ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে দর্শক হলে আসবেন। পরিচালকের চোখ দিয়ে দেখবেন তাঁর পছন্দের দুই নায়ক রাম চরণ এবং এনটি রামা রাও জুনিয়রকে।
ট্রিপল আর
পরিচালক: এস এস রাজামৌলী
অভিনয়: রাম, এনটি রামা রাও, অজয়, আলিয়া, রে, অ্যালিসন
৭/১০
ছবির নামে রয়েছে ইংরেজি অক্ষর ‘আর’ তিন বার। প্রথম ‘আর’-এর উৎস ‘দ্য স্টোরি’। ১৯২০ সালের প্রাক্-স্বাধীন দেশের আদিলাবাদের জঙ্গল থেকে এক আদিম জনজাতির কিশোরীকে তুলে নিয়ে যায় ব্রিটিশ গভর্নর স্কট (রে স্টিভেনসন) এবং লেডি স্কট (অ্যালিসন ডুডি)। মেয়েটির মা বাধা দিতে আসলে গাছের গুঁড়ি দিয়ে সপাট আঘাত করা হয় তার মাথায়। দ্বিতীয় ‘আর’-এর নেপথ্যে ‘দ্য ফায়ার’। লালা লাজপত রায়কে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে উত্তাল তৎকালীন দিল্লি। উন্মত্ত জনতার মধ্য থেকে একজনকে তার পায়ের কাছে হাজির করতে বলে ব্রিটিশ আধিকারিক। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত সীতারাম রাজু ওরফে রাম (রাম চরণ) একাই পাঁচশো জনের সঙ্গে লড়ে সে অসাধ্য সাধন করে। এবং তৃতীয় ‘আর’-এর নেপথ্যে ‘ওয়াটার’। জলের উপরে একটি দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্যে প্রথম সাক্ষাৎ ছবির দুই মহানায়ক রাম এবং কোমারাম ভীমের (এনটি রামা রাও জুনিয়র)।
রাজামৌলী পর্দায় যা দেখাচ্ছেন, তা নতুন নয়। কিন্তু যে ভাবে তিনি দেখাচ্ছেন, তা বড় পর্দার জন্য আদর্শ। দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে অসামান্য সেট। যে দৃশ্যে দু’টি চরিত্র সাধারণ কথা বলছে, সেখানেও সিনেপ্রেমীদের নজর কেড়ে নেবে চরিত্রদের চারপাশের প্রোডাকশন ডিজ়াইন। ছবির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে অ্যাকশন। সেই ‘স্পেকট্যাকল’ থ্রি ডি চশমা এঁটে দেখার মতো! বাঘের সঙ্গে মানুষের লড়াই, বাঘে-মানুষে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চোখের সামনে, আগুনের ঝলকানিতে ভেসে যাচ্ছে পর্দা, তার ফাঁক দিয়ে এক ঝলক ধনুকধারী রামের বেশে রাম চরণ!
এই পরিচালকের দুনিয়ায় গল্পের চেয়েও বড় ভিসুয়াল। গল্প যেখানে টানটান নয়, সেখানে শুরু হয়ে যাচ্ছে দুই মহারথীর দ্বৈরথ। ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে লড়াইয়ে ভীমের কাঁধে চড়ে রাম চালাচ্ছে তির-ধনুক! তিরের মুখে বাঁধা বারুদ! এই ছবিগুলির মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধ বা নেশন-বিল্ডিংয়ের দায়িত্বও পালন করেন রাজামৌলী। অক্ষয়কুমার বা ভিকি কৌশলের মতো বলিউড স্টাইলে নয়, বরং তাঁর স্বকীয়তার ছাপ রেখে। প্রতিশোধস্পৃহা, ভ্রাতৃত্ব, প্রেম, পারিবারিক বন্ধনের মতো বিষয় তাঁর অন্য ছবির মতো এ ছবিতেও রয়েছে। দেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে আর্য-অনার্যদের (আর্য দেবতা রাম এবং দ্রাবিড় গোন্ড উপজাতির প্রতিনিধি ভীম) এক সারিতে বসিয়ে মানবতার বার্তা দিয়েছেন পরিচালক।
বড় পর্দায় রাম চরণ এবং এনটি রামা রাও জুনিয়রকে একসঙ্গে দেখতে দারুণ লেগেছে। তাঁরা যেন পরিচালকের ভাবনার যোগ্য সারথি। রামের বাগ্দত্তা সীতার চরিত্রে আলিয়া ভট্ট। অতিথি শিল্পী হিসেবে রয়েছেন তিনি। রামের বাবার চরিত্রে অজয় দেবগণ। আলিয়ার চেয়ে তাঁর স্ক্রিন প্রেজ়েন্স খানিক বেশি। এ ছাড়া ব্রিটিশ চরিত্রে রয়েছেন কিছু শিল্পী।
এম এম কিরাবাণীর সঙ্গীত, কে কে সেনথিল কুমারের ক্যামেরা, সাবু সিরিলের প্রোডাকশন ডিজ়াইন এবং ৮৫ জনের টিমের ভিসুয়াল এফেক্টস ছাড়া এই ক্যানভাস অসম্পূর্ণ!
বিভিন্ন মাপের পরিচালক বিভিন্ন ভাবে তৈরি করেন ছবির জাঁকজমক। ওটিটির বাজারে তা কতটা চলবে, হলফ করে কেউ বলতে পারেন না। তবু ঝুঁকি নিয়েও ঘোড়া ছোটাচ্ছেন দাক্ষিণাত্যের নায়ক-নায়িকারা, ছবির সবচেয়ে বড় ‘আর’ রাজামৌলী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy