সাম্প্রতিক সময়ে দাঁড়িয়ে পাল্টে যাওয়া পরিবারের সংজ্ঞা, সম্পর্কের আঙ্গিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে বলিউড। তাতেই আর একটি সংযোজন অভিষেক জৈনের ‘হম দো হমারে দো’। শক্তিশালী সব অভিনেতাকে নিয়ে তৈরি এই ওটিটি ছবিটিতে মনে রাখার মতো উপাদান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অভিনেতাদের নামে চোখ বুলিয়ে ছবিটি দেখতে বসলেও হতাশ করতে পারে এর চিত্রনাট্য। প্রায় অসম্ভব, অলীক কল্পনার ফ্যামিলি ড্রামাও মনোগ্রাহী হয়ে উঠতে পারে সেলুলয়েডে তার যথাযথ প্রয়োগে। এ ছবি পিছিয়ে পড়েছে ঠিক সেই জায়গাতেই।
এক অনাথের কাছে পরিবারের গুরুত্ব কতখানি, ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারানো একজন পরিবারের সাহচর্যের জন্য কতটা উন্মুখ— এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে এক ‘নকল’ পরিবারের ধারণা। যার উপরে তৈরি হয় নায়ক-নায়িকার সম্পর্ক, কথাবার্তা গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। শুধু দর্শকই নন, একটা সময়ের পরে ছবির চরিত্ররাও বুঝতে পারে, নকল মা-বাবাকে সামনে দাঁড় করিয়ে বিয়ের কথা এগোতে পারে না। হাটে হাঁড়ি ভাঙে অবধারিত ভাবে বিয়ের বাসরে। শেষটায় গিয়ে প্রত্যাশিত সমাধান, অসৎ পন্থার আড়ালে সৎ উদ্দেশ্যের জিত, নায়ক-নায়িকার মিলন।
পরেশ রাওয়াল এবং রত্না পাঠক শাহের মতো দুই বলিষ্ঠ অভিনেতাকে নেওয়া হয়েছে ‘নকল’ বাবা-মায়ের চরিত্রে। তাদের প্রেম যৌবনে পরিণতি পায়নি, দ্বিতীয় ইনিংসে সুযোগ পেয়ে তারাও নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখে। রাজকুমার রাও-কৃতী শ্যানন (ধ্রুব এবং অন্যা) নায়ক-নায়িকা হলেও দর্শককে ধরে রাখতে পরেশ-রত্নার রসায়ন জরুরি ছিল ছবিতে। তবে তাঁদের মতো অভিনেতারও বিশেষ কিছু করার ছিল না। অপারশক্তি খুরানা এখানেও নায়কের বেস্ট ফ্রেন্ড। তাঁর চরিত্রচিত্রণ একঘেয়ে মনে হয়। মনু ঋষি চড্ডাকে নায়িকার বাবার চরিত্রে বেশ ভাল লেগেছে। তুলনায় মায়ের ভূমিকায় প্রাচী শাহ পাণ্ড্যকে ততটা জায়গা দেওয়া হয়নি।
সত্যি আর সাজানো দুনিয়ার মধ্যে দোলাচলে থাকে রাজকুমার রাওয়ের চরিত্রটি। কখনও স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী উদ্যোগপতি, কখনও আবার হাফসোল খাওয়া ব্যর্থ প্রেমিক— রাজকুমারের এমন অবতারের সঙ্গে দর্শক পূর্বপরিচিত। এ ছবি শেষ হওয়ার পরে মনে হতে পারে, চিত্রনাট্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া দরকার তাঁর। ধ্রুব-অন্যার প্রেম জমে ওঠার আগেই পরিবার-পরিকল্পনা ঢুকে পড়ে ছবিতে। ফলে দু’জনের মধ্যকার মূহূর্ত নির্মাণেও ফাঁক রয়ে গিয়েছে।
কৃতীর চরিত্রও চেনা, একমুখী। ফর্মুলার বাইরে যায় না কেউ। এমনকি ফর্মুলা মেনে ছবির শেষে নায়িকার জন্য আনা হয় বোকা বোকা একটি সম্বন্ধও। যে হবু বরের সঙ্গে আলাপ হতেই নায়িকা বুঝতে পারে, ভালয় ভালয় নায়কের কাছে ফিরে যাওয়াতেই মঙ্গল।
ছবির সংলাপে উপদেশ ও সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা এত জোরালো যে, তা বিরক্তির উদ্রেক করে। গল্পের ধীর গতিও ততোধিক ক্লান্তিকর। গান রয়েছে কয়েকটি, শেষে আইটেম সংও। কোনওটিই মনে রাখার মতো নয়। ক্যামেরা বেশির ভাগ সময়ে হয় সাজানো গোছানো অফিস, অথবা তার চেয়েও বেশি সাজানো ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকেছে।
ভাবনায় অভিনবত্ব থাকলেও খেই হারিয়ে ফেলে মাঠে মারা গিয়েছে ‘হম দো হমারা দো’র প্ল্যানটি। প্লটের মতোই ছবিটাও যে আসলে বড্ড সাজানো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy