‘ক্যাবিনেট অফ কিউরিয়সিটিস’ দেখবেন কি? ছবি: সংগৃহীত।
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য— ষড়রিপুগুলি মানুষ খুব যত্ন করে গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখেন। যেন আলমারির এক একটা তাকে কাগজের মোড়কে লুকিয়ে রাখা। মোড়ক খুললেই তা ‘ভ্যাম্পায়ার’-এর মতো দাঁত বার করে কামড় বসিয়ে দেবে গলায়। ব্যস, তৎক্ষণাৎ মৃত্যু। নিজেদের ষড়রিপু কখন যে ভয়ের কারণ হয়ে কুয়োর অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায় তা বোঝা মুশকিল। গিলেরমো দেল তোরো হ্যালোইন উপলক্ষে এমনই একটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে হাজির হয়েছেন নেটফ্লিক্স প্ল্যাটফর্মে— ‘ক্যাবিনেট অফ কিউরিয়সিটিস’। আটটি স্বাদের গল্প নিয়ে আট এপিসোডের এই সিরিজ। প্রতিটি গল্পই আলাদা করে দর্শককে ভাবাতে বাধ্য করে, মনে প্রশ্ন তোলে। মানুষের রিপুগুলিই কি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর, প্রতিটি এপিসোডের শেষে যেন এই প্রশ্নই তাড়া করে বেড়াবে। আটটি পর্বের মধ্যে মাত্র ২টি এপিসোডের গল্পকার গিলেরমো দেল তোরো। বাকি ৬টি পর্বের গল্প এবং পরিচালককে বাছাই করে নিয়েছিলেন তিনিই। প্রতিটি পরিচালক হলিউডে হরর এবং ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবি তৈরি করে জনপ্রিয়।
সিরিজের কোনও পর্ব এইচপি লভক্রাফটের গল্পের উপর ভিত্তি করে বানানো, আবার কোনও পর্ব গিলেরমো দেল তোরোর লেখা গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সাধারণত, হরর ঘরানার ছবি বা ওয়েব সিরিজে সাউন্ড এফেক্টের মাধ্যমে দর্শককে চমকে দেওয়ার একটা রীতি রয়েছে। কিন্তু এই সিরিজে তা পাওয়া যাবে না। বরং, চিত্রনাট্যের দিকেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিটি পর্বে। প্রতিটি গল্পে ‘ডেমন’ বা প্রেতাত্মার উপস্থিতি থাকলেও সে দিকে গল্পের চরিত্রগুলি নিজেদের টানেই এগিয়েছে। কখনও বড়লোক হওয়ার লোভে, কখনও রূপসী হওয়ার ইচ্ছায়, কখনও খ্যাতির আশায়, আবার কখনও পুরনো স্মৃতির মায়া কাটাতে না পেরে চরিত্রগুলি নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েছে অন্ধকারে।
তবে, প্রতিটি গল্পেই যেন হরর ঘরানার চেয়ে ‘ডার্ক’ ফ্যান্টাসির ছাপ বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফ্যান্টাসি ঘরানা মানেই গিলেরমো দেল তোরোকে চোখ বুজে ভরসা করা যায়। ‘দ্য শেপ অফ ওয়াটার’, ‘হেলবয়’, ‘হবিট’ ফিল্ম সিরিজের মাধ্যমে বার বার দর্শক সে প্রমাণ পেয়েছে। কিন্তু এই ওয়েব সিরিজ কি গিলেরমো দেল তোরোর ছোঁয়ায় সেই গণ্ডি টপকাতে পারল?
প্রথম পর্ব ‘লট ৩৬’-এর নির্মাতা গিলেরমো নভারো। গিলেরমো দেল তোরোর সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করেছেন বহু ছবিতে। পরিচালনার দিকে নজর দিতে গিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির দিকে নজর দিতে পারেননি তিনি। আগের কাজগুলির সঙ্গে তুলনা করলে এই পার্থক্য খুব সহজেই চোখে পড়বে। প্রথম পর্বের গল্পটিও মনে থাকার মতো নয়। এই পর্বটি গিলেরমো দেল তোরোর লেখা গল্পের উপর ভিত্তি করে বানানো।
দ্বিতীয় পর্ব দেখে ভয়ের উদ্রেক না হলেও একটা মানুষ লোভের বশে কত দূর যেতে পারে তা খুব সুন্দর করে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হরর ঘরানার ছবি ‘দ্য এম্পটি ম্যান’ ছবির পরিচালক ডেভিড প্রায়র এই ওয়েব সিরিজের তৃতীয় পর্ব পরিচালনা করেছেন। এই পর্বটি ডিস্টার্বিং বটে। কিন্তু এই পর্বটিও মনে রাখার মতো নয়।
তবে, চতুর্থ পর্ব ‘দ্য আউটসাইড’ ডিস্টার্বিং হলেও গল্পটি দুর্দান্ত। কেট মিকুচির অসামান্য অভিনয় এই গল্পটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। কিথ থমাসের ‘দ্য ভিজিল’ ছবিটি বহুল প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এই ওয়েব সিরিজের পঞ্চম পর্বের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কিথ। এখানেও একদম নিরাশ করেননি তিনি। গল্পের শেষ পর্যন্ত চমক রয়েছে এই পর্বে।
ষষ্ঠ পর্বে অভিনয় করেছেন রুপার্ট গ্রিন্ট, হ্যারি পটারের সেই বিখ্যাত ‘রন’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে অভিনয়ে কতটা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন, তা এই পর্বটি দেখলে বোঝা যায়। হরর ঘরানার গল্পের দিক থেকে বিচার করলে এই পর্বের গল্পটি খুব একটা মন্দ নয়। কিন্তু সপ্তম পর্ব এই ওয়েব সিরিজের বাকি পর্বের চেয়ে একদম আলাদা। ডার্ক ড্রামার ছোঁয়া রয়েছে এই গল্পে। তবে, শেষ পর্বের কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয়। এই এপিসোডটি গিলেরমো দেল তোরোর লেখা গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। কিন্তু পর্দায় এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দেখে পর্বের শেষে মন ভারী হয়ে যায়। সাউন্ড এফেক্টও আলাদা করে প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রতিটি গল্পের শুরুতে গিলেরমো দেল তোরো সেই এপিসোডের গল্প সম্পর্কে হালকা আভাস দিয়েছেন। শুরুর এই মুহূর্তগুলি যেন প্রতিটি গল্পকে নয়া রূপ দিয়েছে।
কিন্তু সব শেষে হরর ডার্ক ফ্যান্টাসি ঘরানার এই পাঁচমিশালি রান্না ভাল হল কি? যাঁরা শুধু মাত্র ভয় পাওয়ার জন্য এই ওয়েব সিরিজটি দেখতে বসবেন, তাঁদের বেশ হতাশ হবেন। পুরো ওয়েব সিরিজ জুড়ে ভয়ে চমকে ওঠার মতো একটিও দৃশ্য নেই। আবার একটানা ভয় পেয়ে গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো অবস্থাও হবে না। তবে, অন্য স্বাদের গল্প যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের এই ওয়েব সিরিজটি বেশ মনে ধরবে। গল্পই এই ওয়েব সিরিজের প্রতিটি পর্বের মূল আকর্ষণ। গল্পের টানেই এক নিশ্বাসে শেষ করে দেওয়া যেতে পারে ‘ক্যাবিনেট অফ কিউরিয়সিটিস’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy