Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Chabiyal

ছবিতে কম পড়ল রং

কোনও কোনও চরিত্রের অভিনয় কখনও চড়া দাগের, কখনও আড়ষ্ট। ‘সিঁথির সিঁদুর, চেটে গেল ইঁদুর’-মার্কা কমেডিও বেশ চড়া। হাস্যকৌতুকের আবহসঙ্গীত বাংলা সিরিয়ালসুলভ।

সূর্য্য দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১১
Share: Save:

বাড়ির গা-ঘেঁষে মৃত্যুর আনাগোনা। মৃতের সঙ্গেই দিনযাপন। ধূসর পৃথিবীতে ক্ষয়িষ্ণু হয় আস্থা, ভালবাসা। চার-দেওয়াল তোলে মন। শেষ আশ্রয় কি ওই মৃতের স্তূপ?

হাবল (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) হয়তো উত্তর জানে। তার ছেলেবেলার গুরু কনকদা প্রেমে ঘা খেয়ে ছবি তোলাই ছেড়ে দিয়েছিল। নিজের ক্যামেরাটা দিয়ে গিয়েছিল হাবলকে। এক কালে বিয়ের ছবি তোলা হাবল এখন শ্মশানে মৃতদেহের ছবি তোলে। নিজের ‘শ্মশানকালী স্টুডিয়ো’, অ্যাসিস্ট্যান্ট বিলে, দিনভর তোলা ‘বডি’-র ছবি আর সন্ধেয় বন্ধুদের আড্ডায় দিশি মদের ধুনকি মিলিয়ে চলে যাচ্ছিল দিব্যি। হঠাৎ সংসারে লাবণ্য (শ্রাবন্তী) এল। হাবল পাল্টে গেল। সবাই সব বুঝল। কিন্তু হাবল নিজে বুঝল কি?

ছবিয়াল
পরিচালনা: মানস বসু
অভিনয়: শাশ্বত, শ্রাবন্তী
৫.৫/১০

হাবলের মনের গতিপথকেই ধরতে চেয়েছে মানস বসু পরিচালিত ‘ছবিয়াল’। প্রত্যাশা মতোই শাশ্বত মন ভরিয়েছেন। চিত্রনাট্যের সাহায্য যতটুকু পেয়েছেন, কখনও কখনও তারও ঊর্ধ্বে উঠে হাবলকে প্রাণ দিয়েছেন— সঙ্কটে, প্রেমে, নেশায়, ফ্রেমবন্দি বেঁচে থাকায়। তাঁর ও শ্রাবন্তীর জুটি এই প্রথম। কিন্তু ‘স্বপ্নের মতো যাতায়াতের’ একমাত্রিক অভিনয় ছাড়া শ্রাবন্তীর বিশেষ কিছু করার নেই এই ছবিতে। ঠিক যেমন নেই জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ হাবলের বন্ধু-চরিত্রের শিল্পীদের। একটি বন্ধুর কণ্ঠ খরাজ মুখোপাধ্যায়ের। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ডাবিং অন্য অভিনেতাকে দিয়ে করানোর অজস্র উদাহরণ রয়েছে। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সকালে দোরগোড়ায় চা পৌঁছে দেওয়া, সন্ধেয় নেশা করতে বসা, বিধ্বস্ত হাবলের পাশে দাঁড়ানোর মতো কিছু খণ্ডদৃশ্য ছাড়া চরিত্রগুলো সে ভাবে পূর্ণতা পেল না। প্রবল অসহায়তায় এক বন্ধু যখন হাবলকে মেরেই বসছে, তখন ‘‘ও আমায় মারল!’’ বলে হাবল ঠোঁট ফোলাচ্ছে, চোখের জল ফেলছে বন্ধু। হয়তো আরও গভীর হতে পারত এই দৃশ্য। মোবাইল ক্যামেরার বদান্যতায় হাবলের তেমন খদ্দের জুটছে না। অথচ পরক্ষণেই জানা যাচ্ছে, সকাল থেকে এগারোটা ‘পার্টি’ পেয়েছে সে। তোলপাড় মন নিয়ে হাবল দিদির বাড়ি গেল। কিন্তু পরের দৃশ্যে সে ফের নিজের বাড়িতে। ক্লাইম্যাক্সে উত্তরণও কিছুটা আচমকা।

হাবলের অ্যাসিস্ট্যান্ট বিলে-কে বেশ লাগে। তবে কোনও কোনও চরিত্রের অভিনয় কখনও চড়া দাগের, কখনও আড়ষ্ট। ‘সিঁথির সিঁদুর, চেটে গেল ইঁদুর’-মার্কা কমেডিও বেশ চড়া। হাস্যকৌতুকের আবহসঙ্গীত বাংলা সিরিয়ালসুলভ। রূপঙ্করের গানটা ভাল, যদিও কাহিনির চলনে তা তেমন সাহায্য করেনি, যেটা করেছে শেষের রবীন্দ্রসঙ্গীত। নীলচে অন্ধকার রাতের দৃশ্য একটু কৃত্রিম। ছবির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যে শ্মশানটি, তার চালচিত্রও সে ভাবে ধরা পড়ল না। কাঠের চুল্লির শ্মশান আর তাকে ঘিরে থাকা দোকানপাটের দিন ঘনিয়ে আসে কালের নিয়মে। ওই শ্মশানেই এক দিন ভূতগ্রস্তের মতো শাটার টিপছিল হাবল। হয়তো সেরা দৃশ্য। আর সেখানেই ছবিয়াল ‘শাশ্বত’ হয়ে ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chabiyal Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy