Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ott

Binay Badal Dinesh review: নারীর উষ্ণতা বা খুনখেলায় মেতে ওঠা দর্শকদের জন্য ‘বিনয় বাদল দীনেশ’ মুক্তির স্বাদ

রসময়, রাজেনবাবু এবং সরযূদেবীর চরিত্রে শংকর দেবনাথ, প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় এবং অনুষ্কা চক্রবর্তীর সাবলীল অভিনয় মনে রাখার মতো।

ওটিটির বন্দুক আর নারীর উষ্ণতা বা খুনেখেলায় মেতে ওঠা দর্শকের কাছে 'বিনয় বাদল দীনেশ'  মুক্তির স্বাদ আনে

ওটিটির বন্দুক আর নারীর উষ্ণতা বা খুনেখেলায় মেতে ওঠা দর্শকের কাছে 'বিনয় বাদল দীনেশ'  মুক্তির স্বাদ আনে

দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৫১
Share: Save:

সত্থুর 'গরম হাওয়া' প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর কারণে ছবিটিকে মহান বলা যেতে পারে। ওটিটি পর্দায় মুক্তি পাওয়া 'বিনয় বাদল দীনেশ'-এর চর্চাও শুরু হতে পারে তার বিষয়বস্তু নিয়েই। করোনা আবহে ওটিটি-তে ইদানীং রুদ্ধঃশ্বাস নাটকীয়তার প্রয়োজনে মাদক, বন্দুক আর নারীর উষ্ণতায় মোড়া কিংবা খুনেখেলার রমরমা। তাতে মেতে ওঠা দর্শকের কাছে এমন বিরল বিষয় তুলে ধরার জন্যে 'বিনয় বাদল দীনেশ' ছবির পরিচালক ও প্রযোজক সত্যি সত্যি প্রশংসার দাবি রাখেন। যে কোনও শিল্পভাবনার মূলে আদতে থাকে শিল্পীর আবেগ, তার পর আসে মাধ্যমের সার্থক প্রয়োগ। দেশপ্রেমের আবেগে ভেসে যাওয়া তিন যুবকের নাম প্রায় সব বাঙালি জানলেও, তাদের নির্ভীকতা বা আত্মোৎসর্গের সম্যক ধারণা তেমন নেই। রোমহর্ষক করিডর যুদ্ধের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা আবারও মনে করিয়ে দেয়, সত্যি ঘটনা গল্পের থেকেও আশ্চর্যজনক হতে পারে । তাই গল্পে নাটক আনতে আলাদা করে কোনও প্রয়াসের প্রয়োজন হয় না। ছবিটি সাদা-কালোয় তৈরির মধ্যে দিয়ে পুরনো দিনকে সজীব করে তোলার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিছু দৃশ্যও মনে রাখার মতো।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর উপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে সে আমলের নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিকদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। রসময়, রাজেনবাবু এবং সরযূদেবীর চরিত্রে যথাক্রমে শঙ্কর দেবনাথ, প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় এবং অনুষ্কা চক্রবর্তীর সাবলীল অভিনয় মনে রাখার মতো।

দীনেশ যেখানে সাহেব পুলিশের মুখোমুখি হয়, সেই দৃশ্যটিতে একটু হোঁচট খেতে হয়। সে কালের বিপ্লবীরা ইংরেজিতে কথা বলত না। তাই অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হলেও চরিত্র চিত্রায়নের কারণে, ইংরেজি উচ্চারণ মিলিয়ে দীনেশকে একটু সাহেবি লাগে।

আত্মবিশ্বাস আর ঔদ্ধত্যের মধ্যে যে সূক্ষ্ম সীমারেখা রয়েছে, বিনয়ের চরিত্রে বেশ কিছু জায়গায় কিঞ্জল নন্দ সেই ভারসাম্য ধরে রাখতে অক্ষম বলে মনে হয়েছে। ব্রিটিশ অত্যাচারের দৃশ্যগুলিও অত্যন্ত মধ্য মানের এবং ছবিটিতে বহু ব্যবহারে খানিকটা জীর্ণই বলা যায়।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

বিনয় বসু লোম্যানকে হত্যা করার পর যে ভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিলেন, তা যে কোনও হলিউডের রুদ্ধঃশ্বাস ছবিকে হার মানায়। এ ছবিতে সে নাটকীয়তা বিন্দুমাত্র ধরা পড়েনি। রাইটার্স বিল্ডিং-এর তৎকালীন প্রহরা এবং লালবাজারের অবস্থান সত্ত্বেও তিন তরুণ যত ক্ষণ সময় ধরে ব্রিটিশ শক্তিকে প্রতিহত করতে পেরেছিলেন, তা অভাবনীয়। ব্রিটিশ অত্যাচারের দর্পের ঘেরাটোপে দাঁড়িয়ে এ হেন চ্যালেঞ্জ, সেই সময়ের কুখ্যাত ব্রিটিশ অফিসারদের হতবুদ্ধি ও অচল করে দিয়েছিল। শুধুমাত্র পিস্তলের গুলি আদানপ্রদান করে বহু সংখ্যক রাইফেলধারী প্রহরীদের আটকে রাখা বা হত্যা করা যায় না। ভারপ্রাপ্ত অফিসারদের বিমূঢ় হয়ে পড়ার সেই মুহূর্তগুলি বা বিনয়-বাদল-দীনেশ এবং রসময় চক্রবর্তীর যুদ্ধের কৌশল এ ছবির চিত্রনাট্যে কোথাও ধরা পড়েনি। শুধুমাত্র দীর্ঘ সময় ধরে গুলি ছোঁড়ার দৃশ্য কার্যতঃ ছবির গতিকে শ্লথ এবং ভারাক্রান্ত করেছে। রাইটার্স বিল্ডিং-এ যখন গুলি চলছে, তখন জনসাধারণ ভিড় করে তা দেখছে বা খুন হয়ে যাওয়া ব্রিটিশ অফিসারের টুপি নিজে পরে আনন্দ পাচ্ছে- এ দৃশ্য শুধুমাত্র ছবিটিকে অযথা তরল করেনি, কার্যত অলীক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। ভুললে চলবে না এ গল্প ইতিহাসের দলিল।

খরাজ মুখোপাধ্যায়ের মত দাপুটে অভিনেতাকে শুধুমাত্র কৌতুককর পুলিশের চরিত্রে ব্যবহার করা একটু অন্যায্যই বলা যায়। ইংরেজ শাসনে দেশি পুলিশ চরিত্রটি বড় বেশি বাঁধা ছক আর অতিসরলীকরণের দোষে দুষ্ট।

রসময়ের চরিত্রে শংকর দেবনাথ।

রসময়ের চরিত্রে শংকর দেবনাথ।

চল , চল, চল ঢঙে দেশ দেশ গানের ভাবনা ভাল। তবে চড়া সুরে আবহসংগীতে ড্রাম আর সিন্থেসাইজার ছবির মূল ভাবনায় খানিকটা বাধা সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের অমরগাথার কারণে সেই সময়ের অসংখ্য দেশপ্রেমের গান শুনে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। যে বন্দেমাতরমের ডাকে অজস্র তরুণ প্রাণ বাজি রেখে দেশমাতৃকার উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে মন্ত্রের কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু ছবিতে যে গান ব্যবহার করা হয়েছে, তার গায়কীতে কোনও ভাবেই সেই অসীম সাহসিকতা বা আত্মবলিদান কোথাও ধরা পড়ে না। সিম্পসনকে মারার সময়ে এক যোগে 'বন্দেমাতরম' বলে ওঠার মতো রোমাঞ্চকর মুহূর্ত চিত্রনাট্যকার কেন হাতছাড়া করলেন, তা-ও বোঝার বাইরে। বহু পরে আমরা বন্দেমাতরম শুনলাম। তবে তার অভিঘাত সে ভাবে তৈরি হল না। সে সময়ে বিপ্লবীরা কোনও অবস্থায় ব্রিটিশ কলে তৈরি গেঞ্জি বাড়িতে পরার জন্যে ব্যবহার করত না। এই পোশাক ভাবনা চোখে লাগে।

তবুও শুধু ভাবনার আবেগে এই ছবি নিজের জায়গা করে নিয়েছে। বুকে হাত দিয়ে দেশের জন্য যাঁরা শত অত্যাচার সয়েছেন, গৃহত্যাগ করেছেন, জীবন উৎসর্গ তাঁদের, শুধু তাঁদের জন্যই ছবিটি দেখা যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy