Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভার আছে, ধার নেই

নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়া হওয়ার গল্প ‘শিকারা’।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ছোট্ট সবুজ চারা কেমন তড়তড়িয়ে ওঠে, যত্নআত্তির বালাই ছাড়াই। যেমন চূড়ান্ত ক্রাইসিসেও মানুষ আশার আলো দেখে। ক্রাইসিস, আশা আর প্রেম এই ত্রিভূজের জোরে দর্শকের মনের বৃত্তে ঢুকে পড়ার চেষ্টা বহু পরিচালক, বহু বার করেছেন। বিধু বিনোদ চোপড়া এই ছকে আগেও খেলেছেন। ‘নাইন্টিন ফর্টিটু আ লাভ স্টোরি’ তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। দেশজ সেন্টিমেন্টের পথে না হলেও এই ছকেই ‘পরিন্দা’। মাস্টারস্ট্রোক কি বারে বারে হয়? ‘শিকারা’র ক্ষেত্রে অন্তত হয়নি। তবে হওয়া উচিত ছিল। কারণ ছবির এন্ড ক্রেডিটে পরিচালক জানাচ্ছেন, এই ছবির অনুপ্রেরণা তাঁর মায়ের কাহিনি।

নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়া হওয়ার গল্প ‘শিকারা’। শিবকুমার ধর আর শান্তির প্রেমের নীড় ভাঙে এই উত্তাল সময়েই। নিজস্ব আস্তানা ছেড়ে ঠাঁই নিতে হয় রিফিউজি ক্যাম্পে। সব ঝড়ঝাপটাতেও শিব-শান্তির মন-দুনিয়া অটুট থাকে।

ধ্বংসস্তূপে প্রেমের বীজ বোনা হলেও আবেগের খামতি গোটা ছবি জুড়ে। বোঝা যায় না যে, এই পরিচালকই নিগড় ভাঙা প্রেম দেখিয়েছেন তাঁর আগেকার ছবিতে। কাশ্মীরের মতো ক্যানভাস পেয়েও কেন এই কৃপণতা? আমেরিকার প্রেসিডেন্টই কি সবের মুশকিল আসান? এ প্রশ্নও ওঠে। তবে কিছু ইমেজারি মন ছুঁয়ে যায়। রিফিউজি ক্যাম্পে এক বৃদ্ধের ঘরে ফেরার ঘ্যানঘ্যান, কোথাও যেন মান্টোর টোবা টেক সিংকে মনে করায়। সেই ক্যাম্পে বসেই শিবের আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখার সময়ে শান্তির ভালবাসার প্রলেপের দৃশ্যটিও মাধুর্যময়। শিব আর শান্তির চরিত্রে নতুন মুখ আদিল খান ও সাদিয়া মন্দ নন। তবে আদিলের তুলনায় সাদিয়া সপ্রতিভ।

শিকারা
পরিচালনা: বিধু বিনোদ চোপড়া অভিনয়: আদিল, সাদিয়া
৫/১০

এ ধরনের ছবির একপেশে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঠাঁই নাড়া হওয়ার সব দায় সেখানকার মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিক। বিধু বিনোদ তা করেননি। তবে ছবির আসল সমস্যা হল, পরিচালক কোনও ‘পাশ’ই ঠিক মতো দেখাননি। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়ার খতিয়ান যেমন অসম্পূর্ণ তেমনই মুসলিমদের মনস্তত্ত্বটাও খোলসা হয়নি।

ছবির বিষয়বস্তুর ভার ধরে রাখতে কাহিনিতে যে ধার প্রয়োজন ছিল তা ‘শিকারা’য় অনুপস্থিত। কাশ্মীরি লেকের নিস্তরঙ্গ জলে শিকারা যেমন শান্ত ভাবে বয়ে যায়, ছবির চিত্রনাট্যও তাই। ঘর পোড়ার দুঃখ দর্শকের মন পোড়ায় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Review Shikara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy