যে কোনও পরিচালকের ছবিতে তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ডের কিছু ছাপ থাকে। দেখলেই বোঝা যায়, ছবিটি তাঁর। তবে মুখ বদলে দিয়ে একই গল্প একই ভাবে বারবার বলার ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছেন পরিচালক ইমতিয়াজ় আলি। এতে তিনি যে শুধু তাঁর ব্র্যান্ডের ক্ষতি করছেন, তা-ই নয়। প্রেমের মতো আবেগেরও গলা টিপে হত্যা করছেন। শেষ ছবি ‘জব হ্যারি মেট সেজল’-এর দোষে দুষ্ট পরিচালকের নতুন ‘লাভ আজ কাল’। এই ছবির চরিত্র দু’টিকে দেখলেই ‘তামাশা’, ‘জব উই মেট’-এর চরিত্রগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এবং পর্দায় যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁরা যেন ওই আগের চরিত্রের শিল্পীদেরই অনুকরণ করছেন বলে মনে হয়।
১৯৯০ এবং ২০২০-র টাইমলাইনে দু’টি প্রেমের গল্প ভেবেছেন পরিচালক। তিরিশ বছরের ব্যবধানে প্রেমের ভাব-ভাষা, হাসি-কান্না অনেকটাই বদলে গিয়েছে। রেডিয়োয় ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’র গান থেকে সময় এসে থেমেছে পাব-এর ডান্স ফ্লোরে। নতুন ছবিতে দুই প্রজন্মের যে সমস্যাগুলি পরিচালক দেখিয়েছেন, তার কোনওটাই অবাস্তব নয়।
কিন্তু ইমতিয়াজ় ভুলে গিয়েছেন, ২০০৯ সালে তিনি ‘লাভ আজ কাল’ নামে আরও একটি ছবি বানিয়েছিলেন। ওই সময়ের নিরিখে ছবিতে নতুনত্ব ছিল। এগারো বছর আগে নারী-পুরুষের প্রেমে নারীর কেরিয়ার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আজও দাঁড়াচ্ছে। সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই লং-ডিসট্যান্সের সমস্যা ভয়ের আবহ তৈরি করে। আবেগের আগে গুরুত্ব পায় হরমোন। সবটাই ঠিক। কিন্তু ইদানীং ওয়েব সিরিজ়ের দাপটে এই বিষয়ে আর কোনও নতুনত্ব নেই। বরং যে ভাবে পরিচালক গল্পটি দেখিয়েছেন, তাতে প্রেমের চেয়ে মনে বেশি করে ধাক্কা দেয় অনেক প্রশ্ন।
লাভ আজ কাল
পরিচালনা: ইমতিয়াজ় আলি
অভিনয়: সারা, কার্তিক, রণদীপ, আরুষি, সিমোন
৪/১০
এখনকার যে মেয়েরা কেরিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তারা কি কখনও সহজ, সাবলীল প্রেম করতে পারে না? সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলেই তাদের মধ্যে ‘অস্বাভাবিকতা’ থাকতে হবে? যেমনটা তিনি ‘তামাশা’তেও দেখিয়েছিলেন। এখনকার নারী-পুরুষের সম্পর্কে আসলে যে জটিলতা উঁকিঝুঁকি মারে, তার ধার দিয়ে গিয়েও নিজের বৃত্তে ফিরে গিয়েছেন পরিচালক, যা এ ছবির সবচেয়ে বড় সমস্যা।
সারা আলি খান এবং কার্তিক আরিয়ানের লঘু কাঁধে গুরু দায়িত্ব চাপিয়েছেন তিনি। তাঁরা এখনও এতটা তুখড় হয়ে ওঠেননি যে, একটি অতি সাধারণ গল্পকে উপভোগ্য করে তুলবেন। ছবি জুড়ে সারা অতি অভিনয় করেছেন। তুলনায় কার্তিকের চেষ্টা নজর কেড়েছে বেশি। নবাগতা আরুষি শর্মা মন্দ নন। রণদীপ হুডাকেও তিনি ব্যবহার করতে পারেননি।
যে ইমতিয়াজ়ের ‘গীত’কে (জব উই মেট) দেখে এখনও মেয়েরা প্রেমে বাড়ি ছাড়ার সাহস করে, যে গীত-আদিত্য আগামী অনেক প্রজন্মকেই প্রেমে পড়তে শেখাবে, সেই ইমতিয়াজ়ের এ ছবি দেখলে সত্যিই হতাশ লাগে। এই লাভস্টোরি হাসায়ও না, কাঁদায়ও না। বরং নিস্পন্দ প্রেমের নিগড়ে হারিয়ে যাওয়া ইমতিয়াজ়কে হাতড়ে খুঁজে দেখতে চায় স্মৃতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy