Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

গরিমার আড়ালে গহিন অন্ধকার

প্রথমার্ধে গল্পের পটভূমি তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে গল্প যত এগিয়েছে, একে একে গোপনীয়তার পরত খুলেছে, ছবিটিও বহুমাত্রিকতা পেয়েছে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৫
Share: Save:

সময়-যুগ-প্রজন্ম এগিয়ে গেলেও বাঙালি দর্শকের কাছে ফ্যামিলি ড্রামার আবেদন পুরনো হয় না। হয়তো সেই ভাবনা থেকেই ভিন্নধর্মী ছবির পথ থেকে সরে এসে বাণিজ্যিক মোড়কে মেগা স্টারকাস্ট নিয়ে গল্প বেঁধেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। তবে বলে রাখা প্রয়োজন, যে জঁরে পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় সুস্পষ্ট ছাপ রেখেছেন, সেই চেনা পথে না হেঁটে পরিচালক তাঁর স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছেন।

প্রথমার্ধে গল্পের পটভূমি তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে গল্প যত এগিয়েছে, একে একে গোপনীয়তার পরত খুলেছে, ছবিটিও বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। ছবির চলন চেনা। প্রণব (সৌমিত্র) ও মঞ্জরীর (অপর্ণা) পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে কাছে-দূরের সন্তানদের একত্রিত হওয়া এবং বাবা-মায়ের আপাত সুখী দাম্পত্যের নিরিখে সন্তানদের অসুখী বৈবাহিক জীবনের রহস্য উন্মোচন। কলকাতার অদূরে যে রাজবাড়ি বসু পরিবারের বংশগরিমা ধরে রেখেছে, সেই বাড়িও ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতার দ্বন্দ্ব, প্রগতিশীলতার আবডালে দমবন্ধ ফিসফিস, ষাটের দশকের বাঙালি নস্ট্যালজিয়া... দর্শক টানার সব উপাদান রয়েছে ছবিতে। কিন্তু পরিমাণ মতো। অতিনাটকীয়তা বা সুড়সুড়ি দেওয়া সেন্টিমেন্ট নেই!

ছবির সম্পদ নিঃসন্দেহে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অপর্ণা সেন। তাঁদের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে লিলি চক্রবর্তীকে বাদ দিলে বাকি তিন অভিনেত্রীর (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, শ্রীনন্দাশঙ্কর) লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন অপর্ণা। তাঁকে এত সুন্দর দেখতে লেগেছে যে, চোখ ফেরানো দায়! অভিনয়ের নিরিখে ঋতুপর্ণা-সুদীপ্তার পাশাপাশি যোগ্য সঙ্গত করেছেন যিশু সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলনায় শ্রীনন্দা আড়ষ্ট।

বসু পরিবার
পরিচালনা: সুমন ঘোষ
অভিনয়: সৌমিত্র, অপর্ণা, ঋতুপর্ণা, শাশ্বত, সুদীপ্তা, কৌশিক
৬.৫/১০

ছবির বাড়তি অভিবাদন প্রাপ্য, তার নির্মেদ, ঝরঝরে, রুচিশীল সংলাপের জন্য। লেখক ও চিত্রনাট্যকার সুমন যে সুললিত ভাষায় জেমস জয়েসের ‘ডেড’ উপন্যাস অবলম্বনে ন্যারেটিভ লিখেছেন, তাতে বাঙালি হিসেবে গর্ব হওয়া স্বাভাবিক। শেষে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্বগতোক্তি ছবিটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিক্রম ঘোষের সঙ্গীতও ছবির আবহের সঙ্গে সুন্দর মানিয়েছে।

খামতি বলতে ছবির গতি কিছু জায়গায় শ্লথ। নতুন প্রজন্মের তিন দাম্পত্যের (যিশু-শ্রীনন্দা, কৌশিক-সুদীপ্তা, ঋতুপর্ণা ও তাঁর স্বামী) মধ্যে ঋতুপর্ণার বৈবাহিক সমস্যার খোলসা করা হয়নি। পর্দায় দেখানো হয়নি তাঁর স্বামীকেও। প্রথমার্ধে গল্পের পটভূমি তৈরি করতে এতটা সময় না দিয়ে আরও কিছু পরত চাইলে যোগ করা যেত।

বাঙালি গার্হস্থ্যকে তুলে ধরতে পরিচালক যে ট্রোপ ব্যবহার করেছেন, সেগুলোও খুব চেনা। উল্টোরথে বৃষ্টি, মন কেমন করা বিবাগির গান, রাজবাড়ির ধামাচাপা দেওয়া গোপনকথার সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে আকাশের মুখভার...

চরিত্র নির্মাণেও পরিচালক খুব যত্নশীল। বিশেষত, শাশ্বত ও কৌশিকের চরিত্র দু’টি বাস্তবের খুব কাছাকাছি। তবে এই ছবির সার্থকতা অন্য জায়গায়। প্রবীণ দাম্পত্যকে গরিমামণ্ডিত করে নতুন দাম্পত্যকে আগেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে আদর্শ দাম্পত্যের বুনিয়াদেও যে গলদ থাকতে পারে, তা দেখিয়ে পরিচালক ছবিটিকে এক কদম এগিয়ে দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Review Basu Poribar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy