সুগন্ধী আতর, গরম মশলা, মাটন, বাসমতী চাল, কাঠকয়লার ঢিমে আঁচে দমে রান্না। সে খাবারের স্বাদ কি খারাপ হতে পারে? ‘ভারত’ হল ইদের বিরিয়ানি। খেতে ভালই লাগে। কিন্তু হজম করতে কষ্ট আছে। অর্থাৎ হলে ঢুকেই যুক্তি-বুদ্ধি ভাঁজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। তবে এন্টারটেনমেন্ট ভরপুর। টাকা-সময়ের হিসেব করতে করতে রোজকার ঘোড়দৌড়ে মাথা ঝিমঝিম করা থেকে মুক্তি পেতে এ ছবি হ্যাপিনেস অয়েলের কাজ করে।
ছবি শুরু হয় পাকিস্তানে। ছোট্ট ভারত তার মা ও ভাই-বোনকে নিয়ে ভারতে আসার ট্রেনে উঠে পড়ে। স্টেশনে হাত ছেড়ে যায় বাবা ও আর এক বোনের। ভারতে এসে নিজের পরিবারকে একসঙ্গে রাখার সংগ্রাম চলে আজীবন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে কর্মসংস্থানের অভাবে সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করে সে। অনেক দিন বাদে সার্কাসের ভাল স্টান্ট দেখা গেল এ ছবিতে। বিশেষত মরণকূপের খেলা, যেখানে বাইকে স্বয়ং সলমন খান! সার্কাস থেকে আরবের তেলের খনিতে যাত্রা। সেই সূত্রে দেখা কুমুদের (ক্যাটরিনা) সঙ্গে ও প্রেমপর্ব শুরু। সেখান থেকে নৌবাহিনীর কাজ, রেশনের দোকান... ভারতের পুরো জীবনের গল্পই এ ছবির হিরো। নদীর মতো গতিময় ছবির ভিত বোনা হয়েছে নুড়ি-কাঁকরের মতো দেশপ্রেম ও আবেগ দিয়ে। যা জলের তলায় থাকলেও দৃশ্যমান। তবে দেশপ্রেমের ভারে ভারাক্রান্ত নয়। ছোট-ছোট আবেগ বরং স্থায়ী হয় অনেক ক্ষণ। আবেগ যদি দাঁড়িপাল্লার এক দিকে থাকে, অন্য দিকে রয়েছে অ্যাকশন, রোম্যান্স ও হিউমরের মতো ভারী ভারী বাটখারা। একই দৃশ্যে চোখ ভিজে ওঠার পরক্ষণেই হাসির দমকে সে জল মিলিয়ে যায়। অতিরিক্ত নাম্বার প্রাপ্য আবু ধাবি, স্পেন ও মল্টার অভিনব লোকেশন নির্বাচনের জন্য।
ছবির অভিনেতারাও যথাযথ। এথনিক পোশাকে, কড়া মেজাজে ক্যাটরিনা বেশ অন্য রকম। দিশা পাটনি, জ্যাকি শ্রফ, তব্বুর স্ক্রিন প্রেজ়েন্স কম হলেও ইমপ্যাক্ট অনেকটাই। তবে সোনালি কুলকার্নি, বিজেন্দ্র কালা ও সতীশ কৌশিকের মতো অভিনেতাদের যথাযথ ব্যবহার করেননি পরিচালক। বরং পর্দায় ভিড় বাড়ানোর জন্য একাধিক চরিত্রের উপস্থিতি মাঝেমাঝে বিরক্তিকর লাগে। ছবির দৈর্ঘ্যও অনায়াসে কমানো যেত। বিশেষত সুনীল গ্রোভার ও নোরা ফতেহির সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যতটা সময় ব্যয় হয়েছে, তার কোনও প্রয়োজন ছিল না। অন্য দিকে সলমন-ক্যাটরিনার সম্পর্কটা আর একটু বুনলে ভাল লাগত। প্রেম করলেও ভারত-কুমুদ বিয়ে করতে কেন সত্তর বছর পার করে দিলেন, সে কারণও অবশ্য স্পষ্ট নয়।
ভারত
পরিচালনা: আলি আব্বাস জ়াফর
অভিনয়: সলমন, ক্যাটরিনা, সুনীল, দিশা, জ্যাকি
৬.৫/১০
আর আছে সলমন খান। ছবির আশি শতাংশ জুড়ে বিভিন্ন লুকে যিনি আপনাকে প্রেমের হাতছানি দেবেন। যুবা সলমন থেকে শুরু করে কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা সলমনের আবেদন সমান। চোখ ফেরানো দায়। তবে মাঝেমাঝেই মনে হবে, সলমনের নিজের জীবনের প্রতিফলনও বুঝি রয়েছে ‘ভারত’-এ। বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা, একান্নবর্তী পরিবারের মাথা, দশের সেবায় এগিয়ে যাওয়া, ক্যাটরিনার সঙ্গে সম্পর্ক, বিয়ে না হওয়া... সাবপ্লটেও ঝিলিক দেয় সলমনের ব্যক্তিগত জীবনযাপন।
দেশভাগ দিয়ে শুরু এই ছবির। ধর্মের নামে ভাগ-বাঁটোয়ারা হওয়ার ক্ষত কতটা গভীরে শিকড় বিস্তার করে, তা-ও স্পষ্ট। এই ঘা বারবার উস্কে দিয়েছে বলিউড। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে এ ছবির বার্তা জরুরি। এমনকি ছবির প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মনমোহন সিংহের অর্থনীতির প্রশংসা করার সাহসও দেখিয়েছেন নির্মাতারা। যেখানে ধর্মের নামে খুন-জখম স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজে, সেখানে সলমনই মনে হয় এমন দুঃসাহস দেখাতে পারেন। বড় মনও আছে তাঁর। নব্বইয়ের সুপারস্টার হিসেবে শাহরুখ খানকেও ছবিতে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করেননি। তবে ছবির শেষে ব্লকবাস্টার সুপারস্টার সলমন নিজেই। পুরো পরিবার এক ছাদের তলায় রাখতে বা দর্শকের মনোরঞ্জনে সত্যিই জুড়ি নেই তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy