Remo D'Souza struggled hard to establish himself as a successful choreographer in Bollywood dgtl
bollywood
নতুন শহরে অনাহারে রেলস্টেশনের বেঞ্চে দিন কাটানো কিশোরই আজ কোরিয়োগ্রাফার রেমো ডি’সুজা
ততদিনে তিনি ঠিক করেই ফেলেছেন নৃত্যশিল্পী হবেন। কিন্তু বাড়ির লোক অনড়। পাইলটের বদলে নিদেনপক্ষে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, তাঁদের দাবি। সে সময় মধ্যবিত্ত পরিবার মেনে নিতেই পারত না, ছেলে কোরিয়োগ্রাফার হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
শাহরুখ খানের ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে কেরিয়ার শুরু। আমির খান এবং অক্ষয় কুমারের ছবিতে কাজ করেছেন ‘এক্সট্রা’ শিল্পী হিসেবেও। এখন তিনি নিজেই পরিচালক, অভিনেতা তথা নৃত্য পরিচালক। বলিউডে রেমো ডি’সুজার যাত্রাপথ তাঁর পারফরম্যান্সের মতোই বর্ণময়।
০২২৪
রেমোর জন্ম ১৯৭৪ সালের ২ এপ্রিল। তাঁর জন্মগত নাম রমেশ গোপী। আদতে কেরলের বাসিন্দা রেমোর পরিবার পরে চলে আসে গুজরাতের জামনগরে। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার রাঁধুনি। মা ব্যস্ত ছিলেন ঘর সংসার নিয়ে। ভাইবোনদের সঙ্গে রেমো বড় হয়ে ওঠেন জামনগরে।
০৩২৪
বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল, রেমো পাইলট হবেন। রেমোর ইচ্ছে দাঁড়িয়েছিল সম্পূর্ণ অন্য মেরুতে। তিনি তখন মাইকেল জ্যাকসনের স্বপ্নে বিভোর। ভিডিয়োতে জ্যাকসনের নাচ দেখেন আর অনুকরণ করেন। চেষ্টা চলত, জ্যাকসনের নৃত্যভঙ্গিমার সঙ্গে নিজের নাচের স্টেপ মিলিয়ে মিশিয়ে নতুন কিছু করার।
০৪২৪
নাচের নেশায় বুঁদ রেমো দশম শ্রেণির পরে আর স্কুলমুখোই হলেন না। ততদিনে তিনি ঠিক করেই ফেলেছেন নৃত্যশিল্পী হবেন। কিন্তু বাড়ির লোক অনড়। পাইলটের বদলে নিদেনপক্ষে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, তাঁদের দাবি। সে সময় মধ্যবিত্ত পরিবার মেনে নিতেই পারত না, ছেলে কোরিয়োগ্রাফার হবে।
০৫২৪
শেষে রেমোর পাশে দাঁড়ালেন তাঁর মা। তিনি রেমোকে ভর্তি করে দিলেন নাচের স্কুলে। কিছুদিন জামনগরের স্কুলেই চলল প্রশিক্ষণ। কিন্তু রেমো বুঝলেন কোরিয়োগ্রাফারের কেরিয়ার করতে গেলে তাঁকে যেতে হবে মুম্বই। তিনি পাড়ি দিলেন বাণিজ্যনগরীতেই।
০৬২৪
মুম্বইয়ে এক পরিচিত পরিবারে প্রথম কিছু মাস রেমো থাকলেন অতিথি হয়ে। নিজের নাচের স্কুল শুরু করলেন। এক জন, দু’জন করে ছাত্রছাত্রীও এল। উপার্জন শুরু হতেই রেমো ওই পরিবারে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে শুরু করলেন।
০৭২৪
কয়েক মাসের মধ্যে রেমোর স্কুলের সংখ্যা এক থেকে তিন হয়ে গেল মুম্বইয়ে। কিন্তু তার মধ্যেই আচমকা সুর কেটে গেল। বর্ষার মরসুমে রেমোর স্কুলে ছাত্রছাত্রী আসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়াল, রেমো কার্যত কপর্দকহীন।
০৮২৪
পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে শুরু করেছিলেন রেমো। সেই টাকারও সংস্থান করা দুষ্কর হয়ে পড়ল। অগত্যা তিনি সেই পরিবারে মিথ্যা বললেন। নাচের অনুষ্ঠান আছে বলে তাঁদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। কিছু দিন কাটল অনাহারে, রেলস্টেশনের বেঞ্চে।
০৯২৪
রেমো ক্রমশ বুঝতে পারলেন শুধুমাত্র নাচের স্কুলে কিছু হবে না। তাঁকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু করতে হবে। কিন্তু যতবারই তিনি কাজের জন্য যান, প্রত্যাখ্যাত হন চেহারার জন্য। এক সাক্ষাৎকারে রেমো পরে বলেছিলেন, তথাকথিত সুদর্শন না হওয়ায় কেউ তাঁকে কাজ দিতে রাজি ছিলেন না।
১০২৪
এক বন্ধুর মাধ্যমে রেমোর আলাপ হল কোরিয়োগ্রাফার আহমেদ খানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও সেই প্রত্যাখ্যান। শেষ পর্যন্ত সেই বন্ধুর কথায় রেমোর দ্বিতীয় অডিশন নিলেন আহমেদ খান। এ বার তাঁকে জায়গা দিলেন নিজের নাচের দলে।
১১২৪
আহমেদ খান সে সময় ‘রঙ্গিলা’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন। ছবির পরিচালক রামগোপাল বর্মা তো রেমোর নাচে মুগ্ধ। তিনি রেমোকে একটি দৃশ্যে অভিনয়েরও সুযোগ দিলেন।
১২২৪
‘রঙ্গিলা’-য় সহকারী কোরিয়োগ্রাফার হওয়ার পাশাপাশি এক্সট্রা হিসেবেও অভিনয় করেন রেমো। ‘আফলাতুন’-এ অক্ষয়কুমারের সঙ্গেও তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘পরদেশ’-এ শাহরুখের ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবেও দেখা গিয়েছিল রেমোকে।
১৩২৪
এক বছর আহমেদ খানের সহকারী হিসেবে কাজ করার পরে ইন্ডাস্ট্রিতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে শুরু করেন রেমো। সোনু নিগমের ‘দিওয়ানা’ মিউজিক ভিডিয়ো-তে তাঁর কোরিয়োগ্রাফি জনপ্রিয় হয়। একক কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে রেমোর আত্মপ্রকাশ ‘দিল পে মত লে ইয়ার’-এ।
১৪২৪
রেমোকে পরিচিতির আলোয় এনেছিল ২০০২ সালে, ‘কাঁটে’ ছবিতে ‘ইশক সমুন্দর’ গানের সঙ্গে কোরিয়োগ্রাফি। এর পর বলিউডে পায়ের নীচে শক্ত জমি পেতে সমস্যা হয়নি রেমোর। কিন্তু তিনি রমেশ গোপী থেকে রেমো হলেন কী করে? সেই পর্বও লুকিয়ে আছে তাঁর স্ট্রাগলের দিনগুলিতে।
১৫২৪
বলিউডে স্ট্রাগল পর্বে এক গির্জায় প্রায়ই যেতেন রেমো। তাঁর মনে হয়েছিল ধর্মান্তরিত হলে তিনি মানসিক শান্তি খুঁজে পাবেন। পরিবারের অনুমতি নিয়ে নতুন ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। রমেশ গোপী থেকে তিনি হয়ে যান রেমো ডি’ সুজা। তাঁর বিশ্বাস, নাম পরিবর্তনের পরেই সাফল্য এসেছে।
১৬২৪
‘কেয়ামত’, ‘ধুম’, ‘অকসর’, ‘রোবট’ ছবিতে রেমোর কোরিয়োগ্রাফি জনপ্রিয় হয়। এ বার কোরিয়োগ্রাফি থেকে রেমো ঝুঁকলেন পরিচালনার দিকে। ২০১০-এ তিনি পরিচালনা করলেন ‘ফালতু’। তিন বছর পরে তিনি পরিচালনা করলেন ‘এবিসিডি’।
১৭২৪
নাচকে বিষয়বস্তু রেখে তৈরি এ ছবির ট্যাগলাইন ছিল ‘এনিবডি ক্যান ডান্স’। অভিনয় করেছিলেন বলিউডের বেশ কয়েকজন কোরিয়োগ্রাফার। বক্স অফিসে এই ছবি সফল হয়েছিল। ‘এবিসিডি’ সিরিজে পরে আরও ছবি পরিচালিত হয়েছিল।
১৮২৪
‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’-এ আলিয়া ভট্ট, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-তে রণবীর কপূর এবং ‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ সলমন খান—রেমোর ছন্দে পা মিলিয়েছেন একের পর এক তারকা।
১৯২৪
রেমোর সঙ্গে কাজ করে এত ভাল লাগে, সলমন বলেন, তাঁর সব ছবিতে তিনি রেমোকেই পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন। কথা রেখেছিলেন ভাইজান। ‘রেস থ্রি’ ছবি পরিচালনা করেছিলেন রেমো ডি’ সুজা। কিন্তু বক্সঅফিসে এই ছবি সলমনের অন্যান্য ছবির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল।
২০২৪
পরে রেমো অভিযোগ করেছিলেন, ছবির চিত্রনাট্য তিনি শুটিং শুরুর কয়েক দিন আগেই পেয়েছিলেন। তাছাড়া, সেটের নিয়ন্ত্রণ সলমন নিজের হাতে রাখতেন বলে দাবি রেমোর। পরিচালক হিসেবে নিজের জায়গা তিনি পাননি বলেও আক্ষেপ করেছিলেন তিনি। এখান থেকেই তাঁর সঙ্গে সলমনের বিবাদ শুরু।
২১২৪
শোনা যায়, রেমোর সঙ্গে ভবিষ্যতে আর কাজ করবেন না বলে ঠিক করেছেন সলমন। কিন্তু এর আগে এক বার আইনি ঝামেলায় পড়েছিলেন রেমো। গাজিয়াবাদের জনৈক সত্যেন্দ্র ত্যাগী তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ এনেছিলেন। সেই আইনি লড়াইয়ে রেমোকে সাহায্য করেছিলেন সলমন খান।
২২২৪
তবে সলমনের বিরাগভাজন হওয়ার পরেও রেমোর কেরিয়ার ব্যাহত হয়নি। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’, ‘স্ট্রিট ডান্সার থ্রি ডি’, ‘কলঙ্ক’-এর মতো ছবিতে তিনি কোরিয়োগ্রাফি করেছেন।
২৩২৪
ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কোনওদিন রেমোকে মেজাজ হারাতে দেখেনি। জীবনের সব প্রতিকূলতাকে তিনি জয় করেছেন হাসিমুখে। জীবনযুদ্ধে তিনি পাশে পেয়েছেন স্ত্রী লিজেল-কে। পেশায় কস্টিউম ডিজাইনার লিজেল হাল ধরে থেকেছেন রেমোর যাত্রাপথে। স্ত্রী এবং দুই ছেলে ধ্রুব ও গ্যাব্রিয়েলের মাঝে রেমো আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান।
২৪২৪
নিত্যনতুন জুতোর শখ ছিল শৈশব থেকেই। টাকার অভাবে পুরনো জিনিসের দোকান থেকে কেনা ব্যবহৃত জুতো-ই পরতেন পায়ে। আজ, তিনি নিজেই বিনোদন দুনিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর দেখানো পথে পা রাখছেন নতুন প্রজন্মের অসংখ্য উৎসাহী।