Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nepotism

‘নেপোটিজ়ম’-এর প্রতিফলন কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে একমুখী নয়

বলিউড গত কয়েক দিনে শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ইটালিয়ান শব্দ ‘নেপোটিসমো’ থেকে ইংরেজি ‘নেপোটিজ়ম’ শব্দটির উৎপত্তি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০১:৪৪
Share: Save:

দু’বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ম্যাগাজ়িনের প্রচ্ছদে ফিচারড হয়েছিলেন সুহানা খান। কারণ? তিনি শাহরুখ খানের কন্যা। একটি ছবি না করলেও তাঁর ব্র্যান্ড ভ্যালু কম নয়। ‘কহানি’ ছবির সিকুয়েল ‘বব বিশ্বাস’-এ অভিনয় করছেন অভিষেক বচ্চন। আনন্দ প্লাস-এর সাক্ষাৎকারে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (যিনি আগের ছবিতে বব) মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ছবির চিত্রনাট্য তো শুনেছিলাম। তার পর কী হল, জানি না।’’ এই ‘জানি না’র মধ্যেই বলিউডের নেপোটিজ়মের সব গল্প লুকিয়ে। কেউ কেউ জানে না, কেউ জেনেও জানাতে চায় না!

ইটালিয়ান শব্দ ‘নেপোটিসমো’ থেকে ইংরেজি ‘নেপোটিজ়ম’ শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ, রক্তের সম্পর্কের মধ্যেই ব্যবসা কুক্ষিগত রাখা। আর পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রির মতো হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এর ব্যতিক্রম নয়। বাবা বা মায়ের পেশাতেই নাম লিখিয়েছেন ছেলেমেয়েরা। পরিবারের জোর থাকলেও হৃতিক রোশন, রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্টের মতো তারকারা নিজেদের প্রমাণ করেছেন। আবার তুষার কপূর, ফারদিন খান, জ়ায়েদ খানের মতো তারকারা ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি। দাঁড়িপাল্লার দু’দিকেই উদাহরণ ভূরি ভূরি। কিন্তু সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরে যে ‘নেপোটিজ়ম’ বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা বহুমুখী, বহুস্তরীয়।

বিতর্কের কেন্দ্রে সুশান্ত কেন?

টেলিভিশন থেকে শুরু করে মেনস্ট্রিম বলিউডে জায়গা করে নেওয়া একেবারেই সহজ কাজ নয়। শাহরুখ খানের পরে সুশান্ত সিংহ রাজপুতই সেটা পেরেছিলেন। সুশান্তের সমসাময়িক বিক্রান্ত মেসি, অমিত সাধও বড় পর্দায় কাজ করেছেন। কিন্তু কমার্শিয়াল হিরো হতে পারেননি। সুশান্ত প্রথম সারির পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর একের বেশি ছবি একশো কোটির ব্যবসা করেছে। তাঁর যোগ্যতা ও ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে সন্দেহ নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, ভাল অভিনয় ও ভাল ছবি পাওয়া। নামী পরিচালকের ছবিতে কেউ যদি সুযোগ না পান, তবে তিনি কখনও বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারেন না। সুশান্তের মৃত্যুর পিছনে এই সুযোগ না পাওয়ার প্রশ্নটি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করার পরেও কেন সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর চারটি ছবির একটিতেও কাজ করতে পারলেন না? যশ রাজ ফিল্মসের অন্য ছবিতেও তাঁকে কেন দেখা গেল না? এই প্রশ্নগুলির জন্যই তিনি বিতর্কের কেন্দ্রে।

স্টারকিডও নেপোটিজ়মের শিকার

দিন কয়েক আগে সেফ আলি খান যখন তাঁর বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন, নেপোটিজ়মের প্রশ্নে তা বড় ধাক্কা। কারণ স্টারকিড মানে কখনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, সেটাই দর্শক ধরে নেন। ফলে তাঁর লড়াই অনেকটাই লঘু হয়ে যায়। তবে সেফ ও অভিষেক বচ্চন এমন দৃষ্টান্ত, যাঁরা স্টারকিড হয়েও বারবার দর্শকের সামনে পরীক্ষা দিয়েছেন। ‘আউটসাইডার’ হলে এই একাধিক সুযোগ পেতেন কি না, প্রশ্ন সেখানে ।

ইনসাইডার হয়েও নিজের নামেই পরিচিতি

নব্বইয়ের দশকের অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন এই বিতর্কে খুব সরব। বলেছেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে ক্লাসরুম পলিটিক্স আছে। এক দল মানুষ আছেন, যাঁরা অন্যের ব্যর্থতার রোডম্যাপ তৈরি করেন। ছবির মহরতে যাওয়ার আগে আমাকে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কারণ নায়কের প্রেমিকা আমাকে পছন্দ করতেন না।’’ এই বিতর্কে তিনি নতুন পরতও যোগ করেছেন। ‘‘আমার বাবা রবি টন্ডন পরিচালক ছিলেন। কিন্তু বাবা আমাকে লঞ্চ করেননি। আমার কোনও ছবিতে টাকাও ঢালেননি। এক কাস্টিং এজেন্টের নজরে পড়েছিলাম আমি,’’ বলেছেন রবিনা। সত্যি বলতে, রবিনার বাবাকে ক’জনই বা চেনেন? রবিনার পরিচিতি তাঁর নামেই।

নেপোটিজ়ম নয়, ফেভারিটিজ়ম

সুশান্তের মৃত্যুর পরে এই অভিযোগের কাঁটায় সবচেয়ে বেশি বিদ্ধ কর্ণ জোহর ও সলমন খান। বলিউডের দুই ‘বিগ ড্যাডি’ ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক তারকার জন্ম দিয়েছেন। তবে কর্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ফেভারিটিজ়ম ও লবিবাজি করার। কারণ রক্তের সম্পর্কের কাউকেই কর্ণ লঞ্চ করেননি। আলিয়া ভট্ট তাঁকে ‘বাবা’ বলে মানেন, তাঁর ছেলেমেয়েদের ‘ভাই-বোন’ বলেন। সেই কারণেই হয়তো আলিয়া ও কর্ণ নেটিজ়েনদের চক্ষুশূল। তবে গত কয়েক বছরে কর্ণ নিজের ক্যাম্প ও ব্র্যান্ডভ্যালু এতটাই পোক্ত করেছেন যে, কিয়ারা আডবাণী, কৃতী শ্যানন, ভূমি পেডনেকর, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়ের মতো আউটসাইডাররা তাঁর নেকনজরে থাকতে চান। কারণ? বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছনো।

সলমন খান নিজের ভগ্নীপতি আয়ুষ শর্মাকে লঞ্চ করেছেন, হোম প্রোডাকশনে তাঁর দুই ভাই পরিচালক হয়ে যান। ক্যাটরিনা কাইফ থেকে প্রানূতন বহেলের মতো একাধিক শিল্পীকে সুযোগ দিয়েছেন সলমন। নেপোটিজ়ম ও ফেভারিটিজ়ম একই সঙ্গে বহাল তাঁর সাম্রাজ্যে।

বহিরাগতদের অভিযোগ

গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘পতি পত্নী অওর উয়ো’ ছবিতে অনন্যা পাণ্ডের চরিত্রটি প্রথমে করার কথা ছিল তাপসী পান্নুর। ছবিটি অনন্যার কাছে যাওয়ার একটিই কারণ, তাঁর খুঁটির জোর। তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসে বলিউডে নিজের জায়গা করে নেওয়ার পরেও এই বঞ্চনার কারণে তাপসী সরব হয়েছিলেন। ‘রাঞ্ঝনা’, ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর মতো ছবির অভিনেতা মহম্মদ জিশান আয়ুব বলেছেন, ‘‘সমস্যাটা নেপোটিজ়মের নয়, মিথ্যে বলার। গত পাঁচ বছরে দেখেছি, বড় চরিত্র বলে ছবিতে তা পার্শ্বচরিত্র হয়ে গিয়েছে। পোস্টারে ছবি থাকার কথা দিয়ে সেটা হয়নি।’’

‘নেপোটিজ়ম’ বিতর্ক ইন্ডাস্ট্রিতে থাকবে। কারণ অডিশন না দিয়েও ছবিতে সুযোগ পাওয়া যায়। টিকে থাকতে গেলে প্রতিভা ও খুঁটির জোর, দরকার দুটোই। রাস্তা মসৃণ না হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বহিরাগতদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy