Advertisement
E-Paper

ঝড় দিয়ে যায় চেনা

একে আমপান, তায় লকডাউন। নিজের এলাকায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের পাশে নুসরত, মিমি ও দেবসাইক্লোনের দু’দিন পরে বসিরহাটে যান নুসরত।

এলাকা পরিদর্শনে মিমি

এলাকা পরিদর্শনে মিমি

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০০:৫৫
Share
Save

আমপানে অপূরণীয় ক্ষতির সঙ্গে এখনও লড়ছে দক্ষিণবঙ্গ। মুখের গ্রাস আর মাথার উপরের ছাদ হারিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে ঠাঁই খুঁজছেন অগুনতি মানুষ। রাজ্যের তিন তারকা সাংসদ কতটা তৎপর তাঁদের এলাকায় স্বাভাবিক ছন্দ ফেরাতে? মিমি চক্রবর্তীর কেন্দ্র যাদবপুর, নুসরত জাহানের বসিরহাট এবং দেবের ঘাটাল গত বুধবারের সাইক্লোনে কমবেশি বিপর্যস্ত। মিমি এবং নুসরতের কেন্দ্রেই ক্ষতির পরিমাণ সর্বাধিক। সাংসদ হিসেবে মানুষের পাশে কতখানি দাঁড়ালেন তাঁরা?

সাইক্লোনের দু’দিন পরে বসিরহাটে যান নুসরত। শুক্রবার কেন্দ্রের পার্টি অফিস থেকে ফেরার পথে তিনি চাল বিতরণ করেন মালঞ্চতে। তাঁর এলাকাধীন হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এ সপ্তাহেই তাঁর সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন নুসরত। এমপি ফান্ড থেকে পাওয়া অর্থের অনেকটাই করোনা মোকাবিলায় খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন তিনি। ‘‘দ্বিতীয় দফার টাকা এখনও আসেনি, তাই এই দুর্যোগ মোকাবিলায় যতটা পারছি রাজ্যের সাহায্য থেকেই চালাচ্ছি,’’ বললেন সাংসদ। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও তাঁকে সাহায্য করছেন। ‘‘রূপম ইসলাম, পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়) আমাকে ফোন করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আরও অনেক সাহায্যের প্রয়োজন।’’

ভিটে হারানোর যন্ত্রণায় অনেকেই ভুলে গিয়েছেন করোনার ভয়। নুসরতের ভিজ়িটে ভিড় হওয়ায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের বিষয়টি কারও মাথায় থাকছে না, এমন অভিযোগও পেয়েছেন অভিনেত্রী। ‘‘আমি যাওয়ায় ভিড় হচ্ছে জানি, তবে আমাকে তো আমার কাজটা করতে হবে।’’

তবে সাংসদ-অভিনেত্রীর এই সফরে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। রাজ্যের অবস্থা পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চপারে এলাকা পরিদর্শনের পরে সে দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসিরহাট কলেজেই প্রশাসনিক বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে স্বামী নিখিল জৈনকে নিয়ে কলেজে ঢুকতে যান নুসরত। সঙ্গে ছিলেন দু’জন আপ্তসহায়কও। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন তাঁদের। সাংসদ হিসেবে নুসরতকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও নিখিলের কাছে উপযুক্ত নথি না থাকায় তাঁর প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। প্রধানমন্ত্রীর এসপিজি-র সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পরেই ফেরার রাস্তা ধরেন নুসরত।

যদিও এ অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেন নুসরত, ‘‘এটা মিথ্যে রটনা। সে দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর জন্য ড্রাইভ করে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না। নিখিলই আমাকে নিয়ে যায়। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই মিটিংয়ে তো শুধু প্রশাসনিক স্তরের মন্ত্রী-আমলাদের থাকার কথা ছিল। আমি কেন, অন্য কোনও সাংসদেরই তো থাকার কথা ছিল না। কেন অযাচিত ভাবে ঢুকতে চাইব?’’ তবে নুসরত অভিযোগ অস্বীকার করলেও স্থানীয় প্রশাসনের সিসিটিভি ফুটেজ বলছে অন্য কথা।

মুখোমুখি নুসরত

এর আগে লকডাউন চলাকালীন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন নুসরত। রাজ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার সময়ে ক’দিন কলকাতায় রাস্তায় নেমে মাস্ক বিতরণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেই বাড়িতে বসে টিকটক ভিডিয়ো কিংবা খাবারের ছবি পোস্ট করায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সাংসদ-অভিনেত্রীকে।

অন্য দিকে মিমি চক্রবর্তী কিন্তু বেশ অনেক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আগের মতো অ্যাক্টিভ নন। তাঁর মতে, প্রথমে করোনা তার পর আমপানে মানুষের দুর্দশা দেখে অন্য কিছু ভাবার মতো মনের অবস্থা তাঁর নেই।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতি দেখে শিউরে উঠেছিলেন যাদবপুরের সাংসদ মিমি। ঝড়ের ঠিক দু’দিন পরেই পৌঁছে গিয়েছিলেন নিজের এলাকা বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেত্রী-সাংসদ। তাঁকে কাছে পেয়ে বিপন্নতার ঝুলি উজাড় করে দেন মানুষজন। অধিকাংশেরই ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। মিমি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সাংসদ নিজেও জানেন, পরিস্থিতি এতটাই দুর্বিষহ যে, রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। সোনারপুর বা ভাঙড়ে পৌঁছতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। গোটা পথ জুড়ে আমপানের ধ্বংসলীলার ছাপ। গাছ কেটে সরিয়ে পথ করে নিতে হয়েছে। পায়ে হাঁটা রাস্তাতেও গাছ সরিয়ে যেতে হয়েছে।

গত ক’দিন ধরে যাদবপুর, গড়িয়া, টালিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে। আলো নেই, জল নেই, গাছ পড়ে রাস্তার অবস্থাও খারাপ। কারও বাড়িতে ৬০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই, তো কোথাও ৯০ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসছিলেন সেখানকার জনতা। সেখানে কি আরও আগে যাওয়া উচিত ছিলেন না সাংসদের? মিমি জানালেন, তিনি রাতে নিজের মতো গিয়ে সবটা দেখে এসেছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, দুর্যোগের পর থেকে নিয়মিত রাতে নিজের কার্যালয়, প্রশাসনিক অফিসে গিয়ে অবস্থা খতিয়ে দেখে কাজের নির্দেশ দেন মিমি।

রবিবার থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আসতে শুরু করে। সোমবার পরিস্থিতি আরও খানিকটা স্বাভাবিক হয়। মঙ্গলবার ফের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন মিমি। মেট্রো রেল কলোনি, সাদার্ন পার্ক, ব্রিজি কলোনি, বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মিমি। গড়িয়া, পাটুলি, গল্ফগ্রিন এলাকায় ২৪ ঘণ্টা ধরে নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন বিদ্যুৎকর্মীরা, গাছ কাটাইয়ের কর্মীরা। তাঁদের জল, বিস্কিট, মুড়ি বিলি করেন সাংসদ। উত্তেজিত জনতার উদ্দেশ্যে মিমি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাস করুন, বিদ্যুৎকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আমাদের সকলকে ওঁদের পাশে থাকতে হবে।’’

আর এক সেলেব্রিটি সাংসদ দেবের এলাকার পরিস্থিতি কেমন? পূর্ব মেদিনীপুরের নানা জায়গায় আমপান যতটা তাণ্ডব চালিয়েছে, ঘাটালে তার প্রভাব কিন্তু সে ভাবে পড়েনি। এখানে কয়েকটি জায়গায় গাছ পড়া বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলেও তা দু’-তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আমপানের পরে দেব তাঁর এলাকায় না এলেও, লকডাউন শুরু হওয়ার পরে তিনি যে পদক্ষেপ করেছিলেন, তা এলাকাবাসীর মন জয় করে নিয়েছে। ঘাটালে যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালটি রয়েছে, সেখানে নানা জায়গা থেকে রোগী আসেন। লকডাউনের কারণে আশপাশের সব খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, রোগীর পরিজনদের খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তখন সাংসদ-অভিনেতার নির্দেশে সেখানে রান্না করে রোগীর পরিজনদের খাবার দেওয়া শুরু হয়। এমনকি ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে বিভিন্ন জায়গার দুঃস্থ পরিবারগুলিকেও খাবার দেওয়া হয় এবং মাঝেমধ্যে নানা ত্রাণসামগ্রীও তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই কাজ এখনও চলছে। দেবের এই উদ্যোগ দেখে পরে আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করতে।

দেব।

একটা বিপর্যয় অনেক শিক্ষা দিয়ে যায়। তিন সাংসদই আগে এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাঝেও তাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Tollywood Deepak Adhikari Nusrat Jahan Mimi Chakraborty

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।