সপরিবার রাজ চক্রবর্তী।
‘রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম’--- রথের দিন এলেই স্কুলে লেখা ভাবসম্প্রসারণের এই অংশটি মনে পড়ে যায়। ছোট থেকেই আমি জগন্নাথদেবের ভক্ত। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাকি ছেলেপুলেরা যে ভাবে বড় হয়েছে আমিও তাই। অন্যদের মতো আমিও ছোটবেলায় রথ টেনেছি। কাঁচরাপাড়ায় আমাদের বাড়ির কাছে রথতলা বলে একটি জায়গা ছিল। বিরাট মাঠ। সেখানে রথযাত্রা উপলক্ষে বিশাল মেলা। প্রায় প্রতি দিন সেখানে যেতাম। পাঁপড়ভাজা, জিলিপি খাওয়া তো ছিলই। আর ছিল ভেঁপু-বাঁশির প্রতি আকর্ষণ। একটায় সাধ মিটত না। বাবাকে বায়না করে একাধিক বাঁশি আদায় করতাম।
ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতেও রথ টানার চল ছিল। ছোটবেলায় বাবা সাজিয়ে দিতেন। একটু বড় হওয়ার পর আমি আর দিদিরা মিলে সাজাতাম। মা পুজো করে দেওয়ার পরে সেই রথ নিয়ে রাস্তায়। প্রতিযোগিতাও হত বন্ধুদের সঙ্গে। কার রথ বেশি সুন্দর সাজানো হয়েছে? কার রথ বেশি জোরে ছোটে?.... এই সব। বড় হয়ে আমার রথযাত্রা আর শহর কলকাতায় সীমাবদ্ধ রইল না! সোজা পৌঁছে গেলাম পুরীতে। আমার এই যাত্রার পিছনে যে মানুষটি তিনি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অরূপদার সঙ্গেই আমার রথযাত্রায় প্রথম পুরীতে পা রাখা।
তার পর থেকে কোনও বছর মিস করিনি পুরীর রথযাত্রা। ওখানে গেলেই মানুষের ঢল। সবাই অন্তত এক বার রথের রশি ছোঁয়ার জন্য ব্যাকুল। প্রতি বছর নিয়ম করে আমার জগন্নাথদেব দর্শন। আর তখনই মনে পড়ে যেত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ভক্তিভাজন’ কবিতার ওই অংশ।
পাশাপাশি, আমাদের বাড়িতেও জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি রয়েছে। জগন্নাথদেবের সমস্ত উৎসব ধুমধাম করে পালিত হয়। ব্যতিক্রম এ বছর। এই প্রথম আমি রথযাত্রায় পুরীতে থাকব না। কারণ, আমার একমাত্র সন্তান ইউভান। এ বছর অতিমারি কম থাকায় আবার লোকের ভিড়। কিন্তু করোনা তো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তাই ঝুঁকিও নিইনি। বদলে শুভশ্রী, ছেলেকে নিয়ে আমি মার্কিন মুলুকে। কয়েকটি দিন আমেরিকায় থাকব। নেটমাধ্যমে দেখেছি, ওখানেও বাঙালি পাড়ায় রথ টানা হয়। ফলে, রথযাত্রা থেকে আমি বাদ পড়ব না। নিশ্চয় পাঁপড়ভাজাও বাদ পড়বে না। আর ওখানে এখন গরম। ফলে, প্রথম রথযাত্রা উৎসবে ইউভান স্বচ্ছন্দে ধুতি বা পাজামা-পাঞ্জাবি পরতে পারবে। সেখান থেকে যাব জামাইকা।
তবে ফিরে এসে পুরীতে যাবই। এ বার একটু দেরিতে জগন্নাথদেব দর্শন হবে। তা হোক। মন থেকে ডাকলে ঈশ্বর সব সময়েই সাড়া দেন। ইউভানের মাথার চুল ঈশ্বরের পায়ে দেওয়ার সংকল্প করা আছে। এই সুযোগে সেটাও পূরণ করে নেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy