Rana Daggubati, the Ballaladeva of Bahubali has been blind in right eye since his birth dgtl
bollywood
আজন্ম দৃষ্টিহীন ডান চোখে, জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে চান মৃত্যুমুখ থেকে ফেরা নববিবাহিত ‘বল্লালদেব’
১৪ বছর বয়সে তাঁর ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু তার পরেও সেই চোখে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়নি। ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে ডাগ্গুবতী জানান, ওই চোখে তিনি শুধু কিছু রং চিহ্নিত করতে পারেন। বাকি কিছুই বুঝতে পারেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ১১:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
জন্ম থেকেই দেখতে পেতেন না ডান চোখে। পরে অস্ত্রোপচারেও স্বাভাবিক হয়নি দৃষ্টিশক্তি। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। ‘বাহুবলী’-র বল্লালদেব হয়ে বিরাজ করেছেন বিনোদন দুনিয়ার আকর্ষণের কেন্দ্রে। রানা ডাগ্গুবতীর জীবন সংগ্রাম হার মানিয়ে দেয় ফিল্মি চিত্রনাট্যকেও।
০২২০
আপাত দৃষ্টিতে ডাগ্গুবতী সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর পরিবারের কয়েক পুরুষ জড়িত সিনেমার সঙ্গে। রানার বাবা ডি সুরেশ বাবু ছিলেন তেলুগু ছবির প্রযোজক। স্বনামধন্য প্রযোজক ডাগ্গুবতী রামানায়ডু ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। ১৩টি ভাষায় ১৫০ ছবি তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সম্মানিত হন ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ এবং ‘পদ্মভূষণ’-এ।
০৩২০
অভিনেতা ভেঙ্কটেশ এবং নাগা চৈতন্যও সম্পর্কে তাঁর আত্মীয় হন। ৫ দশকের বেশি সময় ধরে ছবির সঙ্গে জুড়ে থাকা এ রকম একটি পরিবারে রানা ডাগ্গুবতীর জন্ম হয় ১৯৮৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। জন্ম থেকেই তাঁর ডান চোখে কর্নিয়ায় ত্রুটি ছিল। ফলে তিনি ওই চোখে দেখতে পেতেন না।
০৪২০
১৪ বছর বয়সে তাঁর ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু তার পরেও সেই চোখে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়নি। ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে ডাগ্গুবতী জানান, ওই চোখে তিনি শুধু কিছু রং চিহ্নিত করতে পারেন। বাকি কিছুই বুঝতে পারেন না।
০৫২০
এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও জীবনের কোনও দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চাননি তিনি। চেন্নাইয়ের চেট্টিনাড় বিদ্যাশ্রম এবং হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলের পরে তাঁর পড়াশোনা হায়দরাবাদের সেন্ট মেরিজ কলেজে। পড়াশোনায় তাঁর কোনও দিনই বিশেষ আগ্রহ ছিল না। দশম শ্রেণিতে এক বার অকৃতকার্য হয়েছিলেন। কলেজে বি কম কোর্সে ভর্তি হওয়ার ২ মাস পরে ছেড়ে দেন।
০৬২০
মুম্বইয়ে ব্যারি জনের প্রতিষ্ঠানে অভিনয় শেখার পাশাপাশি আমেরিকার স্টান্ট স্কুল থেকেও প্রশিক্ষণ নেন রানা। ছবির জগতে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১০ সালে। অভিনয় করেন সুপারহিট তেলুগু ছবি ‘লিডার’-এ। পরের বছরই বলিউডে তাঁর আত্মপ্রকাশ ‘দম মারো দম’ ছবিতে।
০৭২০
ডাগ্গুবতী এর পর বলিউড এবং দক্ষিণী ছবি, দু’টি ইন্ডাস্ট্রিতেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন। ‘কৃষ্ণম বন্দে জগদগুরুম’, ‘আড়ম্বম’-এর পাশাপাশি তিনি একটি ক্যামিয়ো ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে।
০৮২০
এখনও অবধি ডাগ্গুবতীর কেরিয়ারে সফলতম ছবি হল এস এস রাজামৌলির ‘বাহুবলী’ এবং ‘বাহুবলী ২’। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাহুবলী’ বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। সেই ছবির সুপারহিট হওয়ার সব রেকর্ড চুরমার করে দিয়েছিল এর দ্বিতীয় অংশ।
০৯২০
২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘বাহুবলী ২’ হল প্রথম ভারতীয় ছবি, যেটি ১০০০ কোটির বেশি ব্যবসা করেছে। জলের নীচে শ্যুটিং হওয়া ছবি ‘দ্য গাজি অ্যাটাক’-এও অভিনয় করেন ডাগ্গুবতী। অভিনয় এবং প্রযুক্তিগত দিক, সব বিষয়েই দর্শকদের নজর কেড়েছিল ছবিটি।
১০২০
ডাগ্গুবতীর কেরিয়ারে বাকি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক’, ‘হাউসফুল ৪’ এবং ‘মারাই থিরন্তু’। অভিনেতা ছাড়াও ডাগ্গুবতীর আর একটি পরিচয়, তিনি প্রযোজক। ২০০৬ সালে তিনি-সহ প্রযোজনা করেন তেলুগু ছবি ‘এ বেলি ফুল অব ড্রিমস’।
১১২০
পরবর্তীতে ছবিটি জাতীয় পুরস্কারজয়ী হয়। এর পরই ছবির প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন তিনি। তবে প্রযোজনার তুলনায় তাঁর বেশি ভাল লেগেছিল ক্যামেরার সামনে নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ই।
১২২০
অবসরে অভিনেতা ডাগ্গুবতীর পছন্দের শখ হল ফোটোগ্রাফি, বক্সিং, ডাইভিং এবং রান্না করা। তিনি নিজেও ভোজনরসিক। অভিনেতার ডায়েট ভেঙে মাঝে মাঝেই খান বিরিয়ানি, সুশি এবং চিকেন আফগানি।
১৩২০
ডাগ্গুবতীর দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা ছিলেন অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণ। সেই প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে চলতি বছরেই তিনি বিয়ে করেছেন মিহিকা বজাজকে। মিহিকা পেশায় ইন্টিরিয়র ডেকরেটর। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের ছবি পোস্ট করার পরে অনুরাগীদের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান ডাগ্গুবতী।
১৪২০
কিন্তু সুরের মাঝেই ছন্দে পতন। গত বছরই প্রকাশ্যে আসে ডাগ্গুবতীর একটি ছবি। ‘বল্লালদেব’-এর রুগ্ন চেহারা দেখে চমকে যান অনুরাগীরা। তখনই তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
১৫২০
বিয়ের সময়েও ডাগ্গুবতীর চেহারার বিশেষ উন্নতি হয়নি। গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। তবে সে সময় সব রটনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন ডাগ্গুবতী নিজেই।
১৬২০
কিন্তু কী হয়েছিল ডাগ্গুবতীর? জল্পনার অবসান করেছেন ডাগ্গুবতী নিজেই। সম্প্রতি তিনি গিয়েছিলেন সামান্থা রুথ প্রভুর টক শো ‘স্যাম জ্যাম’-এ। সেখানেই প্রথম বার নিজের শারীরিক অসু্স্থতা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
১৭২০
ডাগ্গুবতী জানান, তাঁর কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। ক্যালসিফিকেশনের জেরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল হৃদযন্ত্র। এ ছাড়াও ছিল উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা।
১৮২০
সামান্থার শো-এ ডাগ্গুবতী বলেন, শারীরিক জটিলতা এত গভীর হয়েছিল, যে স্ট্রোক এবং রক্তক্ষরণের আশঙ্কা ছিল ৭০ শতাংশ অবধি। মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এ কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন পর্দার জবরদস্ত খলনায়ক বল্লালদেব। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সামান্থা নিজেও।
১৯২০
‘স্যাম জ্যাম’-এর নির্দিষ্ট পর্বের অংশ এখন ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তবে অনুরাগীরা আশাবাদী, সিনেমার বীরবিক্রমের মতো বাস্তবেও সব জটিলতা কাটিয়ে উঠবেন রানা ডাগ্গুবতী।
২০২০
আগে এক বার নিজের একচোখে দৃষ্টিহীনতা নিয়ে ডাগ্গুবতী বলেছিলেন, ঈশ্বর আসলে শক্তিধর মানুষের পরীক্ষা নেন। তাঁদেরই তিনি এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। দেখেন, তাঁরা কী ভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন। পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর ভক্তদের আশা, জীবনের এই পরীক্ষাতেও সফল হবেন ‘বল্লালদেব’।