রাহুল অরুণোদয় বন্দোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: পর্দায় আপনি ফাঁসির আসামি। মৃত্যুর আগের ১২ ঘণ্টার সাক্ষী। চরিত্র শুনে কেমন লেগেছিল?
রাহুল: ‘মৃত্যুপথযাত্রী’র গল্প শুনে প্রথমে নাড়া খেয়েছিলাম। তার পরে প্রচণ্ড উত্তেজিত। একটা ছবির গোটাটা জুড়ে শুধু আমিই! এটা তো খুব কম অভিনেতার ভাগ্যে জোটে। আমার কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বলতে পারেন শক্ত পরীক্ষা দিয়ে উঠলাম।
প্রশ্ন: ফাঁসির আসামির শেষ ১২ ঘণ্টা নিয়ে কোনও দিন কৌতূহল জেগেছিল?
রাহুল: আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু প্রায় পণ্য হয়ে উঠেছিল। আজ ধনঞ্জয় পোস্তর বড়া দিয়ে ভাত খেলেন। কাল ধনঞ্জয় কিশোর কুমারের গান গাইলেন। আমরা চাই বা না চাই সংবাদমাধ্যম কৌতূহল তৈরি করে দিয়েছিল। সেই সময়ে আমার মনেও আগ্রহ জন্মেছিল। রোজ ধনঞ্জয়ের খবর পত্রিকায় পড়ছি। আর ভাবছি, আসামির মনের কী অবস্থা? এর বাইরে রোজের জীবনে তো আমরা কোনও ফাঁসির আসামিকে নিয়ে আলাদা করে ভাবি না।
প্রশ্ন: ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগের প্রস্তুতি কেমন ছিল?
রাহুল: আমি যেন করোনাকালে ফিরে গিয়েছিলাম। টানা ১৫ দিন বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, ফাঁসির আসামিরা মৃত্যুর আগে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় না। একা থাকে। সারা ক্ষণ দরজা বন্ধ করে থাকতাম। বন্ধ দরজার বাইরে খাবার রাখা থাকত। দু’মাস চুল, দাড়ি-গোঁফ কিচ্ছু কাটিনি। প্রচুর পড়াশোনা করেছি। পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্ত অনেক তথ্য জোগাড় করে দিয়েছিলেন। আর কিছু সংশোধনাগারে যোগাযোগ করেও কথা বলেছি।
প্রশ্ন: অভিনয় করতে করতে টের পেলেন, শেষের আগের ১২ ঘণ্টা কতটা ভয়াবহ?
রাহুল: অবসাদে ডুবে গিয়েছিলাম। পুরো ছবির শ্যুট শেষের পরে মনোবিদের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। সারাদিন মৃত্যুর সঙ্গে সহবাস। প্রতি দিন একই বিষয় নিয়ে শ্যুট। আমায় সেই অনুভূতি বহন করতে হয়েছে। বাড়ি ফিরে যে হালকা ধরনের কোনও ছবি দেখে নেব, সেই উপায়ও ছিল না। মারাত্মক চাপ পড়েছিল মনের উপরে।
প্রশ্ন: একুশ শতকে ফাঁসি যুক্তিযুক্ত?
রাহুল: মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আমার মতামত অনেকটা শাঁখের করাতের মতো। জানি না কোন দিকে যাব। এক দিকে মনে হয় সভ্য দেশে এই শাস্তি থাকা উচিত নয়। পর ক্ষণেই মনে হয়, যে দেশে এত ধর্ষণ হয়, সে দেশ কি আদৌ সভ্য? একটা করে ধর্ষণের ঘটনা সামনে এলেই মনে হয় এদের আর বাঁচিয়ে রেখে কোনও লাভ নেই। তা ছাড়া, এই ছবিতে কে, কতটা অপরাধ করেছে বা মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত কি না, তার বিশ্লেষণ দেখানো হয়নি। সিদ্ধান্ত দর্শক নেবেন।
প্রশ্ন: পর্দায় দর্শক আপনার শেষ ১২ ঘণ্টায় কী কী করতে দেখবেন?
রাহুল: সমস্ত অনুভূতি নিংড়ে দিতে দেখবেন। ফাঁসির আসামির মতোই কখনও হেসেছি। কখনও রেগেছি। কখনও হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছি। আবার সেই আমিই অনুতপ্ত। বারংবার ‘সরি’ বলেছি। আর সারা ক্ষণ মৃত্যুভয়ে কেঁপেছি।
প্রশ্ন: চরিত্রের মাধ্যমে জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কী বুঝলেন?
রাহুল: মৃত্যু শাশ্বত। একে রোখার সাধ্য কারও নেই। জন্মালে মরতে হবেই। যে ভাবেই হোক। আর জীবন একটা যাত্রা। কোনও কিছু অর্জন এর প্রধান লক্ষ্য নয়। বরং না থেমে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।
প্রশ্ন: তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে পরপর চার মডেল-অভিনেত্রীর আত্মহননকে কী বলবেন?
রাহুল: অসময়ে মৃত্যু কখনওই কাম্য নয়। তার উপরে পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগী এবং সরস্বতী দাস বয়সেও খুবই ছোট। ফলে, প্রত্যেকটা মৃত্যুসংবাদ আঘাত করেছে। এই ঘটনা ঘটা উচিত ছিল না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy