রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
এখন তাঁর তুমুল ব্যস্ততা। কখনও কলকাতা, কখনও আবার দিল্লি। কোনও সময় থাকতে হচ্ছে হুগলিতে। তিন জায়গায় হাজিরা দিতে গিয়ে কমছে বাড়ির জন্য বরাদ্দ সময়। সেই ঘাটতি অনেকটাই সামলে দিচ্ছেন অভিনেত্রীর স্বামী। সামনেই ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। মা ভাবছেন, যেন নিজেরই পরীক্ষা। উদ্বেগে দিন কাটছে। কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনের কাছাকাছি রয়েছে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর মঞ্চ। নবম সিজ়নের ১০০০ পর্বে পা দিল এই অনুষ্ঠান। রাজারহাটের স্টুডিয়োতে একের পর এক পর্বের শুটিং। এক ফোঁটা ক্লান্তি নেই, তার ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডা দিলেন হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ঘড়ির কাঁটা তো ৪টের ঘর ছুঁয়েছে। সেটে এলাহি আয়োজন। কিন্তু আপনি এখনও খাননি?
রচনা: (একগাল হাসি) অন্য দিন দুপুর ২টোর মধ্যে খেয়ে নিই। আজকে একটু দেরি হল। কিন্তু অসুবিধা নেই। আজকে তোমরা সকলে এসেছ এখানে, এত আয়োজন। রোজ ঘড়ি ধরে সব করতেই হবে, এমন কথা নেই।
প্রশ্ন: এত ব্যস্ততা, সব দিক সামলে কেমন আছেন?
রচনা: (আবার হেসে) সব দিক সামাল দেওয়াটা আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে এখন। সংসার সামলাচ্ছি, দিদি নম্বর ওয়ান, ছেলেকে সামলাতে হচ্ছে। চোখের পলকে সময় কেটে যাচ্ছে যেন।
প্রশ্ন: ১৩ বছর ধরে একটানা একটা শো করা, কী ভাবে সম্ভব হল?
রচনা: এখন নবম সিজ়নের ১০০০ পর্ব উদ্যাপন হচ্ছে। কিন্তু আমি ৫০০০-এর বেশি পর্ব করে ফেলেছি এই শো-এ। আমার কাছে এটা বিরাট সাফল্য। এই শোয়ের ভিত আমার দিদিরা। তাঁদের ভালবাসা জি বাংলার কৃতিত্ব।
প্রশ্ন: ১৩ বছর কম সময় নয়, এই শো কী পরিবর্তন এনেছে মানুষ রচনার মধ্যে?
রচনা: যে সময় কর্তৃপক্ষ আমার উপর ভরসা করছিলেন, সেই সময় আমিও নিজেকে ভরসা করতে পারিনি। ওঁরাই বলেছিলেন, ‘রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা করতে পারবেন।’ তখন আমি ভরসা পেলাম। মনে হল, নাহ্, সত্যিই এই শো একটা ইতিবাচক কিছু করতে চলেছে। সেই বিশ্বাসে ভর করেই দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: এত দিন ধরে একটানা একটা শো করছেন, একঘেয়ে লাগে না?
রচনা: এটা কিন্তু সংলাপ মুখস্থ করে অভিনয় করে যাওয়া নয়। তাই একঘেয়ে লাগে না। প্রতিটি দিন ১২জন করে দিদির সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের জীবনের গল্প শুনি। তখন মোটেও একঘেয়ে লাগে না। বরং প্রতি দিন নতুন নতুন কিছু শিখি।
প্রশ্ন: বড় পর্দার মেগা তারকা, ছোট পর্দাতেও ব্লকবাস্টার— এটা মানেন তো?
রচনা: (হা হা) আমার শো হিট, সেটা মানছি। আমার ভাগ্য ও আমার জীবনীশক্তি আমাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। যদিও মানুষের ভালবাসা ছাড়া কিছুই সম্ভব হত না।
প্রশ্ন: বড় পর্দাকে মিস্ করেন না?
রচনা: অবশ্যই করি, অভিনেত্রী হয়েই তো জীবন শুরু করেছিলাম। বাকি সব কিছু তো পরে এসেছে। কিন্তু অভাব বোধটা থাকলেও আর কিছু করার নেই। এখন আর আমার সময় নেই।
প্রশ্ন: এখন তো অনেক ধরনের গল্প নিয়ে ছবি হচ্ছে, আপনার কাছে এ রকম চিত্রনাট্য আসে না, না কি চাইছেন না কাজ করতে?
রচনা: না, কোনও চিত্রনাট্যই আসে না। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি বড় পর্দায় অভিনয় করব না। সকলেই জেনে গিয়েছেন, রচনা কাজ করছে না। তাই চিত্রনাট্য নিয়ে কেউ আসেন না। ভবিষ্যতে আবার ছবি করব কি না জানি না! কিন্তু এখন ভীষণ ব্যস্ত। ছবি করার মতো সময় নেই। আগামী দিনে ফাঁকা সময় পেলে ভেবে দেখতে পারি।
প্রশ্ন: প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি নিয়ে কাজ হচ্ছে, একটা সময় রচনা-বুম্বা জুটিও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল, এই জুটির কথা কি ভুলে গেলেন সকলে?
রচনা: আসলে বুম্বাদা নিজেই তো খুব কম কাজ করেন এখন। আমিও কাজ করছি না। তবে ভবিষ্যতে যে তেমন হবে না, এমন কথা বলছি না। কখন কী হবে কে বলতে পারে!
প্রশ্ন: আগামী বছর কি কোনও খবর পাব এই সংক্রান্ত?
রচনা: আমার ইচ্ছে আছে এক-আধটা ছবি করার। ২০২৫-এ ভেবে দেখতে পারি।
প্রশ্ন: সাংসদ হওয়ার পর নিন্দকেরা বলছেন আপনার শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর টিআরপি পড়ছে?
রচনা: আসলে লোকে অনেক কথা বলে। নিন্দকেরা অনেক কথাই বলেন। ভালমন্দ দুই নিয়েই তো চলতে হয়। কারও মুখ বন্ধ করা আমার কাজ নয়। আমার উপর আজকাল এ সব কিছু আর প্রভাব ফেলে না। আর ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর কী হতে চলেছে সেটা দর্শক দেখতেই পাচ্ছেন ও ভবিষ্যতেও পাবেন।
প্রশ্ন: ট্রোলিং আপনার উপর প্রভাব ফেলে না বললেন, ছেলে তো এই প্রজন্মের। সারা ক্ষণ নিশ্চয়ই সমাজমাধ্যমে আপনাকে দেখছে। ওঁর কী প্রতিক্রিয়া?
রচনা: আসলে আমার ছেলে একেবারে আমার মতো। ও খেলার জগৎ নিয়ে থাকতে ভালবাসে। ট্রোলিং, মিম, এ সব দেখে না। ছেলে জানে ওর মা সাংসদ, অভিনেত্রী। তাঁকে নিয়ে লোকে অনেক কথা বলবে। এ সব বিষয়ে মাথা ঘামায় না। আমার কাছে এটা ভীষণ ইতিবাচক দিক যে ছেলে এই বয়স থেকেই এ ভাবে ভাবতে শিখে গিয়েছে।
প্রশ্ন: সামনেই ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক তো?
রচনা: হ্যাঁ, সেই জন্য উদ্বেগে রয়েছি। সারা ক্ষণ চিন্তা। এই সময়টাতে আসলে মায়েদের পরীক্ষা হয়ে যায়। তাই যতটা পারছি ওর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। দিল্লি যাওয়া কমিয়েছি। যত ক্ষণ না পর্যন্ত ছেলের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে দিল্লি যেতে পারব না। কিছু তো আত্মত্যাগ করতেই হয় মায়েদের।
প্রশ্ন: রাজনীতি ব্যক্তি রচনার জীবনে নেতিবাচক না কি ইতিবাচক?
রচনা: আমার জীবনে এখনও পর্যন্ত ভীষণ রকম ইতিবাচক। চার-পাঁচ মাস হল রাজনীতিতে এসেছি। আগামী দিনগুলোও যেন সুন্দর হয় সেই চেষ্টাই করব। আর সমাজমাধ্যমে কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। যাঁরা আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন আমি যাতে তাঁদের সেই ভরসার মান রাখতে পারি।
প্রশ্ন: সাংসদ হওয়ার পর আপনার স্বামী খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন, তা হলে কি ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটেছে?
রচনা: হ্যাঁ, প্রবাল নিজের কাজ দেখছে, তেমনই আমার ব্যবসার কাজও পুরোটাই সামলাচ্ছে। এ ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন: রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এত কাঁদেন কেন?
রচনা: আমি খুব আবেগতাড়িত একটা মানুষ। মানুষের দুঃখের কথা শুনলে চোখে জল চলে আসে। আমি মানুষটাই নরম প্রকৃতির। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর মঞ্চে আমি কেঁদে ফেলি মানুষের কথা শুনে।
প্রশ্ন: আরজি কর-কাণ্ডের পর আপনার করা লাইভ ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছে। চোখের জল থেকে চোখের কাজল সব কিছু নিয়ে কটূক্তি হয়েছে। সহ্য করতে পেরেছেন?
রচনা: আমি আসলে মানুষটাই এ রকম। নির্যাতিতাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এসেছিল। সেখানে কোনও অভিনয় ছিল না। কিন্তু লোকে যা বলার বলবেই। আমি গায়ে মাখি না। আমি আবেগতাড়িত মানুষ বলেই লোকে ট্রোল করে। আমাকে নিয়ে আলোচনা করলে কর। আমার কিছু যায়-আসে না। কারণ আমাকে কষ্ট দেওয়া অত সোজা নয়। আসলে সে দিন আমার যেটা মনে হয়েছিল, সেটাই করেছিলাম। মনে হয়েছিল লাইভে এসে নিহত চিকিৎসককে নিয়ে ক’টা কথা বলব। তাই করেছিলাম। যা করেছি খুব সহজাত ভাবে করেছি, কোনও ভান-ভণিতা করিনি।
প্রশ্ন: তার ঠিক পরেই দুর্গাপুজোর কার্নিভাল, সেখানে ডান্ডিয়া নাচ নিয়ে নানা কথা হয়েছে। সে সব জানেন?
রচনা: আসলে আমি রাজনীতিতে এসেছি বলেই এটা হচ্ছে। না এলে এত সমালোচনা হত না। কিন্তু সর্বত্রই যে ফুলের পাপড়ি বিছানো রাস্তা পাওয়া যাবে, তেমনটা নয়। যখন হাতে গোলাপ নেব, তার সঙ্গে কাঁটাও থাকবে।
প্রশ্ন: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পদবি ছাড়া নিজের আর কোনও মিল খুঁজে পেয়েছেন?
রচনা (হেসে) আসলে আমি দিদির সঙ্গে কোনও মিল খোঁজার চেষ্টা করি না। তাঁর কথায় আমি এই জায়গায় এসেছি। দিদি ভরসা রেখেছেন আমার উপর। আমি যেন মর্যাদা রাখতে পারি।
প্রশ্ন: আচ্ছা অভিনেত্রী মানেই তাঁকে সুন্দর দেখতে হবে এ রকম ধারণা রয়েছে। আবার সুন্দর দেখানোর জন্য কেউ বোটক্স ফিলার করলেও রেহাই পান না সমালোচনা থেকে। কী মত আপনার?
রচনা: হ্যাঁ অভিনেত্রীদের তো সুন্দর থাকতে হবে, এমন সকলে ধরেই নেন। উনিশ থেকে বিশ হলেই কড়া সমালোচনা। কেউ যদি বোটক্স, ফিলার করান, করাতেই পারেন। সেটা তাঁর অধিকার। এই ধরনের কথাবার্তা একদম পছন্দ করি না। যাঁরা এমন সমালোচনা করেন তাঁদের নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।
প্রশ্ন: আপনার কি কখনও ভয় হয় বার্ধক্যের?
রচনা: না, আমি মনে করি নিজের বয়সটা উপভোগ করা উচিত। বার্ধক্য না এলে অমিতাভ বচ্চন বুড়ো হতেন না হেমা মালিনীও বুড়ি হতেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy