দাদুর সঙ্গে পরীমণি
প্রিয় নাতনিকে এক বার চোখের দেখা দেখতে চান। আদালত প্রাঙ্গণে হাজির বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরীমণির শতবর্ষী নানা অর্থাৎ দাদু শামসুল হক গাজী। তাঁকে ঘিরে সাংবাদিকদের ভিড়। আবেগে কথা আটকে যাচ্ছে বৃদ্ধের। ক্ষীণ স্বরে বললেন, “আমি ছাড়া ওর কেউ নাই।”
বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরীমণি মাদক আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। চার দিন রিমান্ডে রাখার পর তাঁকে আদালতে আনা হয়। চিন্তিত দাদু আদালত চত্বরে অপেক্ষা করলেও নাতনির সঙ্গে কোনও কথাই বলতে পারেননি।
খুব ছোটবেলায় পরীমণি মাকে হারান। আরেকটু বড় হয়েই হারান বাবাকে। ফলে পিরোজপুরে দাদু শামসুল হক গাজীর কাছে বড় হন তিনি। পরীমণি মে মাসে ইনস্টাগ্রামে হাসপাতালে চিকিৎসারত দাদুর ছবি পোস্ট করেন। ৮ মে দাদুর লজেন্স খাওয়ার ছবি দিয়ে লিখেছেন, “দেখেন কেমন বাচ্চাদের মতন। ১০০ ঊর্ধ্ব বয়স তার। দু’দিন আগে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন হয়েছে। চারদিন তার মুখে খাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন ডাক্তার। আজ তার জন্য ডাক্তার নিজেই এই উপহার নিয়ে আসেন। নানু তো মহা খুশি।” এই পোস্ট চিরন্তন মিষ্টি সম্পর্কের খোঁজ দেয়।
নাতনির সঙ্গে কথা বলতে না পেরে হতাশ শামসুল হক গাজী সাংবাদিকদের বলেন, “সে নিজের সারাটা জীবন মানুষকে দান করেছে। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতির শিকার। নিজের একটা ফ্ল্যাট করে নাই... কিছু করে নাই। এফডিসি-তে প্রত্যেক বছর ইদে পশু কোরবানি করে গরিব-দুঃখীদের জন্য। নিজের জন্য সে নিজে কিছুই করে নেই।”
২০১৬ থেকে পরীমণি এফডিসি-র (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন) সঙ্গে যুক্ত অস্বচ্ছল মানুষদের খাদ্য দান করে থাকেন। এ বছর করোনার কারণে মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি আর্থিক অনটনে ভুগেছেন। তাই পরীমণি আগের তুলনায় এ বার আরও বেশি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। লকডাউনের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি নিজে এলেন কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে পরীমণি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এটাই তো ইদের খুশি। এই মানুষজনেরা আমার পরিবারের মানুষ। এফডিসি আমার দ্বিতীয় পরিবার। তাঁরা চাইছিলেন আমি নিজের হাতে বিতরণ করি, তাই সবার খুশির জন্য, নিজের খুশির জন্য আমি এসেছি।”
গত জুন মাসে পরীমণি কয়েকজন প্রভাবশালী মানুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন। তার পর থেকেই তাঁর জীবন যাপন এবং বিত্ত নিয়ে কটূক্তি শুরু হয়। ৩০ জুন পরীমণি ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমার মাত্র একটি হ্যারিয়ার গাড়ি। যেটি ব্যাংক লোনে চলছে। এবং আমি একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকি। আমি আমার আয়ের হিসেব সরকারের কাছে অবশ্যই প্রদান করি। আমি নিয়মিত কর দিই। আমার কোনও ১০ কোটি টাকার বাড়ি বা ৫/৪/৩ কোটি (যেমনটা আপনারা বানালেন আর কী) টাকার গাড়িও নেই। মিথ্যা বা গুজব ছড়ানোর জন্য আপনারা কতটুকু জয়ী হলেন ভেবে দেখবেন প্লিজ।’
পরীমণির মানবিকতা ও সাহসী লড়াইয়ের জন্য সেদিন অনেকেই ছিলেন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু এক মাস পরেই চিত্রটা পালটে গিয়েছে। মাদক আইনে পরীমণি গ্রেপ্তার হয়েছেন। অজস্র মানুষ কুৎসিত মন্তব্য করে চলেছেন তাঁর সম্পর্কে। ব্যতিক্রমী কয়েক জন ছাড়া শিল্পী-বুদ্ধিজীবী মহল পরীমণির বিষয়ে নীরব।
কী হবে পরীমণির? বৃদ্ধ শামসুল হক আকাশের দিকে মুখ তুলে প্রার্থনার ভঙ্গিতে বললেন, “ন্যায্য বিচার হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy